ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বিশেষজ্ঞরা

ফুসফুসের ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে রোগীকে বাঁচানো সম্ভব

প্রকাশিত: ০৭:৩৬, ২০ নভেম্বর ২০১৫

ফুসফুসের ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে রোগীকে বাঁচানো সম্ভব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ফুসফুসের ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে রোগীকে বাঁচানো সম্ভব বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, চূড়ান্ত পর্যায়ে ধরা পড়লে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রোগীরা পাঁচ বছরের বেশি বাঁচে না। এখন অনেক নতুন কেমোথেরাপি, রিসিপটর বেইজ কেমোথেরাপি চলে এসেছে। সেগুলো দিয়ে হয়তো একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত চেষ্টা করে রোগীকে পাঁচ বছর পর্যন্ত বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব। আসলে প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়ার ওপর রোগীর সুস্থতা অনেকটা নির্ভর করে। তাই এ বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা দরকার। বৃহস্পতিবার ফুসফুস বিষয়ে চতুর্থ আন্তর্জাতিক সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে বিশিষ্ট চিকিৎসকেরা এসব কথা বলেন। রাজধানীর ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিউশন মিলনায়তনে বুধবার থেকে তিন দিনব্যাপী এ সম্মেলন চলছে। বাংলাদেশ লাং ফাউন্ডেশন এ সম্মেলনের আয়োজন করেছে। সম্মেলনে বক্তা হিসেবে বিশ্বের ১৮টি দেশের ৪০ জন বিশেষজ্ঞ অংশ নিচ্ছেন। সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে প্রথম সেশনে চেয়ারপার্সনের দায়িত্ব পালন করেন বাংলাদেশ লাং ফাউন্ডেশনের সভাপতি, জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ রাশিদুল হাসান ও জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) এম এ মালেক। ফুসফুসের বিভিন্ন রোগের ওপর বক্তব্য রাখেনÑ বাংলাদেশের অধ্যাপক ডাঃ মোঃ রুহুল আমিন, ভারতের অধ্যাপক ভি কে ভিজন, পাকিস্তানের ডাঃ মোহাম্মদ ওসমান ইউসুফ, সুইজারল্যান্ডের অধ্যাপক মাইকেল প্রমুখ। বক্তারা বলেন, মরণঘাতক হিসেবে এইডসের পরই ক্যান্সারের অবস্থান। ফুসফুসের ক্যান্সার শুধু একটি ভয়াবহ ব্যাধি। প্রতিবছর বিশ্বের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। ইদানীং মহিলাদের মাঝে ধূমপানের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় মহিলারাও অধিকসংখ্যক হারে ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি থাকলেও এ রোগ থেকে সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভের কোন চিকিৎসা পদ্ধতি অদ্যাবধি আবিষ্কৃৃত হয়নি। যদি একবারে প্রাথমিক অবস্থায় রোগটি ধরা পড়ে তবে তা থেকে মোটামুটি আরোগ্য লাভ করা যায়। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রাথমিক অবস্থায় রোগ নিরূপণ দুঃসাধ্যই বলা চলে। জীবাণুঘটিত রোগ না হওয়ায় এর নিরুদ্ধে উপযুক্ত প্রতিরোধক বা প্রতিষেধক আবিষ্কারে বিজ্ঞানীরা সাফল্য অর্জনে সক্ষম হয়নি। তাই জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে যতটা সম্ভব প্রাথমিক অবস্থায় রোগ নির্ণয় ও সাফল্য অর্জনের মাধ্যমে মৃত্যুহার এবং এ রোগের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক বিপন্নতা কমানোর চেষ্টা সামাজিক আন্দোলনে রূপ নিচ্ছে। ধূমপায়ী ব্যক্তিই এ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন বেশি। তবে অধূমপায়ীদের যে এ রোগ হতে পারে না তা কিন্তু নয়। নগরায়নের এ বিশ্বে শিল্পকারখানা ও গাড়ির নির্গত কালো ধোঁয়াও ফুসফুসের ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। এছাড়া বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ যেমনÑ ক্রোমিয়াম, ক্যাডমিয়াম, অ্যাসবেসটস ইত্যাদি এ রোগ সৃষ্টি করতে পারে। ফুসফুসের প্রদাহজনিত রোগ যেমনÑ যক্ষ্মা নিউমোনিয়া ভাল হওয়ার পর ফুসফুসের আক্রান্ত স্থানে ক্যান্সার দেখা দিতে পারে। ফুসফুসের যে কোন স্থান ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারে। এ রোগের উপসর্গ বা লক্ষণ সবার ক্ষেত্রে এক রকম হয় না। সাধারণভাবে এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি কাশি, কাশির সঙ্গে কফ বা রক্ত, শাসকষ্ট, বুকের ব্যথা হালকা, জ্বর, খাদ্যে অনীহা, ওজন হ্রাস ইত্যাদি উপসর্গ বা লক্ষণ নিয়ে হাজির হতে পারে। অনেক সময় এ রোগ শরীরের অন্যান্য স্থানেও ছড়িয়ে পড়ে। বক্তারা আরও বলেন, ফুসফুসের বিভিন্ন ধরনের ব্যাধির মধ্যে একটি জটিল ব্যাধি হচ্ছেÑ এমফাইসিমা। এমফাইসিমার ফলে ফুসফুসে মাত্রাতিরিক্ত বাতাস জমা হয়। এটি প্রধানত শ্বাসকষ্টজনিত রোগ। কারণ যখন ফুসফুসের ভেতরের দিকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত বাতাস জমা হয় তখন রোগীর কফ, কাঁশির সঙ্গে সঙ্গে শ্বাসকষ্ট প্রকট আকার দেখা দেয়। এমফাইসিমা একটি কষ্টদায়ক ব্যাধি। রোগটি একদিনে বাসা বাঁধে না।
×