ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মুহম্মদ শফিকুর রহমান

৪০ বছর পর ইতিহাসের দায়মুক্তির পথে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ২১ নভেম্বর ২০১৫

৪০ বছর পর ইতিহাসের দায়মুক্তির পথে বাংলাদেশ

মূল বক্তব্যে যাওয়ার আগে একটা বিষয়ের অবতারণা করতে চাই। সাকা চৌধুরী এবং মুজাহিদীর ফাঁসির দ- কার্যকর হওয়ার পর কেউ কেউ হয়ত বলবেন, ৪৪ বছর পর বাংলাদেশ ইতিহাসের দায় মুক্তি থেকে মুক্তি পেল। এ জায়গাটাতেই আমার আপত্তি। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর থেকে আজকের দিনটি গুনলে ৪০ বছর ৩ মাস ৫ দিন হয়Ñ ৪৪ বছর হয় না। মূলত ৪৪ বছর বলে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের তিন বছর ভুলিয়ে দিয়ে অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে কিছুটা দায় বঙ্গবন্ধুর ওপর চাপাতে চান। কেউ বুঝে শুনে ৪৪ বছর বলে আবার কেউ না বুঝে সরল মনে বলেন। তাদের ঘুম ভাঙানোর জন্য আমার এই প্রশ্নটির অবতারণা। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু সরকার মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসে দেশব্যাপী গণহত্যা, হত্যা, নারী ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুট, মানুষকে ভিটেমাটি থেকে তাড়ানো অর্থাৎ ৩০ লাখ শহীদ এবং প্রায় ৫ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম লুণ্ঠন ও হত্যার মতো জঘন্য মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর লক্ষ্যে পার্লামেন্টে ‘আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ বিচার আইন’ পাস করেন। এখানেই থেমে থাকেননি, দেশব্যাপী ৭৩টি যুদ্ধাপরাধ বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করে বিচারকার্য শুরু করেন। তখন প্রায় ৩৯ হাজার যুদ্ধাপরাধীকে গ্রেফতার করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। যাদের মধ্যে ১১ হাজারের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষে চার্জশীট দাখিল করা হয়। এদের মধ্যে সাড়ে ৬ শতাধিক যুদ্ধাপরাধীর বিরুদ্ধে ফাঁসি, যাবজ্জীবনসহ মেয়াদী দ- দিয়ে রায়ও দেয়া হয়েছিল। কিন্তু রায় কার্যকর করার আগেই জাতির পিতাকে হত্যা করে জিয়া ক্ষমতায় এসে দ-প্রাপ্ত, বিচারাধীন এবং তদন্তাধীন সকল যুদ্ধাপরাধীকে কারাগার থেকে মুক্ত করে দেন। এখানেই শেষ নয়, জিয়া বঙ্গবন্ধু কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত মুসলিম লীগ-জামায়াতসহ ধর্মাশ্রয়ী যুদ্ধাপরাধী দলের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে তাদের রাজনীতির মঞ্চে নামান। তার পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ সবারই জানা। আমার বক্তব্য হলো, ৪০ বছরের জন্য বঙ্গবন্ধু দায়ী হতে পারেন না। দায়ী যদি কাউকে করতে হয় তা জিয়াকেই করতে হবে। তিনি কেবল যে যুদ্ধাপরাধীদের ছেড়ে দেন তা নয়, তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের দায়মুক্তি দিয়ে পুরস্কারস্বরূপ বিদেশী দূতাবাসে বড় বড় পদে চাকরি দেন। জিয়া নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবি করলেও রাজাকার শাহ আজিজুর রহমানকে প্রধানমন্ত্রী বানান। ফাঁসির দড়ির কাছাকাছি আজকের সাকা চৌধুরী, মুজাহিদের উত্থানও তখনই। এ লেখা যখন লিখছি তখন সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদের ফাঁসির রায় কার্যকরের অপেক্ষা মাত্র। তবে এটা সত্যি যে, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্ত্রী-সন্তান-স্বজনদের জন্য ঐ সময়টি স্বস্তির সময় হিসেবে পরিগণিত হবে। একইভাবে ৪০ বছর পর মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ ইতিহাসের দায়মুক্তির পথে রয়েছে। আর এ চ্যাম্পিয়ন শেখ হাসিনা। পিতা আমাদের স্বাধীনতা এনে দিলেন আর কন্যা ১৫ আগস্টের পর বাংলাদেশকে সামরিক স্বৈরাচার থেকে মুক্তির মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রতিটি সূচকে এগিয়ে চলার পাশাপাশি যুদ্ধাপরাধীর বিচার করে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। এ জন্য তাঁকে বিদেশী অনেক বড় দেশের চোখ রাঙানি সহ্য করতে হয়েছে। তিনি এসবের তোয়াক্কা করেননি বরং অসীম সাহসিকতা, মেধা ও দূরদর্শিতা দিয়ে সব চোখ রাঙানির মোকাবেলা করে আজকের পর্যায়ে উপনীত হয়েছেন। আজ যদি আমাদের কারও নামে সেøাগান দিতে হয় তবে শেখ হাসিনার নামেই দিতে হবেÑ জয় শেখ হাসিনা। কিন্তু ইন্টারেস্টিং হলো আওয়ামী লীগের বড় মাঝারি নেতাদেরও অনেকে শেখ হাসিনার নাম একেবার নিলে নিজের দম্ভ প্রচার করে ৫ বার। মূলত এরা আওয়ামী লীগ করে না, করেন ‘আমি লীগ’ অথচ এ সব বড় মাঝারি নেতা কি অস্বীকার করতে পারেন শেখ হাসিনা রাষ্ট্রনায়ক বলেই বাংলাদেশ এগিয়ে যায়, সাকা চৌধুরী এবং আলী আহসান মুজাহিদের বিচার হয়। শেখ হাসিনা না হলে মৃত্যুদ- দূরে থাক যুদ্ধাপরাধ বিচার ট্রাইব্যুনালই হতো না। ‘আমি লীগার’ ভাইয়েরা এ সহজ কথাটাও বোঝেন বলে মনে হয় না। তবে হ্যাঁ, এই ‘আমি লীগারা’ একদিক থেকে বুদ্ধিমান যে, কোথায় পরিত্যক্ত সম্পত্তি আছে, কোথায় সরকারের জমি আছে, ওই সময় খুব ভাল জানে এবং হালাল করার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা তো আছেই। এ মুহূর্তে বাংলাদেশের শহর-বন্দর-গ্রাম কিংবা বহির্বিশ্বে বাংলা ভাষাভাষী মানুষ যে যেখানে আছেন বেতার-টেলিভিশনের সামনে নেই এমন বাঙালী খুব কমই পাওয়া যাবেÑ কখন সাকা ও মুজাহিদীর মৃত্যুদ-ের রায়ের কপি জেলখানায় যাচ্ছে, আপনজন কে কে দেখা করতে যাচ্ছেন, অনুসন্ধানী রিপোর্টারের মতো এ-টু-জেড লক্ষ্য করছেন। ফাঁসির দড়ি আর কতদূর মনোযোগ দিয়ে তা অবলোকন করছেন। রাখছেন। কে এই সাকা চৌধুরী? কে এই আলী আহসান মুজাহিদ? এক কথায় বলতে গেলে দু’জনই একাত্তরে গণহত্যা, নারী ধর্ষণসহ তাবত মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। একাত্তরে তারা তাদের প্রভু পাকিস্তানীদের সঙ্গে পরাভূত হন। জাতির জনকের নেতৃত্বে বাঙালীরা জয়লাভ করে এবং স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের যাত্রা শুরু করে। তারপরও এই সন্ত্রাসী নারী ধর্ষণকারীদের মধ্যে সামান্যতম অনুশোচনা লক্ষ্য করা যায়নি। পঁচাত্তর পর্যন্ত গা-ঢাকা দিয়ে থাকে। