ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

পশ্চিমা নেতারা বুঝেছেন রুশ নেতাকে তাদের প্রয়োজন

পুতিন একঘরে নন, এখন রাজনৈতিক ক্ষমতার নিয়ন্তা

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ২১ নভেম্বর ২০১৫

পুতিন একঘরে নন, এখন  রাজনৈতিক ক্ষমতার নিয়ন্তা

ভ্লামির পুতিন এক বছরের মধ্যে আন্তর্জাতিক পরিম-লে একঘরে অবস্থান কাটিয়ে রাজনৈতিক ক্ষমতার এক নিয়ন্তায় পরিণত হয়েছেন। ব্রিসবেনে ২০১৪ সালে জি-২০ শীর্ষ বৈঠকে রুশ প্রেসিডেন্টকে শাসিয়েছিলেন পাশ্চাত্য নেতারা। কিন্তু তারা এখন বুঝতে পারছেন, তার প্রয়োজন রয়েছে তাদের।Ñ খবর গার্ডিয়ান অনলাইনের। একটা যুদ্ধ কতটাই না মতপার্থক্য সৃষ্টি করতে পারে। ১২ মাস আগে ব্রিসবেনের ওই শীর্ষ বৈঠকে পুতিন ছিলেন আলোচনার প্রধান বিষয়। এ রুশ নেতার ইউক্রেনে সামরিক হস্তক্ষেপ এবং অবৈধভাবে ক্রিমিয়া দখলের পর তার একটু ইতিবাচক সিদ্ধান্ত পাওয়ার জন্য পাশ্চাত্যের নেতারা অপেক্ষমাণ ছিলেন সেদিন তৃষিত হয়ে। বারাক ওবামা সতর্কবাণী উচ্চারণ করে সে সময় বলেছিলেন, পুতিন আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বেন। ডেভিড ক্যামেরন বলেছিলেন, তিনি বিশ্বাস করেন না রুশ নেতাকে। কানাডার তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন হার্পার স্পষ্টভাবে পুতিনকে বলেছেন, ইউক্রেন থেকে বেরিয়ে যান। নিষেধাজ্ঞা আরোপে ক্ষোভের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে পুতিন বলেছিলেন, পশ্চিমের নেতারা তাদের মগজের সক্রিয়তা হারিয়ে ফেলেছেন এবং মস্কোর বিরুদ্ধে শাস্তি প্রয়োগ করে বিভিন্ন সমস্যাকে আরও মারাত্মক পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে সমালোচনা অপতিহত গতিতে চলতে থাকলে তিনি ক্ষোভের সঙ্গে আগেই শীর্ষ বৈঠক ত্যাগ করেন। তুরস্কে এ সপ্তাহে অনুষ্ঠিত জি-২০ শীর্ষ বৈঠকে সবকিছুই পাল্টে গেছে বলে মনে হয়েছে। পুতিনকে বৈঠকে দেখা গেছে বেশ একটা বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে। ওবামা ও মার্কিন নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুসান রাইসের সঙ্গে প্রাণবন্ত হয়ে খোশগল্প করছেন তিনি। ক্যামেরন ও অন্যান্য নেতার সঙ্গেও তিনি গঠনমূলক আলোচনা করেছেন। আর একঘরে নন তিনি। তার প্রতি আর চোখ রাঙানো নেই। পুতিন এখন এমনই একজন যাকে চাইছেন প্রত্যেকে। এর কারণ রহস্যঘেরা নয়। ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বর্বর হামলায় শরণার্থী সঙ্কটে দিশেহারা হয়ে এবং সিরিয়ায় যুদ্ধ অবসানে মরিয়া হয়ে ইউরোপীয় নেতারা ওবামার সমর্থনে একটা অস্বস্তিকর কিন্তু ঐতিহাসিক আপোস মীমাংসায় পৌঁছেন। এটা পুরোপুরি অভিনব কোন সিদ্ধান্ত নয়। তাদের এখন প্রয়োজন রাশিয়ার। প্যারিসে শুক্রবার আইএসের সন্ত্রাসের পর ফ্রান্সের সাবেক ও সম্ভাব্য ভবিষ্যত প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজি আইএস নির্মূলে এক নতুন সর্ব-সামগ্রিক আন্তর্জাতিক জোট গঠনের আহ্বান জানিয়েছে। তিনি বলেছেন, আইএস ধ্বংসের জন্য রাশিয়াসহ প্রত্যেককে আমাদের প্রয়োজন। সিরিয়ায় দুটি জোট নয়, মাত্র একটি জোট করতে হবে। ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ সোমবার পার্লামেন্টে ভাষণে রাশিয়াকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। ক্যামেরনও বলেছেন একই ধরনের কথা। তিনি পাশ্চাত্য সমর্থিত ফ্রি সিরিয়ান আর্মিকে লক্ষ্যবস্তু না করে আইএসের ওপর রুশ অভিযান চালানোর জন্য পুতিনের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি তাকে বলেন, সিরিয়ার ওপর একটি কাঠামোগত শান্তিচুক্তি ও অন্তর্বর্তী সময়ের ওপর সমঝোতায় প্রস্তুত ব্রিটেন। হোয়াইট হাউস বলেছে, ওবামা ও পুতিন সিরীয় নেতৃত্বাধীন ও সিরীয়দের দিয়ে রাজনৈতিক অন্তর্বর্তীকর্তৃপক্ষ গঠনের প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে সম্মত হয়েছেন। এ সবকিছুই পুতিনের জন্য এক কূটনৈতিক বিজয়। প্রথমত, তিনি পাশ্চাত্যের স্বীকৃতি অর্জন করলেন যে, সিরিয়ায় রুশ সামরিক বাহিনীর ভূমিকা বৈধ। পুতিন মঙ্গলবার বলেছেন, রুশ সামরিক অভিযান জোরদার করা হবে এবং দ্রুতই তিনি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ও দূরপাল্লার বোমারু বিমানের হামলা শুরু করে তার কথা রাখলেন। তিনি এখন অবাধ এবং তা ব্যবহার করছেন। তিনি বলেন, আইএস যেখানেই থাকুক তাদের খুঁজে বের করব আমরা। বিশ্বের যে কোন অংশে আমরা তাদের জন্য তল্লাশি চালাব এবং শাস্তি দেব।
×