ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধী বিচার;###;সাক্ষী শাহ আলমের জবানবন্দী

রাজাকার শামসুদ্দিন আমার বন্ধু পরেশকে গুলিতে হত্যা করে

প্রকাশিত: ০৫:১০, ২৪ নভেম্বর ২০১৫

রাজাকার শামসুদ্দিন আমার বন্ধু পরেশকে গুলিতে হত্যা করে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের দুই সহোদর এটিএম নাসির আহম্মদ ও শামসুদ্দিন আহম্মদসহ ৫ রাজাকারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ১০ম সাক্ষী মোঃ শাহ আলম ও ১১তম সাক্ষী মোঃ মাহাতাব উদ্দিন জবানবন্দী প্রদান করেছেন। জবানবন্দীতে মোঃ শাহ আলম বলেছেন, শামসুদ্দিন আহম্মদ আমার বন্ধু পরেশকে গুলি করে হত্যা করেছে। অন্য ১১তম সাক্ষী মোঃ মাহাতাব উদ্দিন তার জবানবন্দীতে বলেছেন, রাজাকাররা আমার ভাই ফজলুল হককে ধরে নেয়ার পর আজ পর্যন্ত তাকে পাওয়া যায়নি। আসামি শামসুদ্দিন পরেশকে গুলি করে হত্যা করেছে। জবানবন্দী শেষে রাষ্ট্র নিয়োজিত আইনজীবী সাক্ষীদের জেরা করেন। পরবর্তী সাক্ষীর জন্য ২৯ নবেম্বর দিন ধার্য করা হয়েছে। অন্যদিকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে কক্সবাজারের বিএনপি নেতা সালামত উল্লাহ খানসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরামাল চার্জ) ১৩ জানুয়ারি দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। প্রসিকিউটরের দেড় মাস সময়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ সোমবার এ আদেশ প্রদান করেছেন। ট্রাইব্যুনালে অন্য দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি মোঃ শাহীনুর ইসলাম ও বিচারপতি মোঃ সোহরাওয়ার্দী। কিশোরগঞ্জের মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণে সাহায্য করেন প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন ও প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন। পরে আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আব্দুস শুকুর খান সাক্ষীদের জেরা শেষ করেন। কিশোরগঞ্জের মামলায় প্রসিকিউশনের ১০ম সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেন, আমার নাম মোঃ শাহ আলম। আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৬৩ বছর। আমার ঠিকানা গ্রাম- গুজারদিয়া রামনগর, থানা- কমিরমগঞ্জ, জেলা-কিশোরগঞ্জ। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি করিমগঞ্জ পাইলট হাইস্কুলে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র ছিলাম। ১৯৭৪ সালে ঐ স্বুল থেকে আমি এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলাম। ঐ স্কুলে ১৯৭০ সালে আসামি শামসুদ্দিন আহম্মদ দশম শ্রেণীতে পড়াশুনা করত, আমি তাকে চিনতাম। একাত্তরের ৭ সেপ্টেম্বর সকাল আনুমানিক ১০টার দিকে আমার বন্ধু পরেশকে নিয়ে আমার বাড়ির সামনে নদীর পাড়ে রাস্তার ধারে বসে কথা বলছিলাম। এর আনুমানিক পাঁচ মিনিট পর পরেশ সেখান থেকে কাজ করার জন্য চলে যায়। পরেশের বাড়ি এবং আমাদের বাড়ি কাছাকছি। পরেশ চলে যাওয়ার আনুমানিক ৫ মিনিট পর আসামি শামসুদ্দিন আহম্মদ কয়েকজন রাজাকার নিয়ে আমার নিকট আসে। ঐ সময় রাজাকারদের সঙ্গে একজন বৃদ্ধ লোকের মাথায় গুলির বাক্স ছিল। তখন রাজাকাররা তার সঙ্গে থাকা গুলির বাক্সটি আমার মাথায় দিয়ে ঐ বৃদ্ধ লোকটিকে ছেড়ে দেয়। আমাকে নিয়ে সামনের দিকে আগাতে থাকে। সাক্ষী তার জবানবন্দীতে আরও বলেন, আনুমানিক দুই মিনিট হাটার পরে আমার বন্ধু পরেশের বাড়ির সামনে যাই। সেখানে গিয়ে পরেশকে ডাটা ক্ষেত নিরাইতে দেখি। তখন আসামি শামসুদ্দিন আহম্মদ পরেশকে বলে ‘এই দিকে আয়।’ তখন পরেশ আসামি শামসু্িদ্দন আহম্মদের নিকট আসার পর উক্ত আসামি তাকে জিজ্ঞাসা করে, তোর নাম কি? তখন পরেশ তাকে বলে আপনি আমার নাম জানেন না। তখন আসামি শামসুদ্দিন আহম্মদ তাকে বলে, ‘এই শালা মালাউন, আমি তোর নাম জানব কি করে? তখন আমি দেখতে পাই আসামি শামসুদ্দিন আহম্মদ তার হাতে থাকা রাইফেল দিয়ে আমার বন্ধু পরেশকে বুকে গুলি করে। সে মাটিতে পড়ে যায়। তখন আমি ভয়ে কাঁপছিলাম। কিছুক্ষণ পরে আমার বন্ধু পরেশ মারা যায়। অন্যদিকে প্রসিকিউশনের ১১তম সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেন, আমার নাম মোঃ মাহতাব উদ্দিন। আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৬২ বছর। আমার ঠিকানা গ্রাম-আতকাপাড়া, থানা-করিমগঞ্জ, জেলা-কিশোরগঞ্জ। আমি গুজাদিয়া শিমুলতলা উচ্চ বিদ্যালয়ে অফিস সহকারী হিসেবে অবসর গ্রহণ করি। একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলাম। ১৯৭০ সালে আমরা পাঁচ ভাই আট বোন ছিলাম। আমার ভাইদের মধ্যে বড় ছিলেন শহীদ ফজলুর রহমান। ১৯৭১ সালের ২৩ আগস্ট সকাল আনুমানিক ১০টার দিকে আমার বড় ভাই ফজলুর রহমান আমার ছোট ভাই মোঃ বজলুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে করিমগঞ্জ বাজারে একটি দর্জির দোকানে শার্ট কেনার জন্য যায়। এ সময় রাজাকাররা আমার বড় ভাইয়ের শরীর তল্লাশি করে এবং ডাকবাংলোতে নিয়ে যায়। সাক্ষী আরও বলেন, ডাকবাংলোতে গিয়ে দেখি সেখানে আসামি গাজি আব্দুল মান্নান চেয়ারে বসা রয়েছে। পাশে আমার বড় ভাই ফজলুর রহমান। তার গায়ে নির্যাতনের চিহ্ন। তখন আমার ভাই জানান, রাজাকার আজহারুল আমাকে চিনিয়ে দেয়। এক পর্যায়ে আমার বাবা আসামি আজহারুল ইসলামের বাবা রহিম মৌলভীর বাসায় নিয়ে যায়। রহিম মৌলভী জানান, টাকা দিলে তার ভাইকে ছেড়ে দেয়া হবে। এক পর্যায়ে আমরা জমি বিক্রি করে টাকা নিয়ে রহিম মৌলভীর কাছে যাই। কিছুক্ষন পরে তারা এসে বলে ফজলুর রহমানকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এর পর আমরা বাড়িত চলে আসি। আজ পর্যন্ত আমার ভাইকে আর পাইনি।
×