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর যেন একেকটা ’৭৩ থেকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করার পরও তাদের বোধোদয় হয়নি। বস্তুত ওদের রক্তই দূষিত। সাকা চৌধুরীর বাবা ফকা চৌধুরীও (ফজলুল কাদের চৌধুরী) ছিলেন মুসলিম লীগের ডাকসাইটে নেতা, পাকিস্তান পার্লামেন্টের স্পীকার। তিনিও একাত্তরে পাকিস্তান উদ্ধারে লড়াই করেছেন এবং ১৬ ডিসেম্বরের পর কারারুদ্ধ হন। কারাগারেই তার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়। সাকা চৌধুরী বর্তমানে জামায়াতাশ্রয়ী বিএনপির কেন্দ্রীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য। তার সম্পর্কে যে কথা শোনা গেছে, একাত্তরে অনেককে সরাসরি হত্যা করেছে। তার মধ্যে অন্যতম ছিলেন কু-েশ্বরী ঔষধালয়ের মালিক শ্রী নূতন চন্দ্র সিংহ, যিনি বাঙালী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী এবং দেশপ্রেমিক বুদ্ধিজীবী হিসেবে শিক্ষিত সমাজের অন্যতম মধ্যমণি ছিলেন। আলী আহসান মুজাহিদ ফরিদপুরের এক মুসলিম লীগ নেতার পুত্র। সে স্বাধীনতার আগে থেকেই জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালে এ মুজাহিদ ছিল জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসঙ্ঘের সাধারণ সম্পাদক। অন্যজন নিজামী যিনি এখনও ট্রায়াল কেস করছেন এবং শেষ পর্যায়ে আছে। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই তারা পাকিস্তানী হানাদার সামরিক জান্তার সহযোগী হিসেবে বাংলাদেশবিরোধী যুদ্ধে লিপ্ত হয়। কিন্তু যখন দেখল কিছুতেই তারা জিততে পারছে না, তখন বাংলাদেশ যাতে মেধাশূন্য হয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলতে বাধ্য হয় সে জন্য হিটলারের গেস্টাপো বাহিনীর আদলে আলবদর, আলশামস বাহিনী বানিয়ে বুদ্ধিজীবী হত্যা শুরু করে এবং ১৬ ডিসেম্বরের আগে ১০ থেকে ১৪ ডিসেম্বর এই চারদিনে তিন শতাধিক বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করে। যেমনÑ প্রফেসর ড. মুনীর চৌধুরী, প্রফেসর ড. জিসি দেব, ডাঃ আলীম চৌধুরী, প্রফেসর মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, প্রফেসর আনোয়ার পাশা, প্রফেসর ড. গিয়াস উদ্দিন আহমেদ, সাংবাদিক সিরাজ উদ্দিন হোসেন, সাংবাদিক-উপন্যাসিক শহীদুল্লাহ কায়সার, সাংবাদিক খন্দকার আবু তালেব, সাংবাদিক আ.ন.ম গোলাম মোস্তফা, সাংবাদিক, বন্ধু চিশতি শাহ হেলাল উদ্দিন, দানবীর আর পি সাহাসহ এমন ৩১৩ জনের মতো বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করে মাত্র ৪ দিনে (১০ থেকে ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১)। আলবদর আল শামস বাহিনী এত নৃশংস বর্বর ছিল যে, যিনি চোখের ডাক্তার তার চোখ তুলে নেয়, যিনি হার্টের ডাক্তার তার হার্ট তুলে নেয়, যিনি শিক্ষক তার জিহ্বা কেটে নেয়, এইভাবে উল্লাস করতে থাকে। যে কারণে এই দুই খুনী মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত পাকিস্তানের মেইন এজেন্ট সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী পাকি শাসক গোষ্ঠীর প্রধান ব্যক্তি এবং পাকিস্তান থেকে অস্ত্র-মাদক চোরাচালানের বিশ্বস্ত এজেন্ট। মুজাহিদ পাকিস্তান-সৌদি আরবের মতো বকধার্মিক দেশসমূহের প্রধান এজেন্ট। আজ তারা ফাঁসির দোরগোড়ায়। যে কারণে আমি এ লেখার শিরোনাম দিয়েছি ৪০ বছর পর বাংলাদেশ দায়মুক্তির পথে এগিয়ে চলেছে। এ পর্যন্ত লেখার পর গতি পাল্টাতে হচ্ছে। টিভিতে দেখলাম খালেদা জিয়া শ্রদ্ধেয় আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর ভাষায় ‘দুই মাস ল-নে মিশন ইম্পসিবল’ শেষ করে আজ শনিবার ঢাকায় ফিরছেন। দেশে ফিরছেন ভাল কথা। ঘরের মানুষ ঘরে ফিরছেন। কিন্তু কি নিয়ে ফিরছেন তার কিছু আলামত লক্ষ্য করা গেল দলের মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপনের সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্যে। রিপন দেশের পরিস্থিতিকে সঙ্কটাপন্ন মন্তব্য করে বললেন, খালেদা জিয়া দেশ উদ্ধারে চিকিৎসা অসমাপ্ত রেখে চলে আসছেন। এতদিন সাকার ব্যাপারে বিএনপি কোন মন্তব্য করেনি। জামায়াত যখন মুজাহিদের ফাঁসি কনফার্ম হওয়ার পর হরতাল দিল, বিএনপি তখনও নীরব রইল-পক্ষে-বিপক্ষে কিছু বলল না। কিন্তু বৃহস্পতিবার দলের পুরানা পল্টন কার্যালয়ের পরিবর্তে খালেদার গুলশান কার্যালয়ের ওই সংবাদ সম্মেলনে সবাইকে অবাক করে দিয়ে বললেন, ‘সাকা চৌধুরী বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের ব্যাপারে যথেষ্ট ভূমিকা রাখেন। তিনি একজন পরিশীলিত মানুষ এবং গণতন্ত্রের প্রশ্নে আপোসহীন।’ হাসব না কাঁদব বুঝতে পারছি না। সাকা যদি পরিশীলিত মানুষ হয়, বাংলাদেশে আর কাউকে পরিশীলিত না হওয়ারই পরামর্শ দেব। তাছাড়া সাকা স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে অবদান রক্ষাকারী হলে আমরা মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালনকারী নবীন-প্রবীণ নাগরিকরা কী? বস্তুত আসাদুজ্জামান রিপনকে আমি চিনি সেই ছাত্রদলের সভাপতি হওয়ার সময় থেকে। রিপনই বরং পরিশীলিত এবং স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল বিএনপিতে কয়েকজনের মধ্যে একজন। তার মুখ থেকে এ কথা বেরুবার কথা নয়। তাছাড়া এতদিন তিনি প্রেস ব্রিফিং করেছেন নয়াপল্টন কার্যালয়ে, হঠাৎ গুলশানে কেন এসব প্রশ্ন আজ জনমনে। মনে হয় তিনি হিজ মাস্টার্স ভয়েস হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার মাস্টার লন্ডনে বসে প্রম্পট করছে আর তিনি এখানে ভয়েস দিচ্ছেন। রিপনরা আবারও যড়যন্ত্রে পা দিল। কে জানে আবারও কি ২০১৩ বা ২০১৫-এর প্রথম ৯২ দিনের মতো বোমা তথা পেট্রোলবোমার রাজনীতি শুরু করবেন না-কি? আইএস যদি কখনও বাংলাদেশে আসে, আসবে খালেদা জিয়ার আঁচল ধরেই। তার অর্থের কোন সঙ্কট নেই, জামায়াতী ব্যাংক অর্থ ভা-ার রয়েছে তার সঙ্গে। প্রশ্ন হলো কেন জামায়াত বিএনপির পেছনে, বিশেষ করে খালেদা-তারেকের পেছনে অর্থ ঢালছে? ঢালছে এ জন্য যে, ওই মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী জামায়াত-শিবিরের ধরার মতো একটা ঢালই বাকি