ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পাকিস্তানের কাছ থেকে ন্যায্য হিস্যা আদায়ে চেষ্টা চলছে

প্রকাশিত: ০৭:৫৩, ২০ নভেম্বর ২০১৫

পাকিস্তানের কাছ থেকে ন্যায্য হিস্যা আদায়ে চেষ্টা চলছে

সংসদ রিপোর্টার ॥ ১৯৭১ সাল ও এর পূর্ববতী সময়ে পাকিস্তানের কাছ থেকে দেনা পাওনার ন্যায্য হিস্যা আদায়ে বাংলাদেশ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অখ- পাকিস্তানের প্রায় সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ সম্পদে বাংলাদেশের হিস্যা আদায়ে জোর দাবি জানানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে এ তথ্য জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী। এনামুল হকের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সংসদকে জানান, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে ১৯৭১ এবং এর পূর্ববর্তী সকল দেনা পাওনার ন্যায্য হিস্যা আদায়ের লক্ষ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দ্বিপাক্ষিক বৈঠকগুলোতে সমূহে দাবি জানিয়ে আসছে। ওসব বৈঠকের মধ্যে ১৯৭৭, ১৯৮০, ১৯৮৯, ১৯৯২, ১৯৯৭, ২০০৩, ২০০৪, ২০০৫, ২০১০ এবং ২০১২ সালের বৈঠক অন্যতম। এ সকল আনুষ্ঠানিক বৈঠক ছাড়াও পাকিস্তানের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠকেও সম্পদের হিস্যাসহ তিনটি অমীমাংসিত বিষয় বাংলাদেশের পক্ষ হতে উত্থাপন করা হয়। মন্ত্রী জানান, ১৯৭০ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ের পর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে বৈদেশিক সাহায্য হিসেবে আগত প্রায় ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঢাকায় স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানে রক্ষিত ছিল। যা আত্মসাতের উদ্দেশ্যে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে উক্ত ব্যাংকের লাহোর শাখায় স্থানান্তর করা হয়। এই টাকা সরাসরি ফিরিয়ে দেয়ার জন্য পাকিস্তানের কাছে বাংলাদেশ দীর্র্ঘদিন যাবত জোর দাবি জানিয়ে আসছে। এছাড়া ১৯৭১ সালের পূর্বে তৎকালীন অখ- পাকিস্তানের প্রায় ৪ দশমিক ৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ সম্পদে বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যা আদায়ের জন্য পাকিস্তান সরকারের কাছে বাংলাদেশ বার বার দাবি জানিয়েছে। ন্যায্য হিস্যা আদায়ে কূটনৈতিক চেষ্টা অব্যাহত আছে এবং থাকবে বলেও উল্লেখ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। আরও ১১ লাখ ৩২ হাজার এমআরপি দিতে হবে ॥ সরকারী দলের সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলমের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এখনও ১১ লাখ ৩২ হাজার ৩৩৭টি এমআরপি দিতে হবে। আইসিএও নির্ধারিত সময় অনুযায়ী আগামী ২৪ নবেম্বরের পর এমআরপি ছাড়া কোন পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশে গমন ও বিদেশে অবস্থান করতে পারবেন না কোন নাগরিক। সংসদে মন্ত্রী জানান, ২০১০ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে সকল বাংলাদেশী নাগরিককে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) দেয়ার জন্য প্রকল্প নেয়া হয়েছে। যা এ বছরই শেষ হবে। প্রায় ৩৫ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশীকে এমআরপি দেয়ার দেয়ার জন্য একই সময়ে বাংলাদেশ দূতাবাসগুলো ও মালয়েশিয়ান আউটসোর্সিং কোম্পানি আইআরআইএস এর মাধ্যমে বিদেশেও এমআরপি কার্যক্রম শুরু করা হয়। বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাস ৯ নবেম্বর পর্যন্ত ২১ লাখ ১৫ হাজার ৯০১টি এমআরপি ইস্যু করেছে। আউটসোর্সিং কোম্পানি ইস্যু করেছে ১ লাখ ৯৭ হাজার ২২২টি। এছাড়াও মিশনগুলোতে প্রায় ৫৪ হাজার ৫৪০টি পাসপোর্ট বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের মুদ্রণের অপেক্ষায় রয়েছে। মিয়ানমার থেকে ৪৫ বাংলাদেশী ফেরত এসেছে ॥ সরকারী দলের সংসদ সদস্য দিদারুল আলমের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের সাগর বা নদীতে মাছ ধরার সময়ে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি ও কোস্টাল পুলিশ বাংলাদেশের জেলেদের আটক হওয়ার কিছু ঘটনা ঘটেছে। নাগরিকত্ব নিশ্চিতকরণ এবং তাদের দেশে ফেরত পাঠানো ওইসব বাংলাদেশীদের আটক হওয়ার মতোই একটি চলমান প্রক্রিয়া। এর আওতায় বিগত এক বছরে ৪৫ জন বাংলাদেশীকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। আরও ২৫ জন বাংলাদেশীকে দেশে প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এছাড়া ১৩৩ জনের নাগরিকত্ব যাচাই প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। মন্ত্রী আরও জানান, সাজাপ্রাপ্ত বাংলাদেশীদের সাজার মেয়াদ পূর্তির আগেই তাদের ছেড়ে দেয়ার জন্য মিয়ানমার সরকারকে অনুরোধ জানিয়ে থাকে সরকার। এর পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ ক্ষমার আওতায় চলতি বছরের জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত মুক্তিপ্রাপ্ত ২০ জন বাংলাদেশী নাগরিককে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য একেএম মাঈদুল ইসলামের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, ২৯টি দেশের কারাগারে ৩ হাজার ৩৮৬ জন বাংলাদেশী আটক রয়েছেন। ৮টি দূতাবাসে বাংলাদেশের নিজস্ব জমিতে ভবন রয়েছে ॥ সরকারী দলের সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজীর প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, বিদেশের অধিকাংশ বাংলাদেশ দূতাবাসেরই নিজস্ব জমি বা ভবন নেই। বর্তমানে মাত্র ১৩টি দেশে বাংলাদেশের ১৫টি মিশনের নিজস্ব জমি আছে। এর মধ্যে ৮টি দূতাবাসের জমিতে নিজস্ব ভবন নির্মিত আছে। সেগুলো হচ্ছে- চীনের বেইজিং, বেলজিয়ামের ব্রাসেলস, ভারতের নয়াদিল্লী ও কোলকাতা, যুক্তরাজ্যের লন্ডন, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রিটোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন এবং নিউইয়র্কে জাতিসংঘ স্থায়ী মিশন। এছাড়া তুরস্কের আংকারা, পাকিস্তানের ইসলামাবাদ, মিয়ানমারের নেপিত, মালয়েশিয়ার পুত্রজায়া, জাপানের টোকিও, সৌদি আরবের রিয়াদ এবং নেপালের কাঠমান্ডুতে নিজস্ব জমিতে ভবন নির্মাণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরাতে জমি কেনা হয়েছে। বাকি মিশনগুলো ভাড়া করা বাড়িতে কার্যক্রম চালাচ্ছে। মন্ত্রী জানান, বিশ্বের ৫৫টি দেশে বাংলাদেশের ৭১টি মিশন রয়েছে। এর মধ্যে ৫৪টি পূর্ণাঙ্গ দূতাবাস, ২টি স্থায়ী মিশন, ৮টি কনস্যুলেট জেনারেল, ৩টি ডেপুটি হাইকমিশন, ৩টি সহকারী হাইকমিশন এবং ১টি কনস্যুলেট।
×