স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াতে ইসলামীর নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মৃত্যুদ- ঠেকাতে শেষ সময়েও দেশী-বিদেশী গোষ্ঠীর তৎপরতা চলছে। এই দুই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদ- ঠেকাতে এখনও পাকিস্তান, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিভিন্ন ধরনের চেষ্টা চলছে। এরই অংশ হিসেবে শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্র থেকে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এই দুই নেতার ফাঁসি বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। একাধিক কূটনৈতিক সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত এই দুই নেতার মৃত্যুদ- ঠেকাতে অনেক আগে থেকেই তৎপরতা চলছিল। তবে শেষ পর্যন্ত সর্বোচ্চ আদালত সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মুজাহিদের মৃত্যুদ- বহাল রাখে। যে কোন সময় এই দুই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি হতে পারে জেনেও দেশী-বিদেশী গোষ্ঠীর তৎপরতা থেমে নেই। এরই অংশ হিসেবে শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এক বিবৃতিতে বলেছেÑ বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াতে ইসলামীর নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের ফাঁসির দ- বন্ধ করা উচিত।
সংস্থাটির এশিয়া বিভাগের পরিচালক ব্রাড এ্যাডামস এক বিবৃতিতে উল্লেখ করেছেনÑ ১৯৭১ সালে যুদ্ধের সময় সংঘটিত অপরাধের বিচার বাংলাদেশের জন্য অবশ্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে এ বিচার হতে হবে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন। অন্যায্য বিচার প্রকৃত ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা পেতে পারে না, বিশেষ করে যখন মৃত্যুদ-ের মতো শাস্তি দেয়া হয়।
বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরুর পর থেকেই হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এ বিচারপ্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আসছে। এছাড়া সংস্থাটি যে কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে মৃত্যুদ-ের বিরোধিতা করে থাকে। তবে বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে সাধারণ অপরাধীর মৃত্যুদ-ের সময় সংস্থাটির কোন বিবৃতি দিতে দেখা যায়নি। শুধু যুদ্ধাপরাধীর বিচারের ক্ষেত্রে মৃত্যুদ-ের বিরোধিতা করায় দেশী-বিদেশী মহলের সমালোচনার মুখে পড়েছে সংস্থাটি।
কূটনৈতিক সূত্র জানায়, যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরুর পর থেকেই বিচার ঠেকাতে শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে দেশী-বিদেশী তৎপরতা শুরু হয়। এখনও সেই তৎপরতা চলছে। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মুজাহিদের ফাঁসি ঠেকাতে করাচী, লন্ডন ও নিউইয়র্ক থেকে তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পাকিস্তানে ও যুক্তরাজ্যে বেশ কয়েকজন বন্ধু রয়েছেন। তারা সাকা চৌধুরীকে বাঁচানোর জন্য বিভিন্ন তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।
বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসি ঠেকানোর তৎপরতায় তার ছেলে ফাইয়াজ চৌধুরী ও মেয়ে ফারজিন চৌধুরী ছাড়াও সাকার পাকিস্তানের কয়েকজন উচ্চপর্যায়ের বন্ধু ভূমিকা রাখছেন। এ প্রক্রিয়ায় যুক্তরাজ্যের মূলধারার রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত কয়েকজন পাকিস্তানী বংশোদ্ভূত রাজনীতিককেও সম্পৃক্ত করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, সাকার পরিবারের সদস্যদের টেলিফোন পেয়ে সাকার বন্ধু পাকিস্তানের সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ইসহাক খান খাকোয়ানি তৎপরতা শুরু করেছেন। পাকিস্তানের রাজনৈতিক, প্রশাসনিকসহ উচ্চপর্যায়ে কর্মরত সাকার এক সময়ের বন্ধুদের সঙ্গে তিনি তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন। সাকার দুঃসময়ের কথা জানিয়ে তিনি যার যার অবস্থান থেকে হাত বাড়ানোর আহ্বানও জানিয়েছেন।
পাকিস্তানের ভাওয়ালপুরে সাদিক পাবলিক স্কুলে পড়াশোনার সময় যারা সাকা চৌধুরীর সহপাঠী ছিলেন তাদের অনেকেই পাকিস্তানে উচ্চপর্যায়ে দায়িত্ব পালন করছেন। সে কারণে তারা শুরু থেকেই সাকাকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। তারা বিশ্বের বিভিন্ন ফোরামে সাকা চৌধুরীর ফাঁসির বিষয়টি তুলে ধরেছেন। এছাড়া বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে যোগাযোগ করে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি চাপ প্রয়োগের দাবি জানিয়ে চলেছেন।
এর আগে মুত্যুদ-প্রাপ্ত বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পক্ষে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য পাঁচ পাকিস্তানী নাগরিক সাফাই সাক্ষী দিতে চেয়েছিলেন। এরা হলেনÑ পাকিস্তানের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মিয়া সুমরো, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী ইসহাক খান খাকওয়ানি, ডন মিডিয়া গ্রুপের চেয়ারপার্সন আম্বার হারুন সাইগল, স্থপতি মুনিব আরজুমান্দ খান ও ভিকারুন্নেসা নূনের নাতি রিয়াজ আহমেদ নূন। এই পাঁচ পাকিস্তানীর দাবিÑ ১৯৭১ সালে যুদ্ধের সময় বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী করাচীতে অবস্থান করছিলেন। তাই যেসব অপরাধের জন্য তাকে মৃত্যুদ- দেয়া হয়েছে এর দায় তার ওপর বর্তায় না। তবে এই পাঁচ পাকিস্তানীর বাংলাদেশে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে বাংলাদেশ সরকার।
পাকিস্তানের সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী ইসহাক খান খাকওয়ানি সে সময় গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের নিষিদ্ধ করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাচ্ছি আমরা। তিনি আন্তর্জাতিক সাক্ষী হিসেবে তাদের সাক্ষ্য না নেয়ার ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনালের যুক্তি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।