ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দেশে ফেরত আসার আতঙ্ক

আর বাকি একদিন, ১১ লাখের বেশি প্রবাসী এমআরপি পায়নি

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ২৩ নভেম্বর ২০১৫

আর বাকি একদিন, ১১ লাখের বেশি প্রবাসী এমআরপি পায়নি

ফিরোজ মান্না ॥ আর মাত্র একদিন বাকি। একদিনে ১১ লাখের বেশি প্রবাসীর হাতে এমআরপি দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এখন এই বিপুলসংখ্যক প্রবাসী এমআরপি না পেয়ে আতঙ্কে রয়েছেন, কখন তাদের দেশে ফেরার ডাক পড়বে। ২৪ নবেম্বর পর্যন্ত তারা নিশ্চিন্ত থাকলেও পরের দিনগুলো কিভাবে কাটবে- সেই চিন্তায় তাদের দিন কাটছে। এমআরপি না পেলে তাদের দেশে ফিরে আসতে হবে। হাতে লেখা পাসপোর্ট নিয়ে প্রবাসে অবস্থান করতে পারবেন না কেউ। দীর্ঘসময় হাতে পেয়েও প্রবাসীদের হাতে এমআরপি তুলে দিতে না পারায় সরকারের ব্যর্থতাকেই দায়ী করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দু’একদিনের মধ্যে জরুরী বৈঠক করার কথা রয়েছে। কিন্তু নির্দিষ্ট সময় শেষ হয়ে গেলে বৈঠক করার কোন অর্থ থাকবে না বলে মনে করছেন জনশক্তি বিশেষজ্ঞরা। জনশক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কয়েক বছর ধরে বিদেশে কর্মী নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। তার ওপর যদি কয়েক লাখ প্রবাসী দেশে ফিরে আসেন তাহলে দেশের রেমিটেন্স প্রবাহও কমে যাবে। এত বেশি সংখ্যক প্রবাসী দেশে ফিরে এলে বেকারত্বের হার বেড়ে যাবে। তারা দেশে তেমন কোন কাজও করতে পারবেন না। বিদেশে যত ছোট কাজই করুক না কেন, দেশে তারা যে কোন কাজ করতে গেলে মানসিক সমস্যায় ভুগবেন। কারণ চক্ষুলজ্জা তাদের কোন কাজেই মনোযোগী করবে না। এমন এক জটিল অবস্থায় পড়ে অনেকে বিপথগামীও হতে পারেন। আবার অনেকে ব্যক্তিপর্যায় ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে বিদেশ গিয়েছিলেন। তাদের ঋণের দায় শোধ করতে পথে বসতে হবে। যদি আগে থেকেই সরকার এমআরপির বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দিতেন তাহলে আজকের পরিস্থিতিতে পড়তে হতো না। এখান থেকে উত্তরণের পথ বের না করা হলে এ জন্য চরম মূল্য দিতে হবে। গত বৃহস্পতিবার (৯ নবেম্বর) পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে বলেন, বিদেশে বাসরত ১১ লাখ ৩২ হাজার ৩৩৭ জনকে এখনও যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্ট (এমআরপি) দেয়া সম্ভব হয়নি। আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলমের এ সম্পর্কিত প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, বিদেশে মোট ৩৫ লাখ বাংলাদেশী আছেন। ৯ নবেম্বর পর্যন্ত বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসগুলো ২১ লাখ ১৫ হাজার ৯০১টি এবং আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে এক লাখ ৯৭ হাজার ২২২টি এমআরপি ছাপিয়ে নাগরিকদের দেয়া হয়েছে। ৫৪ হাজার ৫৪০টি পাসপোর্ট ছাপার অপেক্ষায় আছে। সূত্র জানিয়েছে, ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এ্যাভিয়েশন অর্গানাইজেশনের (আইকাও) বেঁধে দেয়া সময়সীমা অনুযায়ী ২৪ নবেম্বরের পর থেকে হাতে লেখা সনাতন পাসপোর্ট গ্রহণযোগ্য হবে না। আইকাওয়ের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের অনুরোধ নাকচ করে দিয়ে দুই বছর আগে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন এমআরপি দেয়ার সময়সীমা আর বাড়ানো হবে না। এখন আইকাওয়ের আর কিছু করার নেই। আইকাওয়ের এই জবাবের পর বাংলাদেশ বিষয়টির ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছিল। স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র, বেসামরিক বিমান পরিবহন এবং পর্যটন ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ওই ঘোষণার পর বেশ কয়েক দফা আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করে। আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকের পর বলা হযেছিল, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রবাসীদের হাতে এমআরপি তুলে দেয়া সম্ভব হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যখন পাসপোর্ট প্রবাসীদের হাতে পৌঁছে দিতে পারছে না তখন সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বিভিন্ন দূতাবাস বা হাইকমিশন থেকে পাসপোর্ট ছাপানোর। বিশ্বের ৬৯টি দেশে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস ও হাইকমিশনে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) ছাপানোর সিদ্ধান্তটিও পরে আর বাস্তবায়ন করা যায়নি। এজন্য সম্প্রতি বাংলাদেশ বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের একটি প্রতিনিধিদল সিঙ্গাপুর সফর করে এসেছেন। তারা সেখানে ভারত ও ইন্দোনেশিয়া কোন প্রক্রিয়ায় দূতাবাস বা হাইকমিশন থেকে পাসপোর্ট ছাপিয়ে তাদের নাগরিকদের হাতে দিচ্ছেন, সেই কার্যক্রম পরিদর্শন করেছেন। সফর শেষে বিষয়টি স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে উভয় মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে বসার কথাও ছিল। কিন্তু কোন উদ্যোগই বাস্তবায়ন করা হয়নি। ২৪ নবেম্বর প্রবাসীদের হাতে এমআরপি দেয়ার শেষ দিন। এই সময়ের মধ্যে প্রবাসীদের হাতে এমআরপি পৌঁছাবে না। এই দুইদিনে কত মানুষের হাতে পাসপোর্ট দেয়া যাবে তা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের কাছে কোন তথ্য নেই। ২৪ নবেম্বরের পর যাদের হাতে এমআরপি থাকবে না তাদের দেশে ফিরতেই হবে। এমন আশঙ্কার কথা জনিয়েছে, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দূতাবাস ও হাইকমিশন থেকে কিভাবে পাসপোর্ট ছাপানো হচ্ছে এটি পরিদর্শনে বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের মহাপরিচালক এনএম জিয়াউল আলমের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদল ২ থেকে ৫ নবেম্বর সিঙ্গাপুরে ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার পাসপোর্ট কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। এই দলে অন্য সদস্যরা ছিলেন, এমআরপি এবং এমআরভি প্রকল্পের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ মাসুদ রেজওয়ান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (কনস্যুলার ও কল্যাণ) মোঃ লুতফর রহমান, সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশনের কাউন্সিলর নিজাম উদ দৌলা, মোঃ নুরুন নবী, আয়শা সিদ্দিক শেলী ও মোঃ ফারুক হোসেন। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রবাসে ৮৮ লাখ বাংলাদেশী বসবাস করছেন। এর মধ্যে ৭৫ লাখের কিছু বেশি মানুষের এমআরপি দেয়া সম্ভব হয়েছে। বাকিদের এমআরপি এখনও হয়নি। এটা শ্রমবাজারের জন্য মারাত্মক হুমকি।
×