ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জনতার উচ্ছ্বাসে ভাসলেন আলফা নেতা

প্রকাশিত: ১৮:৫৮, ১৯ নভেম্বর ২০১৫

জনতার উচ্ছ্বাসে ভাসলেন আলফা নেতা

অনলাইন ডেস্ক ॥ স্ত্রী-র এমন ছেলেদের মতো চুলের ছাঁট দেখে প্রথমটায় চিনতেই পারেননি স্বামী! আদালতের ভিতরে গিজগিজে ভিড়ে একান্তে কথা বলা সম্ভব ছিল না। তবু তার মধ্যেও স্বামী-স্ত্রীর কথা বলার খানিক সুযোগ করে দিয়েছিলেন সিবিআই অফিসাররা। প্রায় দেড় দশক পরে প্রথম দেখা। প্রথম দর্শনে স্বামী অনুপ চেতিয়ার কাছে যে নিজের পরিচয় দিতে হবে— ভাবতেই পারেননি মণিকা বরা চেতিয়া। পরে দু’জনই হেসে ফেলেন। জ্ঞান হওয়ার পরে এই প্রথম বাবাকে দেখল ২২ বছরের জুমন। এত দিন নিজেকে কারাবন্দি ব্যক্তির সন্তান হিসেবেই দেখে এসেছে সে। আজ বিমানবন্দর থেকে আদালত অবধি বাবাকে ঘিরে সংবাদমাধ্যম ও আমজনতার যে উচ্ছাস চাক্ষুষ করল— তা দেখে তিনি অবাক। নিজেও ১৮ বছর জেলে ছিলেন। এত দিন পরে পুরোনো বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে হাজির হন গুয়াহাটির সিজেএম আদালতে। এজলাসে তোলার আগে অনুপকে দেখে জড়িয়ে ধরলেন আলফার সহ-সভাপতি প্রদীপ গগৈ। কুশল বিনিময়ের পরে অনুপের সামনের ফোকলা দাঁত আর বেড়ে যাওয়া বয়স নিয়ে কিঞ্চিত হাসি-ঠাট্টা হল। দীর্ঘ ২৪ বছর পরে আজ অসমে পা রাখলেন আলফার প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক অনুপ চেতিয়া। ১১ নভেম্বর ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ চেতিয়ার দায়িত্ব সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেয়। ১২ নভেম্বর দিল্লির বিশেষ সিবিআই আদালত তাকে ৬ দিনের ট্রানজিট রিম্যান্ড দেয়। চেতিয়া আসবেন জেনে গত কাল সকাল থেকেই তাঁর স্ত্রী-পুত্র, এমন কী পুলিশকর্তারাও গুয়াহাটি বিমানবন্দরে অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু বিকেল অবধি তিনি আসেননি। পরে আলফার তরফে জানানো হয় ভাইরাল জ্বরে আক্রান্ত হওয়ায় তাঁকে যাত্রীবিমানে আনতে সমস্যা হয়েছিল। আজ বিএসএফের বিশেষ বিমানে চেতিয়াকে গুয়াহাটি আনা হয়। বিমানবন্দরের পিছনের ভিআইপি দরজা দিয়ে ৫টি গাড়ির কনভয় চেতিয়াকে নিয়ে সিজেএম আদালতে রওনা হয়। বিস্তর দৌড়ঝাঁপ করেও বিমানবন্দরে তাঁর দেখা পাননি মণিকাদেবী ও আলফা নেতারা। বেলা ১০টা ৪০ মিনিটে নীল জামা, কালো প্যান্ট আর লালচে চুলের চেতিয়াকে নিয়ে কনভয় সোজা ঢুকে যায় আদালত চত্বরে। সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে বিচারক সঙ্গীতা হালৈয়ের এজলাসে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। সেখানেই প্রদীববাবু, আলফার বিদেশ সচিব শশধর চৌধুরি, অর্থ সচিব চিত্রবন হাজরিকা, সহ সেনাধ্যক্ষ রাজু বরুয়া, নেতা প্রাণজিৎ শইকিয়া এবং মণিকাদেবী চেতিয়ার সঙ্গে কথা বলেন। বাইরে এসে প্রদীপবাবু জানান, শরীরের বয়স বাড়লেও অনুপ মনের দিক থেকে একইরকম শক্ত আছেন। তাঁর কথায়, ‘‘২৪ নভেম্বর আলফার সঙ্গে কেন্দ্রের শান্তি আলোচনা রয়েছে। আশা করি অনুপও বৈঠকে থাকবে। অনুপকে দেখার জন্য এই জনসমুদ্র প্রমাণ করে দিল আলফা আজও সমান প্রাসঙ্গিক।’’ কিন্তু, আত্মসমর্পণকারী আলফার একাংশ দাবি করেছে, পরেশ বরুয়াকে না ফেরাতে পারলে আলোচনা অর্থহীন। সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, চেতিয়ার সঙ্গে কারাগার থেকেই পরেশ বরুয়া ও দৃষ্টি রাজখোয়ার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। তবে কী পরেশকে ফেরাতে অনুপকে কাজে লাগাবে আলফা? প্রদীপবাবু বলেন, ‘‘এত কথা হয়নি। অনুপ অবিভক্ত আলফার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন এবং আছেন। তিনি জনতার সামনে আসতে চান। অংশ নিতে চান শান্তি আলোচনায়।’’ পৌনে দু’টো নাগাদ বেরিয়ে আসেন চেতিয়া। অপেক্ষমান জনতার দিকে হাত নেড়ে হাসতেই সিবিআই অফিসারেরা দ্রুত, মাথা চেপে তাঁকে গাড়িতে ঢুকিয়ে দেন। এনএসজি কম্যান্ডোরা কাউকে কাছে ঘেঁষতে দেননি। চেতিয়াকে বিমানে ফের দিল্লি নিয়ে যায় সিবিআই। ১৯৮৬ সালের হত্যার ঘটনা নিয়ে ১৯৮৮ সালে একটি মামলা দায়ের করেছিল সিবিআই। আজ ওই মামলায় সিবিআইয়ের আইনজীবি ১৪ দিনের জন্য চেতিয়াকে হেফাজতে চান। চেতিয়ার আইনজীবি বিজন মহাজন দাবি করেন, ২০০৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর মামলাটির চূড়ান্ত রিপোর্ট দিয়ে তা বন্ধ করে দিয়েছিল সিবিআই। এত বছর পরে ওই মামলায় চেতিয়াকে আটকে রাখা অযৌক্তিক। দুই পক্ষের বক্তব্য শোনার পরে বিচারক চেতিয়াকে পাঁচ দিনের জন্য সিবিআইয়ের হেফাজতে দেন। আরও বলেন, অনুপবাবু অসুস্থ। তাই প্রতিদিন তাঁর ডাক্তারি পরীক্ষা করাতে হবে। ভাল খাদ্য দিতে হবে। অনুপ চেতিয়ার মুক্তির ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘অন্যান্য আলোচনাপন্থী নেতার মতো আলোচনার স্বার্থে তাঁকেও ছাড় দেওয়া যেতে পারে। তবে এটি আদালতের বিচারাধীন বিষয়।’’ সন্ধ্যায় পরেশ বরুয়া সংবাদমাধ্যমে ফোন করে বলেন, ‘‘অনুপ ঘরের মাটিতে ফেরায় আমরাও খুশি। ওঁর সুস্বাস্থ্য কামনা করছি।’’ কিন্তু আলফা সূত্রে খবর ছিল, চেতিয়াকে ভারতে ফিরতে নিষেধ করেছিলেন পরেশ। চেতিয়া নিষেধ না শোনায় তিনি অসন্তুষ্ট। পরেশ বলেন, ‘‘আলফায় অনুপের অবদান পর্বতসম। আমরা সকলেই ওঁকে শ্রদ্ধা করি।’’ চেতিয়া নিজে তাঁকে শান্তি আলোচনায় ডাকলে তিনি কি আসবেন? পরেশ বলেন, ‘‘আমরা কখনওই আলোচনা বা শান্তির বিপক্ষে নই। তবে আমাদের দাবি একটাই। স্বাধীন অসম। সেই দাবি মেনে নিয়ে ভারত যদি সসম্মানে আলোচনার আহ্বান জানায় তবে অবশ্যই ভেবে দেখব। এখন চেতিয়া শত্রু শিবিরে। আগে তিনি মুক্তি পান। সুস্থ হোন। এই সব বিষয় পরে ভাবা যাবে।’’ সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা
×