ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ছিটমহল বিনিময় জন্মভূমি ছেড়ে ভারতে চলে গেলেন আরও ১২০ জন

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ২৩ নভেম্বর ২০১৫

ছিটমহল বিনিময় জন্মভূমি ছেড়ে ভারতে চলে গেলেন আরও  ১২০ জন

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ রবিবার কুড়িগ্রাম সীমান্ত দিয়ে প্রথম দফায় দাশিয়ারছড়ার ৪৮ জন ও ছোট গাড়লঝোড়ার ২৩ জনসহ মোট ৭২ জন এবং পঞ্চগড়ের বিলুপ্ত ৫ ছিটমহলের ১৪টি পরিবারের ৪৮ জন ভারতের মাটিতে পা রাখেন। এছাড়া আগামী ২৪ ও ২৯ নবেম্বর কুড়িগ্রাম থেকে আরও দুই শ’ ৩৩ জন ভারতে ফিরে যাবেন। পঞ্চগড় জেলা থেকে তিন ধাপে যাবেন আরও চার শ’ ৩৪ জন। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতার। কুড়িগ্রাম ॥ জেলার বাগভান্ডার সীমান্ত দিয়ে রবিবার দুপুর পৌনে দুইটায় প্রথম দফায় ভারতের ট্রাভেল পাসধারী ৭২ নাগরিক ভারতে প্রবেশ করেছেন। আগামী ২৪ এবং ২৯ নবেম্বর আরও ২৩৩ জন ভারতীয় নাগরিক তাদের মূল ভূখ-ে ফিরে যাবেন। তাদের দীর্ঘ দিনের অপেক্ষার পালা শেষ হলো। শুরু হলো নতুন দেশে নতুন জীবন। তবে অনেক সুখস্মৃতি রয়ে গেল বাংলাদেশে। ভাঙ্গা হৃদয় আর গগনবিদারী কান্নার রোল পড়ে গিয়েছিল পুরো এলাকায়। বাপ দাদার ভিটেমাটি চিরতরে ফেলে রেখে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি করে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ির বিলুপ্ত ছিটমহল দাশিয়ারছড়ার ১০ পরিবারের ৪৯ জন নারী-পুরুষ ও শিশু কালিরহাট বাজারের পাশে মাদ্রাসা মাঠে জড়ো হয়ে তারা তাদের মূল ভূ-খ- ভারতে চলে যান। সেদেশের নাগরিকত্ব গ্রহণকারী ৪৯ জন রবিবার সকালে তাদের মালামালসহ কালিরহাট মাদ্রাসা মাঠ থেকে বাস ও ট্রাকযোগে ভূরুঙ্গামারীর বাগভা-ার পৌঁছেন। একইভাবে ভূরুঙ্গামারীর ছোট গাড়লঝোড়ার ৫ পরিবারের ২৩ জন মালামাল নিয়ে বাগভা-ার সীমান্তে পৌঁছেন। এ সময় তাদের তদারকি করেন ভারতীয় দূতাবাসের কর্মকর্তা অভিজিত রায়, ফারুক আজম ও অরূপ চক্রবর্তী। বাগভা-ার সীমান্তে এসব ভারতীয় নাগরিকদের বিদায় অভ্যর্থনা জানান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) রফিকুল ইসলাম সেলিম, ৪৫ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল জাকির হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহাব উদ্দিন, ভূরুঙ্গামারী ইউএনও মামুন ভূইয়া, ফুলবাড়ীর ইউএনও নাসির উদ্দিন মাহমুদ, নাগেশ্বরীর ইউএনও আবু হায়াত মোঃ রহমত উল্লাহ, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সোলেহ মারফ, নবি নেওয়াজ, ওসি জিয়া লতিফ, সাবেক ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা প্রমুখ। তারা