ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জামায়াত আজ হরতাল ডেকেছে

প্রকাশিত: ০৫:১২, ১৯ নভেম্বর ২০১৫

জামায়াত আজ হরতাল ডেকেছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দলের সেক্রেটারি জেনারেল যুদ্ধাপরাধী আলী আহসান মুজাহিদের মৃত্যুদ-ের রায় বহাল রাখার প্রতিবাদে আজ সারাদেশে হরতাল ডেকেছে জামায়াত। মুজাহিদের ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন বুধবার সর্বোচ্চ আদালতে খারিজ হওয়ার পরপরই হরতালের ডাক দিয়েছে বিএনপির রাজনৈতিক এ মিত্র। এদিকে জামায়াত তার নেতার রায়ে প্রতিক্রিয়া দেখালেও দলের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরামের সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃত্যুদ- কার্যকর নিশ্চিত হয়ে গেলেও পুরোপুরি নীরব বিএনপি। রাতে রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিএনপির পক্ষ থেকে বিবৃতি এমনকি কোন নেতা এ নিয়ে গণমাধ্যমে কথাও বলতে রাজি হননি। জামায়াতের আজকের হরতালে নাশকতা দমনে সকাল ছয়টা থেকে রাজধানীতে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। উচ্চ আদালতে রায় ঘোষণার পরপরই জামায়াত তার দলের সেক্রেটারি জেনারেলের বিষয়ে গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়ে হরতালের কথা জানায়। এদিকে দলের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরামের সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃত্যুদ- কার্যকর নিশ্চিত হয়ে গেলেও কোন প্রতিক্রিয়া আসেনি বিএনপির কাছ থেকে। জামায়াত তার নেতার জন্য হরতাল ডাকলেও রাত পর্যন্ত বিএনপির কোন বিবৃতি আসেনি তাদের নেতার জন্য। গণমাধ্যমে কোন প্রতিক্রিয়া জানাতেও চাননি দলটির নেতারা। বিএনপির মুখপাত্রের দায়িত্বে থাকা আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপনের কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আইনজীবীরা কথা বলছেন। দলের তরফ থেকে এখনও আমি কোন বার্তা পাইনি। পেলে যথাসময়ে জানাব। সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদের অন্যতম সদস্য। সালাউদ্দিন কাদেরের রায়ের পর তার প্রধান এ আইনজীবী বলেন, আমরা আইনের লড়াই করেছি। আমরা হেরে গেছি। ব্যাস। এইটুকুই প্রতিক্রিয়া। এ বিষয়ে বিএনপির অন্য কোন নেতা কথাই বলতে রাজি হননি। রিভিউ আবেদনের রায়ের দিন বুধবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের পাহারা ছিল, ছিল সাঁজোয়া যান ও জলকামানের গাড়িও। সকাল সাড়ে ১০টায় কার্যালয়ে একটি সংবাদ সম্মেলন হয় তারেক রহমানের জন্মদিনের কর্মসূচী ঘোষণার লক্ষ্যে। সেখানে নেতাকর্মীদের উপস্থিতিও ছিল কম। আসাদুজ্জামান রিপনের সঙ্গে এ সময় ছিলেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আকবর খন্দকার। চট্টগ্রামে বিএনপির রাজনীতিতে সালাউদ্দিন কাদের বিরোধী শিবিরের নেতা হিসেবে পরিচিত এ আকবর। দলের সহদফতর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনি, শামীমুর রহমান শামীম, আসাদুল করীম শাহীন, নির্বাহী কমিটির সদস্য রফিক শিকদার, হেলেন জেরিন খান, শাম্মী আখতার ছিলেন সংবাদ সম্মেলনে। এছাড়া হাতেগোনা কয়েকজনসহ অফিসকর্মীরা ছিলেন বিএনপির কার্যালয়ে। অন্যান্য সময়ে সংবাদ সম্মেলনে অনেক নেতাকর্মীর উপস্থিতি দেখা যায়। এদিকে কর্মসূচী দেয়নি, বরং বুধবার দুপুরে