ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রকল্পে বাড়ছে বৈদেশিক অর্থের ব্যবহার

দাতাদের অর্থছাড় বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৪:৩৭, ২০ নভেম্বর ২০১৫

দাতাদের অর্থছাড় বাড়ছে

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ উন্নয়ন প্রকল্পে বাড়ছে বৈদেশিক অর্থের ব্যবহার। চলতি অর্থবছরের চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) উন্নয়নসহযোগীদের অর্থছাড় বেড়েছে। এসময়ে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে তারা ছাড় করেছে ৭৩ কোটি ১৪ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৬৯ হাজার ৯৪ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার। তবে উল্লেখযোগ্যহারে কমেছে প্রতিশ্রুতি। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী এসব তথ্য জানা গেছে। এ সময়ে সর্বোচ্চ অর্থছাড় করেছে বিশ্বব্যাংক। উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে আগের তুলনায় দিন দিন সক্ষমতা বাড়ার কারণেই অর্থছাড় বাড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে সংস্থাটির ঢাকা অফিসে নিযুক্ত প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, বৈদেশিক সহায়তার ক্ষেত্রে বিশেষ করে বিশ্বব্যাংকের যে অর্থছাড় ও প্রতিশ্রুতি সেটি সঠিক পথেই রয়েছে। তাছাড়া অল্প কয়েক মাসে প্রাতশ্রুতি কম আসার বিষয়ে বলাটা বিভ্রান্তিকর হবে। কেননা এখনও সময় আছে। সব বছরইতো আর প্রকল্পের সিডিউল এক থাকে না। একেক অর্থবছরে একেক রকম হয়। যেমন বিশ্বব্যাংকের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে আগামী ২০১৬ ও ১৭ অর্থবছর পর্যন্ত যে প্রতিশ্রুতি দেয়ার লক্ষ্য ছিল তার অধিকাংশই ইতোমধ্যেই দেয়া হয়ে গেছে। গত অর্থবছরে ১ দশমিক বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। এ অর্থবছরও ১ দশমিক ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রতিশ্রুতির লক্ষ্য আছে। আশা করছি সেটি অর্জন হবে। সুতরাং চট করে বলা যাচ্ছে না প্রতিশ্রুতি কমেছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের সক্ষমতা আগের চেয়ে বাড়ছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) উন্নয়ন সহযোগীরা মোট যে পরিমাণ অর্থছাড় করেছে তার মধ্যে ঋণ হচ্ছে ৫৮ কোটি ৪৬ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার আর অনুদান হচ্ছে ১৪ কোটি ৬৭ লাখ ৯০ হাজার মার্কিন ডলার। অন্যদিকে গত অর্থবছরের চার মাসে মোট যে পরিমাণ অর্থছাড় করেছে তার মধ্যে ঋণ হচ্ছে ৫৯ কোটি ২৯ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার এবং অনুদান ১১ কোটি ৬৪ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত উন্নয়নসহযোগীরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে মোট ২৫ কোটি ৭০ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ঋণ হচ্ছে ১৯ কোটি ৫২ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার এবং অনুদান রয়েছে ৬ কোটি ১৭ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার। অন্যদিকে গত অর্থবছরের একই সময়ে (চার মাসে) উন্নয়নসহযোগীরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল মোট ৬৯ কোটি ৬৮ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ঋণ হচ্ছে ৬০ কোটি মার্কিন ডলার এবং অনুদান হচ্ছে ৯ কোটি ৬৮ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার। চলতি অর্থবছরের চার মাসে বাংলাদেশ উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থ পরিশোধের পরিমাণ কমেছে। এ সময়ে পরিশোধ করা হয়েছে মোট ৩৯ কোটি ৪৪ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার। এর মধ্যে আসল হচ্ছে ২৯ কোটি ৯২ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার এবং সুদ ৬ কোটি ৯৬ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে উন্নয়নসহযোগীদের অর্থ পরিশোধ করা হয়েছিল মোট ৪৬ কোটি ১৬ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার । এর মধ্যে আসল ছিল ৩৯ কোটি ৪৪ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার এবং সুদ ছিল ৬ কোটি ৭১ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার। চলতি অর্থবছরের চার মাসে সবচেয়ে বেশি অর্থছাড় করেছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটির মোট ছাড়ের পরিমাণ (ঋণ ও অনুদান মিলে) ৩১ কোটি ১৮ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ছাড় করেছে ১০ কোটি ৭৭ লাখ মার্কিন ডলার। জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) ছাড় করেছে ৭ কোটি ৮২ লাখ মার্কিন ডলার। ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক ছাড় করেছে ৪ কোটি ৯০ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার। রাশিয়া ৪ কোটি ৫৫ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার এবং ভারত ছাড় করেছে ৮ লাখ ৩২ হাজার মার্কিন ডলার। আগামী অর্থবছরগুলোতে বৈদেশিক সহায়তা আরও অনেক বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছে ইআরডি।
×