ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘সাচ্চা বন্ধু’ মুজাহিদের ফাঁসিতে ক্ষুব্ধ পাকি জামায়াত

প্রকাশিত: ০৭:৫৬, ২৪ নভেম্বর ২০১৫

‘সাচ্চা বন্ধু’ মুজাহিদের ফাঁসিতে ক্ষুব্ধ পাকি জামায়াত

বিডিনিউজ ॥ মুজাহিদকে ‘পাকিস্তানের সাচ্চা বন্ধু’ অভিহিত করে একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের শাস্তি হিসেবে তার ফাঁসিতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তান। একাত্তরে পাকিস্তানের প্রতি আনুগত্য স্থাপনকারী ব্যক্তিদের বিচার ঠেকাতে ইসলামাবাদকে পদক্ষেপ নিতেও উস্কানি দিয়েছেন দলটির আমির সিরাজুল হক। একাত্তরে পাক বাহিনীর দোসর হয়ে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের নকশাকার মুজাহিদকে আদালতের রায় বাস্তবায়ন করে ফাঁসিতে ঝোলানোর পর খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে এক জনসভায় সিরাজুল হক ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান বলে পাকিস্তানের প্রভাবশালী সংবাদপত্র ডনের খবরে বলা হয়েছে। পাকি জামায়াত প্রধান বলেন, ‘আজকের দিনটি একটি কালো দিন, কারণ এই দিনে ঢাকায় পাকিস্তানের এক সাচ্চা বন্ধুকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছে।’ যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে উঠে এসেছে, ‘ধর্মের ভিত্তিতে গঠিত পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষায়’ আলবদর বাহিনী গঠন করে জামায়াতসহ ইসলামী ছাত্রসংঘের নেতাকর্মীরা বুদ্ধিজীবী হত্যায় মেতে ওঠে, যার নেতৃত্বে ছিলেন মুজাহিদ। মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আগেও সিরাজুল হক বাংলাদেশে ‘ভারতের মদদপুষ্ট’ সরকারের হাত থেকে মুজাহিদকে বাঁচাতে পাকিস্তানে দোয়া দিবসের কর্মসূচী দিয়েছিলেন। কাদের মোল্লা ও কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পরও একই ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল পাকিস্তান জামায়াত। যুদ্ধাপরাধীদের গুরু গোলাম আযমের আমৃত্যু কারাদণ্ডেও তাদের একই প্রতিক্রিয়া আসে। পাকিস্তানের প্রতি আনুগত্যের কারণে বর্তমান সরকার যুদ্ধাপরাধের ‘নামে’ তাদের শাস্তি দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘যারা পাকিস্তানের আদর্শে বিশ্বাসী ছিল এবং পূর্ব পাকিস্তানের আলাদা হওয়ার বিরোধিতা করেছিল, তাদেরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হত্যা করছে।’ একাত্তরে জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তানের শাখা ছিল গোলাম আযম নেতৃত্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান জামায়াত। তারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতায় নামার পাশাপাশি তাদের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের নেতাকর্মীদের নিয়ে গঠন করেছিল আলবদর বাহিনী, যার নেতা ছিলেন মুজাহিদ। স্বাধীনতার পর ধর্মনিরপেক্ষ নতুন দেশে জামায়াতসহ ইসলামী নিষিদ্ধ হলেও পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ নামে রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হয়। মুজাহিদ পরে বাংলাদেশের মন্ত্রীও হন। তবে একাত্তরে ভূমিকার জন্য কখনও দলটি ক্ষমা চায়নি, বরং দলটির নেতারা দম্ভের সঙ্গে বলেছিলেন, একাত্তরে তাদের অবস্থান ‘সঠিক’ ছিল। মুজাহিদ বলতেন, বাংলাদেশে কোন যুদ্ধাপরাধী নেই। অন্যদিকে যুদ্ধাপরাধের বিচারে পাকিস্তান থেকে বিরোধিতা এবং দণ্ডিতদের পক্ষে পাকিস্তানে বিবৃতি, গায়েবানা জানাজার দিকে ইঙ্গিত করে একাত্তরে গণহত্যার বিচার দাবির আন্দোলনকারীরা বলছেন, পাকিস্তানে প্রতিক্রিয়ায় দণ্ডিতদের ভূমিকা উন্মোচন করে দিচ্ছে। একাত্তরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে ‘সমর্থন দেয়া’ ব্যক্তিদের একের পর এক মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পরও ‘নীরব থাকায়’ দেশটির প্রধানমন্ত্রী নেওয়াজ শরিফ এবং সেনাপ্রধান জেনারেল রাফায়েল শরিফের সমালোচনা করেন জামায়াত নেতা সিরাজ। ডনের খবরে বলা হয়, জনগণ ‘উদার পাকিস্তান’ চেয়েছিল বলে প্রধানমন্ত্রী নেওয়াজ শরিফের দেয়া সম্প্রতি এক বিবৃতির সমালোচনা করে তাকে ভারত বা বাংলাদেশ চলে যাওয়ার পরামর্শ দেন সিরাজ। এই জনসভায়ই তিনি মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ডে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান সিরাজ। ‘যদি উদারতাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতা নেওয়াজ শরিফের এতই পছন্দ হয়ে থাকে, তাহলে তিনি ভারত বা বাংলাদেশে চলে যেতে পারেন। পাকিস্তানীরা জান দেবে, তবুও উদার ও ধর্মনিরপেক্ষ পাকিস্তান মেনে নেবে না।
×