ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ছেলেবেলা ও ছাত্রজীবন

প্রকাশিত: ০৪:৩১, ২০ নভেম্বর ২০১৫

ছেলেবেলা ও ছাত্রজীবন

সিলেট মুরারীচাঁদ কলেজের আরও স্মৃতি এবং ঢাকায় পাড়ি (১৮ নবেম্বরের পর) তিনি চেয়েছিলেন একটি সিঙ্গেল কামরা। আবদুল মুঈদ কর্মজীবনে প্যারিসে ইউনেস্কোতে চাকরি করতেন এবং এককালের প্রাদেশিক মন্ত্রী কফিলউদ্দিন চৌধুরীর কন্যা ফাতেমাকে বিয়ে করেন। ফাতেমা সম্ভবত বর্তমানে ঢাকায় বসবাস করেন। বেণু নামে পরিচিত এই মহিলা আমার স্ত্রীর সহপাঠী বা সমসাময়িক ছিলেন। প্যারিসে আমি সব সময় তাদের অকৃত্রিম অতিথিপরায়ণতা উপভোগ করি। বেশ কিছুদিন এই ডাবল কামরায় আমি একাই অবস্থান করি। বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের ক্লাস শুরু হয় সম্ভবত ২২/২৩ আগস্টে। কলা বিভাগের সব ক্লাসই ছিল তথাকথিত কলা ভবনে। কলা ভবন আসলে ছিল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের উত্তর প্রান্তের স্থাপনাটি এবং তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল কিছু স্থাপনা। যেমন- পুরনো দিনের সুনির্মিত পরিচালকদের কামরা। যেখানে ছোট পরিসরের ক্লাস হতো এবং বিভাগ প্রধানদের দফতর ছিল। একটি সাদামাটা একতলা দালান, যেটা বাণিজ্য ভবন নামে পরিচিত ছিল। আর একটি টিনের ছাদের চায়ের দোকান প্রসিদ্ধ মধুর রেস্তোরাঁ। তবে প্রবেশপথটি ছিল বেশ ধুমধামের। সেটি আসলে ছিল দোতলাবেষ্টিত প্রক্টরের বাসস্থান-কাম-দফতর এবং আমাদের সময় প্রক্টর ছিলেন অর্থনীতি বিভাগের ড. মাজহারুল হক। তিনি সম্ভবত বছরখানেক আগে লন্ডন থেকে পিএইচডি ডিগ্রী করে ফিরেছেন এবং তার একটি ফোর্ড পপুলার গাড়ি ছিল। গাড়ি উল্লেখ করলাম এজন্য যে, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে খুব কম শিক্ষকই গাড়িতে আসতেন। মাত্র কয়েকজন শিক্ষকের গাড়ি ছিল এবং কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রীও গাড়িতে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসত। কলাভবনের দৈন্য আমাকে বেশ পীড়িত করে। তবে হলগুলোর সুরম্য দালান এবং বিজ্ঞান বিভাগের কার্জন হল ও তার সংশ্লিষ্ট স্থাপনাগুলো তখনও পরিব্রাজকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করত। এই কলাভবন এখন মেডিক্যাল কলেজের অংশ হয়ে গেছে। আমরা যখন বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়ি ছাড়ি তখন কলাভবনের সামনে আরেকটি কলাভবন নির্মিত হয়। এটি এখনও বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি পুরনো ভবন হিসেবে আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের দৈন্যাবস্থার একটি সবিশেষ কারণ ছিল। বর্তমান মেডিক্যাল কলেজ আসলে পূর্ববাংলা ও আসাম প্রদেশের সচিবালয় হিসেবে নির্মিত হয়। সেখানে সচিবালয় ১৯১২ সাল পর্যন্ত বহাল থাকে। কিন্তু বাংলা প্রেসিডেন্সির বিভাগ ১৯১২ সালে বাতিল হলে বাংলা প্রেসিডেন্সির সচিবালয় কলকাতায় স্থানান্তরিত হয়। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা পেলে এই দালানটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে যায় এবং এখানে কিছু অংশ ক্লাস হতো ও নিচতলা ১৯২৯ সাল পর্যন্ত ছিল সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের ছাত্রাবাস। সুদৃশ্য সলিমুল্লাহ হল নির্মিত হয় ১৯২৯ সালে এবং তখনই ছাত্রাবাসটি সেখানে স্থানান্তরিত হয়। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ স্থাপিত হয় ১৯৪৬ সালে এবং তখন থেকেই এই ভবনটি হয় মেডিক্যাল কলেজ। চলবে...
×