ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মাশরাফির ব্যাটে জয় কুমিল্লার

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ২৫ নভেম্বর ২০১৫

মাশরাফির ব্যাটে জয় কুমিল্লার

মিথুন আশরাফ ॥ মোহাম্মদ আমির বল ছুড়লেন। জায়গা বের করে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে দিলেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। বাউন্ডারি নিশ্চিত হতেই সেই যে দৌড় শুরু করলেন, শেষ হল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের ড্রেসিংরুমের সামনে গিয়ে। সঙ্গে সঙ্গে মাশরাফিকে সবাই কোলে তুলে নিলেন। নাচতে থাকলেন। বোঝাই যাচ্ছে, কুমিল্লা জিতে গেছে। চিটাগাং ভাইকিংসকে ৭ উইকেটে হারিয়েছে কুমিল্লা। বিপিএলে নিজেদের প্রথম জয়ও তুলে নিয়েছে। সেই জয়ে যিনি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেন, তিনি মাশরাফি। ৩২ বলে ৪টি চার ও ৩টি ছক্কা মেরে অপরাজিত ৫২ রান করলেন। সেই রানটি আবার আসল পাঁচ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে! ম্যাচে টস জিতে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স আগে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেয়। চিটাগাং ভাইকিংস ব্যাটিংয়ে নেমে ২০ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ১৭৬ রান করে। জিয়াউর রহমান ও এনামুল হক বিজয় অপরাজিত ৩৯ রান করে নেন। তিলকারতেœ দিলশান ৩৬, তামিম ইকবাল ৩৩, ইয়াসির আলী ২২ রান করেন। আসহার জাইদি ২ উইকেট নেন। জবাবে ৭ বল বাকি থাকতে ৩ উইকেট হারিয়ে ১৭৭ রান করে জিতল কুমিল্লা। মারলন স্যামুয়েলস ৫২ বলে ৮ চার ও ১ ছক্কায় অপরাজিত ৬৯, মাশরাফি অপরাজিত ৫৬, শুভগত হোম চৌধুরী ৩০ রান করেন। মোহাম্মদ আমির ২ উইকেট নেন। দলের ৫৪ রানের সময় শুভগত আউট হলেন। তখন ব্যাট হাতে নেমে গেলেন মাশরাফি। সবাই আশ্চর্য! এ কি সত্যই মাশরাফি! শেষ পর্যন্ত তাই সত্য হল এবং প্রথমবারের মত টি২০তে অর্ধশতক করলেন, ম্যাচও শেষ পর্যন্ত জিতিয়ে মাঠ ছাড়লেন। এমনই অবস্থা ‘ধুর কাউকে দিয়ে হবে না, আমাকেই যা করার করতে হবে।’ তাই করলেন মাশরাফি। চিটাগাং ভাইকিংসের মতো শুরুটা কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়নি। দলের ৫ রানের সময়ই রানের খাতা খোলার আগে ইমরুল কায়েস আউট হয়ে যান। আর ৫ রান স্কোরবোর্ডে যোগ হতেই লিটন কুমার দাসও (৯) সাজঘরে ফেরেন। মোহাম্মদ আমির ঝলসে ওঠেন। মুহূর্তেই ইমরুল ও লিটনকে আউট করে দেন আমির। মনে হচ্ছিল কুমিল্লা টানা দ্বিতীয় হারটি বোধহয় পেতে যাচ্ছে। তখনই একটি জুটির দেখা মিলে। তবে সেটিও খুব বেশিদূর যায়নি। ৪৪ রানের জুটি হয়। মারলন স্যামুয়েলস ও শুভগত হোম চৌধুরী জুটিটি গড়েন। তবে এ সময়ে একটি ঘটনা ঠিকই ঘটে। খাদের কিনারায় পড়ে যাওয়া দলটিকে উতরে তোলার কাজটি করেন এই দুই ব্যাটসম্যান। বিশেষ করে শুভগত। ১৬ বলে ৪ চার ও ২ ছক্কায় দ্রুতই ৩০ রান নিয়ে নেন