মিষ্টি খাইয়ে এবং ফুল ও বিভিন্ন উপহার সামগ্রী দিয়ে ৭২ জন ভারতীয় নাগরিককে বিদায় জানান। ভারতের সাহেবগঞ্জ সীমান্তের অভ্যন্তরে তাদের এই নতুন নাগরিকদের বরণ করতে প্যান্ডেল সাজানো হয়েছে। তারাও ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে বরণ করে নেন। এ সময় ভারতের কোচবিহার জেলার ডিএম শ্রী পিউল গানাথন, ১০১ সাহেবগঞ্জ কোম্পানি কমান্ডার অনিন্দ্য ঘোষসহ সরকারী কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পঞ্চগড় ॥ অশ্রুসজল নয়নে বিদায় নিয়ে চিরদিনের জন্য চলে গেলেন পঞ্চগড়ের বিলুপ্ত ৫ ছিটমহলের ১৪টি পরিবারের ৪৮ জন। রবিবার সকাল সাড়ে ন’টায় পঞ্চগড় জেলা প্রশাসনের পক্ষে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ গোলাম আযম বোদা উপজেলার কাজলদীঘি কালিয়াগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ চত্বর থেকে এসব নতুন ভারতীয়কে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় জানান। ভারতের বাংলাদেশস্থ হাইকমিশনের প্রথম সচিব রামাকান্ত গুপ্তা সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করেন। নীলফামারী ॥ দীর্ঘ ৬৮ বছর বন্দী জীবনের মুক্তির পর অনেক জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে নীলফামারীর ডোমার উপজেলার চিলাহাটি ওপারের হলদিবাড়ি অভিবাসন সীমান্ত দিয়ে ভারতের মাটিতে পা রাখেন পঞ্চগড়ের বিলুপ্ত ছিটমহলের ১৪ পরিবারের নারী পুরুষ ও শিশুসহ ৪৮ জন। এই অভিবাসন পথে এটিই প্রথম দল। ৪৮ জনের মধ্যে ২৯ জন ছিল পুরুষ ও ১৯ ছিল নারী। রবিবার বিকেল ৩টায় চিলাহাটিÑহলদিবাড়ি সীমান্তপথেই বাংলাদেশের প্রশাসনের দেয়া দুইটি বাসে চেপে ও মালামাল পরিবহনের তিনটি ট্রাকসহ তারা ভারতের সীমান্তে প্রবেশ করেন। লালমনিরহাট ॥ কাগজপত্রে ভুলত্রুটি থাকায় ১৯ নবেম্বর প্রথম ব্যাচের সঙ্গে চারজন সদ্য বিলুপ্ত ছিটমহলের বাসিন্দা ভারতীয় নাগরিকতা প্রাপ্ত ট্রাভেল পাসধারী ভারত যেতে পারেননি। তাদের ভারতে যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বৃহস্পতিবার ৬৭ জন লালমনিরহাট বুড়িমারী ইমেগ্রেশন রুট দিয়ে দুপুরের পর (সদ্য নাগরিকত্ব নিয়ে) ভারতে যাবার কথা ছিল। কিন্তু ভারতে গেছেন ৬২ জন। এদের মধ্যে সদ্য জন্ম নেয়া একটি শিশু রয়েছে। তবে বৈবাহিক সূত্রে স্বামীর সঙ্গে একজন নারী ভারতে যেতে পারেননি। তাই স্বামী-স্ত্রী দুই জনেই ভারতে না গিয়ে ফিরে আসেন। কাগজপত্রে ভুল থাকার কারণে যে, চারজন ভারতে যেতে পারেননি। এরা হলেন কৃষ্ণ চন্দ্র বর্মণ তার স্ত্রী সুচিরিতা রানী, গোপাল চন্দ্র । মহুবার রহমান ট্রেভেল পাস পেয়েও আসেননি। ১৯ নবেম্বর ৬৭ জনের মধ্যে ৫ জন ভারতে যেতে পারেননি। গিয়েছেন ৬২ জন।
×