গণমাধ্যমে জামায়াতের হরতালের খবর প্রচারের আগেই আজকের পূর্বঘোষিত কর্মসূচী প্রত্যাহার করেছে বিএনপি। প্রায় একই সময়ে হরতাল ও কর্মসূচী বাতিলের বিবৃতি গণমাধ্যমে এসে পৌঁছায়। দুপুর দুইটায় রমনাস্থ ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ মিলনায়তনে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৫১তম জন্মদিন উপলক্ষে ‘গণতন্ত্র উন্নয়নের পূর্বশর্ত’ শীর্ষক আলোচনা সভা বাতিল করে বিএনপি। দুপুর ১২টা ৩৯ মিনিটে জামায়াত মেইলে তাদের হরতালের খবর জানায়। ১২টা ৪০ মিনিটে বিএনপি তাদের কর্মসূচী বাতিলের খবর জানিয়ে মেইল করে। বিএনপির সহদফতর সম্পাদক জানান, শামীমুর রহমান শামীম বলেন, আলোচনা সভা বাতিল হয়েছে। পরে সময় জানানো হবে। তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন নেতা ও চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এটা খুব দুঃখজনক। একেবারে কর্মসূচী বাতিল করায় মানুষের কাছে নিজেদের অবস্থান আরও খারাপভাবে প্রকাশ পাবে। হরতালে বাস-মিনিবাস চালানোর ঘোষণা ॥ আজ দেশব্যাপী জামায়াতের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতালে ঢাকাসহ আশপাশের জেলাগুলোতে বাস ও মিনিবাস চালানোর ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। বুধবার যুদ্ধাপরাধী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগে খারিজ হওয়ার প্রতিবাদে তাৎক্ষণিকভাবে জামায়াত এ হরতালের ডাক দেয়। পুলিশ ঠেকাতে শিবিরের গুলতি প্রশিক্ষণ ॥ স্টাফ রিপোর্টার চট্টগ্রাম অফিস থেকে জানান, পুলিশকে দূর থেকে প্রতিহত করতে এবার চট্টগ্রামের শিবির ক্যাডাররা গুলতির ব্যবহার শুরু করছে। শিবিরের নতুন ডায়ালগ ‘বসে থাকব চারতলায় মারব নিচতলায়, ধরবে কোন বাপের বেটায়’। হরতালে এই গুলতির ব্যবহার হবে সবচেয়ে বেশি। দূর থেকে পুলিশের মাথায় আঘাত হানতে শিবির ক্যাডাররা এবার প্রশিক্ষণও নিয়েছে। নতুন এই কৌশলকে তারা কার্যকর ও পুলিশের আইনের ধারার বাইরে বলে মনে করে। কারণ গুলতি কোন অস্ত্র নয়। এ ধরনের আঘাতকারীরা থাকবে আড়ালে আবডালে আর পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে। গত ১৭ নবেম্বর রাতে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ। পরে তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী চকবাজারের চন্দনপুরার মহানগর জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের কার্যালয় থেকে এসব উদ্ধার করা হয়। মঙ্গলবার রাতে গ্রেফতার হওয়া জামায়াত শিবিরের এই ৬ নেতাকর্মী নাশকতা সৃষ্টির পরিকল্পনার বিষয়টি স্বীকার করেছে। হরতাল ডেকে সন্ত্রাসী কার্মকা- চালানোর উদ্দেশ্যে তারা দেশীয় অস্ত্র ও গুলতির ব্যবহার করবে বলে পুলিশী জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা আরও জানিয়েছে, পুলিশের অভিযানে শতাধিক গুলতি উদ্ধার হয়েছে। এসব গুলতির প্রশিক্ষণ চলে শিবিরের ব্যক্তিগত আবাসস্থল বা মেসে। এমনকি নগরীতে বিদ্যমান শিবিরের অভয়ারণ্য হিসেবে খ্যাত চট্টগ্রামের মহসিন কলেজ ও চট্টগ্রাম কলেজের আবাসিক হোস্টেলে। এমনকি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও বায়েজিদ বোস্তামী থানার পাহাড়িয়া এলাকায় পাখি শিকারের নামে চলছে গুলতির প্রশিক্ষণ। সুনির্দিষ্ট বস্তুকে লক্ষ্য করে শ্যূটারদের মতো নিজেরাও মার্বেল ও ছোট পাথর ব্যবহার করা হচ্ছে এ গুলতিতে।
×