ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ইন্টারনেট যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন দেড় ঘণ্টা

প্রকাশিত: ০৫:১১, ১৯ নভেম্বর ২০১৫

ইন্টারনেট যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন দেড় ঘণ্টা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রায় দেড় ঘণ্টা ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব অর্থাৎ ইন্টারনেট ব্যবহার করা থেকে বিচ্ছিন্ন থাকল বাংলাদেশ। বুধবার বেলা সোয়া ১টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে কেউ কোন ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে পারেননি। পরে ইন্টারনেট সংযোগ ফিরতে শুরু করলেও সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সামাজিক যোগাযোগের কিছু ওয়েবসাইট ও এ্যাপ ব্যবহারের সুযোগ বন্ধ ছিল। দেশের ইতিহাসে ইন্টারনেট বন্ধের ঘটনা এই প্রথম। এর আগে বাংলাদেশে ইন্টারনেট সংযোগ কখনও বন্ধ রাখা হয়নি। বিগত সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭ সালে কার্ফুর মধ্যে মোবাইল ফোন সেবা সাময়িক বন্ধ থাকলেও ইন্টারনেট চালু ছিল। এরপর একবার বিটিআরসি ইন্টারনেটের আপলোড গতি কমানোর নির্দেশ দিলেও ইন্টারনেট তখনও পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। অবশ্য ছয়টি ইন্টারন্যাশনাল টেরিস্ট্রেরিয়াল কেবল (সাবমেরিন কেবলের বিকল্প) সংযোগের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আগে একমাত্র সাবমেরিন কেবলে সমস্যা হলে বাংলাদেশের ব্যবহারকারীরা ইন্টারনেটে যুক্ত হতে পারতেন না। কিছুদিন আগে থেকেই ইন্টারনেটে যে কোন সময় কড়াকড়ির ইঙ্গিত দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চলতি বছরের শুরুতে বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোটের হরতাল-অবরোধের সময়ও ‘ভাইবার’ ও ‘হোয়াটসএ্যাপ’সহ ইন্টারনেটে যোগাযোগের কয়েকটি মাল্টিমিডিয়া এ্যাপ কয়েকদিনের জন্য বন্ধ রাখা হয়। তখন পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, নাশকতাকারীরা মোবাইল ফোনে কথা না বলে ইন্টারনেটভিত্তিক এসব এ্যাপ ব্যবহার করায় তাদের ধরতে সমস্যা হচ্ছে। সম্প্রতি দুই বিদেশী নাগরিক হত্যা ও পুলিশের তল্লাশি চৌকিতে হামলার ঘটনার পর গত ৮ নবেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন এ্যাপ ব্যবহার করে জঙ্গীরা কার্যক্রম চালাচ্ছে। এ সময় জঙ্গীদের যোগাযোগ ও অর্থায়ন বন্ধে তাদের শনাক্ত করতে কিছু ‘এ্যাপ’ বন্ধ করাসহ ইন্টারনেটের ওপর ‘সাময়িক কড়াকড়ি’ আরোপের ইঙ্গিত দেন। পরে এক অনুষ্ঠানে আবারও তিনি একই কথা বলেন। সকালে ব্লগার নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নিলয় হত্যাকা-ে জড়িত সন্দেহে তিনজনকে গ্রেফতারের খবর জানায় পুলিশ। এর মধ্যে নিলয়কে ফেসবুকে হুমকি দেয়ার ঘটনায় একজন এবং হত্যাকা-ের পর ইন্টারনেটে দায় স্বীকারকারী সন্দেহে দুজনকে গ্রেফতার করার কথা বলা হয় পুলিশের পক্ষ থেকে। এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার মনিরুল ইসলাম এক সংবাদ সম্মেলনের পর সাংবাদিকদের বলেন, ফেসবুক, ভাইবার, হোয়াটসএ্যাপ দিয়ে অনেকেই নাশকতা চালিয়ে থাকে। এজন্য সরকার এগুলো বন্ধ করে দিতে পারে। তার আগেই বেলা ১১টার দিকে বিটিআরসির কাছ থেকে ফেসবুক ও তিনটি ম্যাসেঞ্জার এ্যাপ বন্ধ করার বিষয়ে নির্দেশ প্রদান করা হয় বলে জানা গেছে। মোবাইল ফোন সেবাদানকারী একটি প্রতিষ্ঠানের আরেক কর্মকর্তা জানান, ইন্টারনেট সেবা দেয় এমন সব প্রতিষ্ঠানকেই পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত ফেসুবক, ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার, ভাইবার ও হোয়াটসএ্যাপ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। এরপর বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে ফেসবুক ও ভাইবার ব্যবহারে সমস্যা হওয়ার অভিযোগ আসতে থাকে। সোয়া ১টার দিকে বন্ধ হয়ে যায় ইন্টারনেটে সব যোগাযোগ। এরপর বেলা আড়াইটার আগে ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে এবং অপারেটরগুলো বিটিআরসির কাছ থেকে সেবা চালু করার সবুজ সঙ্কেত পায়। আড়াইটার পর ব্যবহারকারীরাও আবার ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবে যুক্ত হতে পারেন। এ বিষয়ে বিটিআরসি চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ বলেন, ফেসবুক, ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার, ভাইবার ও হোয়াটসএ্যাপ বন্ধ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে ইন্টারনেট বন্ধের কোন নির্দেশ ছিল না। ওই চারটি লিংক বন্ধ করার প্রক্রিয়া হিসেবে ইন্টারনেট বন্ধ হতে পারে। টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, ওই চার লিংক বন্ধ রাখার পাশাপাশি টুইটার, ট্যাংগো, ইমুসহ সামাজিক যোগাযোগের অন্যান্য এ্যাপেও নজরদারি চালানো হচ্ছে। ‘বৃহত্তর স্বার্থে’ এই কষ্ট মেনে নেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, ‘দেশ ও জাতির নিরাপত্তার স্বার্থেই এগুলো বন্ধ করা হয়েছে।
×