শুভগত। চতুর্থ ও পঞ্চম ওভারে যতগুলো ছক্কা, চার হয়েছে সবগুলো শুভগত’র ব্যাট থেকে এসেছে। তাসকিন আহমেদের করা চতুর্থ ওভারে তিনটি চার ও শফিউল ইসলামের করা পঞ্চম ওভারে দুই ছক্কা, এক চার হাঁকান শুভগত। দলের ৫৪ রানের সময় শুভগত আউট হয়ে যান। তখন দলে ম্যাচ জেতানোর মত ব্যাটসম্যান বলতে ছিলেনই না। কিন্তু সবাইকে আশ্চর্য করে দিয়ে ব্যাট হাতে নেমে গেলেন মাশরাফি বিন মর্তুজা! এটা চমকই। সেই যে শুরু হল কুমিল্লার চমক তা শেষ পর্যন্ত বজায় থাকল। স্যামুয়েলস ও মাশরাফি মিলে ম্যাচই জিতিয়ে দিলেন। সবচেয়ে বড় বিষয়, মাশরাফি যে দায়িত্ব নিয়ে ব্যাটিং করলেন; তা সবাইকেই অবাক করেছে। ব্যাটসম্যান মাশরাফিকেই সবাই দেখতে পেল। স্যামুয়েলস পরীক্ষিত ব্যাটসম্যান। তার কাছ থেকে ম্যাচ জয় বড় ইনিংসও সবাই আশা করে। তাই বলে মাশরাফি নিজেই ৫ নম্বরে নেমে গিয়ে এত বড় ইনিংস খেলে দেবেন। সেটি ম্যাচ জয়ী ইনিংস হয়ে যাবে। তাই হল। কয়েকটি ক্যাচ থেকে মুক্তি পেয়ে বাউন্ডারির পর বাউন্ডারি হাঁকিয়ে দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে গেলেন। তার বাউন্ডারিতেই শেষ পর্যন্ত জয়ও পেল কুমিল্লা। চতুর্থ উইকেটে গিয়ে যে এই দু’জন মিলে ১২৩ রানের জুটি গড়লেন তা বিপিএলে রেকর্ড। এর আগে বিপিএলের দ্বিতীয় আসরে নাসির ও নেইল ও’ ব্রেইন রংপুর রাইডার্সের হয়ে ঢাকার বিপক্ষে যে চতুর্থ উইকেটে ১১৮ রানের জুটি গড়েছিলেন তা এ উইকেটে রেকর্ড ছিল। মাশরাফি-স্যামুয়েলস মিলে সেই রেকর্ড ভেঙ্গে নতুন রেকর্ড গড়েন। শেষে জিততে ১২ বলে ১২ রানের প্রয়োজন থাকে। ৭ বল বাকি থাকতেই খেলা শেষ হয়ে যায়। শুরুতে ভালই খেলে চিটাগাং ভাইকিংস। মাঝপথে ছন্নছাড়া হয়ে পড়ে। শেষে গিয়ে আবারও দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখায়। তামিম ইকবাল ও তিলকারতেœ দিলশান মিলে উদ্বোধনী জুটিতেই ৬৩ রান যুক্ত করেন। এমন সময়ে দিলশান আউট হয়ে যান। ১২৩ রানের মধ্যেই তামিম, চামারা কাপুগেদারা, ইয়াসির আলী আউট হয়ে যান। ততক্ষণে ১৫.৪ ওভারও শেষ হয়। দল বিপত্তির মধ্যে পড়ে যায়। হঠাৎ করেই সেই বিপত্তি দূর হয়ে যায়। জিয়াউর ব্যাট হাতে নেমে শেষে যে বাউন্ডারি হাঁকাতে থাকেন তাতেই চিটাগাং আবারও প্রাণ ফিরে পায়। ১৮ ওভার পর্যন্ত চিটাগাংয়ের স্কোরবোর্ডে ১৩৮ রান পর্যন্ত জমা থাকে। পরের ২ ওভারেই ৩৮ রান এসে পড়ে। ১৯তম ওভারে জিয়া একাই তিন ছক্কা হাঁকান। সঙ্গে একটি বাউন্ডারিও মারেন। আর ১টি রান দৌড়ে নেন। এই ওভারে জিয়া একাই নেন ২৩ রান। বিজয়ের ব্যাট থেকে আসে আরও ৩টি রান। এক ওভারেই ২৬ রান আসে। এতেই দল মুহূর্তেই ১৬৪ রানে পৌঁছে যায়। শেষ ওভারে আরও ১২টি রান আসে। শেষ ২ ওভারেই মূলত চিটাগাংয়ের স্কোরবোর্ডে গতি এসে যায়। স্কোরবোর্ডও অনেক মজবুত হয়ে যায়। জিয়াউর ও বিজয় দু’জনই ৩৯ রান করে নিয়ে অপরাজিত থাকেন। তবে তা কাজে লাগেনি। মাশরাফি দুর্দান্ত ব্যাটিং করে কুমিল্লাকে যে জিতিয়ে দেন।
×