ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সশস্ত্রবাহিনী দিবস

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ২১ নভেম্বর ২০১৫

সশস্ত্রবাহিনী দিবস

আজ ২১ নবেম্বর, সশস্ত্রবাহিনী দিবস। মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে ১৯৭১ সালের আজকের দিনে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সদস্যদের সমন্বয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে গঠিত হয় ‘বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনী’। মুক্তিযুদ্ধে এই বাহিনীর ত্যাগ, সংগ্রাম আর বীরত্বের স্মারক হিসেবে প্রতিবছর এই দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। সশস্ত্রবাহিনী দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় প্রতিষ্ঠান। একাত্তরের সেই অগ্নিগর্ভ দিনগুলোয় এ দেশের মানুষ ও সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যদের সম্মিলনে যে অজেয় মুক্তিবাহিনী গড়ে উঠেছিল তারই গর্বিত উত্তরাধিকার স্বাধীন বাংলাদেশের সশস্ত্রবাহিনী। মূলত মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্ন সামরিকবাহিনীর অবদানকে সাধারণ জনতার আত্মত্যাগের সঙ্গে একীভূত করে দেখা হয় এ দিনে। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানী হানাদারবাহিনীর তাণ্ডব এবং নির্বিচারে বাঙালীদের হত্যার প্রতিবাদে বিদ্রোহ করে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস, পুলিশ, আনসার এবং বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষ। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। এরপর যুদ্ধে যোগ দিতে থাকেন বাঙালী নৌ, সেনা ও বিমান বাহিনীর সদস্যরা। তাদের সঙ্গে মুক্তিপাগল মানুষ অস্ত্র হাতে পাকিস্তানীদের অস্ত্রের জবাব দিতে থাকে। মুক্তির সংগ্রাম স্বাধীনতার লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। গঠিত হয় মুজিবনগর সরকার। যুদ্ধের কৌশল হিসেবে পুরো বাংলাদেশকে ভাগ করা হয় ১১টি সেক্টর এবং কিছু সাব-সেক্টরে। সেক্টরগুলোর দায়িত্ব নেন সুশিক্ষিত পেশাদার সামরিক কর্মকর্তারা। এই মুক্তি সংগ্রামকে আরও সুসংগঠিত করার লক্ষ্যে ১৯৭১-এর নবেম্বর মাসে একটি সুসংগঠিত সশস্ত্রবাহিনী গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তারই ধারাবাহিকতায় গঠিত হয় সশস্ত্রবাহিনী। গঠিত হওয়ার দিন থেকে এই বাহিনীর নেতৃত্বে পাকিস্তানী হানাদারবাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মিলিত আক্রমণ শুরু হয়। শুরু হয় স্থল, নৌ ও আকাশপথে লড়াই। সম্মিলিত এই লড়াইয়ের মধ্য দিয়েই এগিয়ে আসতে থাকে বিজয়ের মাহেন্দ্রক্ষণ। ত্রিমুখী আক্রমণে পিছু হটতে থাকে পাকিস্তানী হানাদারবাহিনী। এর কিছুদিন পর যুক্ত হয় মিত্রবাহিনী। সবার একের পর এক আক্রমণে বিপুল ক্ষয়ক্ষতির মুখে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ৯৩ হাজার সৈন্যসহ আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তানী বাহিনী। প্রতিবছরই যথাযথ মর্যাদা ও উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যে পালিত হয় সশস্ত্রবাহিনী দিবস। এদিন ঢাকা সেনানিবাসে শিখা অনির্বাণে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং তিনবাহিনীর প্রধানদের পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শুরু হয় দিনের কার্যক্রম। বিকেলে সেনাকুঞ্জে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীবর্গ, বিরোধীদলীয় নেতা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং উচ্চপর্যায়ের সামরিক-বেসামরিক ব্যক্তিরা সংবর্ধনায় সমবেত হন। দেশের অন্যান্য সেনানিবাস, নৌ ও বিমান ঘাঁটিতেও অনুরূপ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সশস্ত্রবাহিনী আমাদের অহঙ্কার। সশস্ত্রবাহিনীর কয়েক হাজার কর্মকর্তা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে কঙ্গো, নামিবিয়া, কম্বোডিয়া, সোমালিয়া, উগান্ডা, লাইবেরিয়া, হাইতি, কসোভো, জর্জিয়া, পূর্ব তিমুরসহ বিভিন্ন দেশে শান্তিশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় নিরলস কাজ করছে। সশস্ত্রবাহিনীর আধুনিকায়নে এপিসি বা যুদ্ধবিমান, অত্যাধুনিক ফ্রিগেট ও অন্যান্য আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। পেশাদারিত্ব বাড়ানোর জন্য ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ, ওয়ার কলেজ, আর্মড ফোর্সেস মেডিক্যাল কলেজ, শান্তিরক্ষা ইনস্টিটিউট, সায়েন্স এ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সশস্ত্রবাহিনীর সদস্য সংখ্যা বাড়ানোর জন্য একটি কম্পোজিট ব্রিগেড, একটি পদাতিক ব্রিগেড, স্পেশাল ওয়ার্কস ব্রিগেডসহ কয়েকটি বিভিন্ন ধরনের ব্যাটালিয়নসহ অন্যান্য উন্নয়ন কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা হয়েছে। আজ উন্নত বিশ্বে সামরিকবাহিনী সম্পর্কে ধ্যান-ধারণা পাল্টে গেছে। সরকার সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে এতে কোন সন্দেহ নেই। আমাদের ভূরাজনৈতিক অবস্থাটি মনে রাখা দরকার। সেক্ষেত্রে আমাদের সশস্ত্রবাহিনীকে আরও আধুনিক ও সুযোগ-সুবিধা দিয়ে অধিক সুদক্ষ বাহিনীতে পরিণত করা জরুরী। দেশের মাটি ও মানুষ এবং দেশমাতৃকার সেবায় সশস্ত্রবাহিনীকে আরও সম্পৃক্ত করতে হবে।
×