আছে। ৪০ বছর পর দায়মুক্তির পথে বাংলাদেশÑ এই শিরোনামটির তাৎপর্য হলো বঙ্গবন্ধু হত্যার পর বাংলাদেশ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে পারেনি, বুদ্ধিজীবীদের হত্যার বিচার করতে পারেনিÑ এটি বাংলাদেশের জনগণের দায় ছিল এবং গোটা জাতি এ দায় বহন করে চলছিল। বিশেষত শহীদ পরিবারের সন্তানরা-স্বজনরা তো রীতিমতো হতাশা আর অপমানের মধ্য দিয়ে কাটছিল। আশাহত হয়ে ধুঁকে ধুঁকে মরছিল ধর্ষিতা মা-বোনেরা। একাত্তরে যারা জীবন বাঁচাতে নিজ বাড়িঘর ছেড়ে কেউ দেশত্যাগ করতে কেউ এ বাড়ি ও বাড়ি করেছে, করতে করতে সন্তান হারিয়েছে, যেমন এদেশের প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ বারীন মজুমদার ও ইলা মজুমদারের ১২ বছরের কন্যাটি ভারত যাবার পথে হারিয়ে যায়, এই মানুষগুলো এতদিন এতটাই হতাশ ছিল যে কোনদিন বুদ্ধিজীবী হত্যার, নারী ধর্ষণ হত্যার বিচার হবে বা হতে পারে। আজ যখন বিচার হলো তারা অনেকেই শেখ হাসিনার জন্য দোয়া করছেন। সাকা কিংবা মুজাহিদের ফাঁসি কেবল দুই অপরাধীর ফাঁসি নয়, এটি বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকেও মুক্তি। যে যত বড় শক্তিধরই হোক আইনের দ- সব সময়ই তার পেছনে রয়েছে। এটি আজ এস্টাবলিস্ট হলো। আগেই বলেছি, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় না থাকলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দূরে থাক, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ঝুঁকি থেকে উদ্ধার হতো না। জিয়া-গোলাম আযমরা বঙ্গবন্ধু হত্যার পর স্বাধীন বাংলাদেশের পরিবর্তে ‘স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান’ বানানোর যে প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন তা থেকেও বাংলাদেশকে মূলধারার অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধের ধারায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনা রাষ্ট্র ক্ষমতায় আছেন বলেই। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের নেতা বলেই। আমরা, নাগরিকদের এখন কাজ হলো যে যেখানে আছি, আছেন নিজ নিজ অবস্থান থেকে শেখ হাসিনার বিশাল কর্মযজ্ঞে শরিক হওয়া, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতীয় প্রগতির মিছিলে যোগ দেয়া। মিছিলে গিয়েই আমাদের বাঁচতে হবে। আর আওয়ামী লীগের নামে ‘আমি লীগ’ করব, এটা হতে পারে না। অনেক তো হয়েছে, অনেকে অনেক কিছু করেছেন, আসুন এবার ক্ষ্যামা দিয়ে শেখ হাসিনার মিছিলে যাই। কেননা, এ মিছিল জাতিকে মূলধারায় পরিচালিত করার মিছিল, এ মিছিল সকল সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, গুপ্ত হত্যা, পেট্রোলবোমায় জ্বালাও-পোড়াও এবং সর্বোপরি সকল কূপম-ূকতা সাম্প্রদায়িকতা পেছনে ফেলে দেশকে মধ্যম আয়ের পথ পেরিয়ে উন্নত দেশের মহাসড়কে যাওয়ার মিছিল। যার নেতা শেখ হাসিনা। তাঁর হাতেই ইতিহাসের দায়মুক্তি হলো। ঢাকা ॥ ২০ নবেম্বর ২০১৫ লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও সভাপতি, জাতীয় প্রেসক্লাব নধষরংংযধভরয়@মসধরষ.পড়স
×