ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রিয়ালকে লজ্জা দিল বার্সিলোনা

প্রকাশিত: ০৬:০১, ২৩ নভেম্বর ২০১৫

রিয়ালকে লজ্জা দিল বার্সিলোনা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ রীতিমতো নাকাল হওয়া আর কি। মৌসুমের প্রথম এল ক্ল্যাসিকোতে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদকে তাদেরই মাঠে নাকানি-চুবানি খাইয়েছে বার্সিলোনা। শনিবার রাতে সান্টিয়াগো বার্নাব্যুতে অনুষ্ঠিত ম্যাচে রিয়ালকে ৪-০ গোলে নাস্তানাবুদ করে অতিথি বার্সা। কাতালানদের জয়ে যথারীতি আলো ছড়িয়েছেন দুর্দান্ত ফর্মে থাকা দুই তারকা নেইমার ও লুইস সুয়ারেজ। ব্রাজিলিয়ান অধিনায়ক এক গোল করা ছাড়াও গোটা ম্যাচে ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। আর উরুগুইয়ান ফরোয়ার্ড করেন জোড়া গোল। কাতালানদের অপর গোলদাতা অধিনায়ক আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা। রিয়ালকে বিধ্বস্ত করে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষস্থান আরও মজবুত করেছে বার্সা। ১২ ম্যাচ শেষে সর্বোচ্চ ৩০ পয়েন্ট ভা-ারে বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের। আর টানা দুই হারে আগের ২৪ পয়েন্টই রিয়ালের। সাম্প্রতিক সময়ে সুয়ারেজ-নেইমারের দুর্দান্ত পারফর্মেন্স ইনজুরি আক্রান্ত লিওনেল মেসির অভাবকে মোটেই অনুভব করতে দেয়নি। এই ম্যাচেও তার ব্যতিক্রম ছিল না। আর্জেন্টাইন তারকা দীর্ঘ দুই মাস পর মাঠে ফিরলেও কোচ লুইস এনরিকে তাকে বদলি বেঞ্চে বসিয়ে রাখেন। কারণ একটাই নেইমার ও সুয়ারেজের দুর্দান্ত জুটি। যদিও ৫৭ মিনিটে ইভান রাকিটিচের বদলি হিসেবে মাঠে নেমে প্রতীক্ষার অবসান ঘটান আর্জেন্টাইন তারকা। আর মাঠে নেমেই নিজে গোল করতে না পারলেও সুয়ারেজের দ্বিতীয় ও দলের চতুর্থ গোলের কারিগর হিসেবে কাজ করেন। সম্প্রতি প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলার কারণে নিরাপত্তা ইস্যুতে পুরো ম্যাচকে ঘিরে বাড়তি সতর্ক ছিল নিরাপত্তাকর্মীদের। প্যারিসের হামলায় নিহতদের স্মরণে ম্যাচটি শুরুর আগে ফ্রান্সের জাতীয় সঙ্গীতের পাশাপাশি এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। মাদ্রিদ সমর্থকরাও বিশাল ফরাসী পতাকা নিয়ে গ্যালারিতে এসেছিলেন, যা ম্যাচে বাড়তি আবহ তৈরি করে। কিন্তু ম্যাচের শুরু থেকেই বার্সার দাপটে খেই হারিয়ে ফেলে রিয়াল। মেসির অনুপস্থিতিতে সার্জি রবার্টোর ওপরই আস্থা রেখেছিলেন এনরিকে। আর কোচের এই আস্থার দারুণ প্রতিদান দিতেও ভুল করেননি স্প্যানিশ এই ২৩ বছর বয়সী মিডফিল্ডার। সার্জিও বসকুয়েটসের পাস থেকে মাদ্রিদ রক্ষণভাগকে ফাঁকি দিয়ে সুয়ারেজকে খুঁজে পায় বল। আর তা থেকেই ১১ মিনিটে প্রথম গোল করেন উরুগুইয়ান তারকা। ফরাসী সতীর্থ ম্যাথিউ ভালবুয়েনাকে যৌন হয়রানির অপরাধে রিয়াল তারকা করিম বেনজামার বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপনের পর প্রথমবারের মত মাঠে নামেন তিনি। ছয় সপ্তাহের অনুপস্থিতিতে বেনজামার পারফর্মেন্সেরও ধার কমেছে, সেটা প্রমাণ হয়েছে বারবার। জেরেমি ম্যাথিউর ভুলের সুযোগে গোলের সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করে রিয়ালকে সমতায় ফেরাতে পারেননি তিনি। বিরতির আগে ইনিয়েস্তার বাড়ানো বল থেকে ৩৯ মিনিটে নেইমার ব্যবধান দ্বিগুণ করলে বার্সিলোনা আরও এগিয়ে যায়। বিরতির পর স্বাগতিকরা কিছুটা হলেও ছন্দ ফিরে পায়। জেমস রড্রিগুয়েজের দুর্দান্ত একটি প্রচেষ্টা বার্সা গোলরক্ষক ক্লডিও ব্রাভো কোনরকমে রক্ষা করেন। কিন্তু ৫৩ মিনিটে নেইমারের ব্যাকহিল পাসে ইনিয়েস্তার গোল রিয়ালের সব আশা শেষ করে দেয়। এরপর মেসির সহযোগিতায় নেইমারের কাছ থেকে ৭৪ মিনিটে সুয়ারেজ কেইলর নাভাসকে পরাস্ত করলে লজ্জার হার নিশ্চিত হয় রিয়ালের। চার গোলের লজ্জার হারের ম্যাচে রিয়ালের জন্য আরও দুঃসংবাদ বয়ে নিয়ে আসে ইস্কোর লালকার্ড। ম্যাচ শেষের ছয় মিনিট আগে সরাসরি লালকার্ড পান তিনি। ম্যাচ শেষে বার্সা কোচ লুইস এনরিকে বলেন, এমন একটি ম্যাচ আমরাও প্রত্যাশা করিনি। পুরো ম্যাচেই আমরা এগিয়ে ছিলাম, শুধু গোলের দিক থেকে নয় বিভিন্নভাবেই আমরা রিয়ালের ওপর দাপট দেখিয়েছি। রক্ষণভাগেও আমরা শক্ত ছিলাম। মাদ্রিদের ভুলের থেকে আমাদের দক্ষতাই বেশি চোখে পড়েছে। রিয়াল কোচ রাফায়েল বেনিতেজ বলেন, আসলেই আমরা সমর্থকদের হতাশ করেছি। পরাজয় সবসময়ই হতাশার, বিশেষ করে এই ধরনের হার কেউই মেনে নিতে পারে না। পরবর্তী ম্যাচের আগে মানসিকভাবে স্বাভাবিক হয়ে ওঠাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। অধিনায়ক ইনিয়েস্তা অবশ্য মাটিতেই পা রাখছেন। তিনি বলেন, ছয় পয়েন্ট এগিয়ে আছি আমরা। কিন্তু এখনও লম্বা পথ পাড়ি দিতে হবে এবং কিছুই চূড়ান্ত হয়নি।
×