ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পাকিস্তানের ঔদ্ধত্য

প্রকাশিত: ০৪:১৩, ২৫ নভেম্বর ২০১৫

পাকিস্তানের ঔদ্ধত্য

সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদ- এই জোড়া যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদ-ের রায় কার্যকর হওয়ার পর পাকিস্তান তার দীর্ঘকালের এ দুই মিত্রের জন্য ভারি কষ্ট পেয়েছে। তা তারা পেতেই পারে। কিন্তু এ জন্য কূটনৈতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘন করার সুযোগ নেই, অথচ দেশটি তাই করেছে। এমন কিছু বক্তব্য প্রকাশ করেছে যা রীতিমতো ঔদ্ধত্যপূর্ণ। পুরনো বন্ধুদের জন্য এর আগেও মায়াকান্নার নজির রেখেছিল পাকিস্তান। যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পরও উদ্বেগ জানিয়েছিল পাকিস্তান। ‘পাকিস্তানের প্রতি অনুগত এবং ১৯৭১ সালের যুদ্ধের সময় পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে সমর্থন করায়’ কাদের মোল্লাকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে দাবি করে সে সময় দেশটির পার্লামেন্টে একটি প্রস্তাবও গৃহীত হয়। তা নিয়ে বাংলাদেশে বিভিন্ন মহলের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার মধ্যে পাকিস্তানের হাইকমিশনারকে তলব করে ওই প্রস্তাব গ্রহণের কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছিল বাংলাদেশ সরকার। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। যুদ্ধাপরাধী সাকা-মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে উদ্বেগ প্রকাশ করে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতির পর দেশটির হাইকমিশনারকে তলব করে কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। একাত্তরে এদেশে নারকীয় গণহত্যা চালানোর পরও পাকিস্তানের ভেতর সামান্যতম অনুতাপ পরিলক্ষিত হয়নি, বরং বিভিন্ন সময় তারা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোর ঔদ্ধত্য দেখিয়েছে। পঁচাত্তরে জাতির জনককে হত্যার পর দীর্ঘকাল মূলত পাকিস্তানপন্থী শাসকরাই ক্ষমতা দখল করে রেখেছিল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে তারা একাত্তরে পরাজয়েরই প্রতিশোধ নেয়। ফলে এরপর থেকে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার আগ পর্যন্ত যখন যে সরকারই ক্ষমতায় এসেছে তারা ছিল পাকিস্তানের পরম মিত্র। স্বভাবতই পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী ভেবেছিল একাত্তরে সংঘটিত তাদের দোসরদের অপরাধ ধামাচাপা পড়ে গেছে। কৃতকর্মের জন্য তাদের দোসরদের কখনই আইনের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে না। কিন্তু সে গুড়েবালি। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকেই একাত্তরের দালালদের ঘুম হারাম হয়ে যায়। পরবর্তীকালে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে একাত্তরের ঘাতকদের বিচার শুরু হলে তাদের সঙ্গে তাদের প্রভু পাকিস্তানও নড়েচড়ে বসে। এরপর একের পর এক যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি হওয়ায় পাকিস্তান আর নিশ্চুপ থাকতে পারেনি। সাম্প্রতিক প্রতিক্রিয়া তারই বহির্প্রকাশ। মনে রাখতে হবে, পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের ন্যায্য প্রাপ্যের বিষয়টি এখনও নিষ্পত্তি হয়নি। এখন কড়ায়-গ-ায় সে হিসাব আদায়ের জোরালো দাবি তুলতে হবে। দীর্ঘ সাড়ে চার দশক ধরে বাংলাদেশে আটকেপড়া পাকিস্তানীদের মানবিক কারণে বাংলাদেশ আশ্রয় দিয়ে এসেছে। আর কতকাল এভাবে চলবে? এখন তাদের ফিরিয়ে নিতে হবে। পাকিস্তানের কাছ থেকে ন্যায্য হিস্যা আদায়ে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সম্প্রতি সংসদে তিনি জানান, ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ের পর বৈদেশিক সাহায্য হিসেবে পাওয়া ২০০ মিলিয়ন ডলারসহ ৪ দশমিক ৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ সম্পদের ন্যায্য হিস্যার দাবি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। পাকিস্তানের কাছ থেকে বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যা আদায়ে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে ও থাকবে। দেশবাসী আশা করে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বক্তব্য প্রকাশে পাকিস্তান সর্বদা সতর্ক ও সংযত থাকবে। কখনই যেন তারা অতীত বিস্মৃত না হয়। একই সঙ্গে আটকেপড়া পাকিস্তানীদের ফিরিয়ে নিতেও তাদের উদ্যোগী হতে হবে।
×