ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

১০ প্রজন্ম পর মশা প্রাকৃতিকভাবে ম্যালেরিয়ারোধী হবে

ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে মশার জিন পরিবর্তন

প্রকাশিত: ০৩:৫৯, ২৬ নভেম্বর ২০১৫

ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে মশার জিন পরিবর্তন

ম্যালেরিয়া বাহিত মশার কারণে প্রতি বছর ৬ লাখের বেশি মারা যায়। যাদের বেশিরভাগই শিশু। শত শত বছর ধরে মশাবাহিত রোগের বিরুদ্ধে শত শত বছর ধরে মানুষ লড়ছে। তা সত্ত্বেও নির্মূল হয়নি ম্যালেরিয়া। ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির ইরভিন ক্যাম্পাসের একটি বেসমেন্টে পর পর পাঁচটি দরজা দিয়ে সুরক্ষিত গবেষণাগারে বিজ্ঞানীরা রূপকথার গল্পের সেই মশাকেই বাস্তবে রূপ দিলেন যা ম্যালেরিয়া নির্মূলে সহায়তা করবে তারা আশা করছেন। এ মশাগুলো জন্মাতে দুটি জিনগত রূপান্তর ঘটানো হয়েছে। এ জিনগুলো মশার দেহে ম্যালেরিয়া পরজীবীকে বাসা বাঁধতে বাধা দেবে। ফলে এই মশা দিয়ে ম্যালেরিয়া ছড়াবে না। এরপর দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজটি হলো ম্যালেরিয়া প্রতিরোধী প্রাকৃতিকভাবে জন্মানোর ব্যবস্থা করা। যখন একটি ম্যালেরিয়া প্রতিরোধী পুরুষ মশা একটি সাধারণ স্ত্রী মশার সঙ্গে মিলন ঘটাবে তখন পুরুষ মশার ক্রোমোজমটি কপি হয়ে স্ত্রী মশার দেহে প্রবেশ করবে। এভাবে দ্বিতীয় প্রজন্মে যে মশা আসবে সেগুলো হবে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধী। অধিকাংশ পতঙ্গের মতো নতুন জন্ম নেয়া মশার মধ্যে কিছু নয়া জিন থাকবে। মেন্ডেলের বংশগতি সূত্র অনুযায়ী নতুন জিনের অন্তত ৫০ শতাংশে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধী বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, চক্রাকারে ১০টি প্রজন্ম পার হলে প্রাকৃতিকভাবে মশা পুরোপুরি ম্যালেরিয়া প্রতিরোধী হবে। এর দরকার হবে অন্তত একটি মৌসুম। এভাবে অঞ্চল ভেদে কর্মসূচীটি দেশে দেশে ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব হবে। ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভাসিটির ইরভিন ক্যাম্পাসের এ্যান্টোনি জেমসের নেতৃত্বে একদল গবেষক ম্যালেরিয়া প্রতিরোধী এ্যান্টিবডি জিন এবং সেই জিনের ব্যবহারিক পরীক্ষামূলক প্রয়োগ দেখিয়েছেন একই ইউনিভার্সিটির সান ডিয়াগো ক্যাম্পাসের ভ্যালেন্টিনো গ্যান্জ ও ইথার বিয়ের নেতৃত্বে আরেকটি দল। তাদের গবেষণার ফল সোমবার প্রসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেস সাময়িকীর চলতি সংখ্যায় ছাপা হয়েছে। একে মশা বিষয়ক জীববিজ্ঞানে একে এক বড় ধরনের অগ্রগতি বলে মন্তব্য করেছেন জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির বায়োলজিস্ট জর্জ ডিমোপলোস। ম্যালেরিয়া প্রতিরোধী জিন উদ্ভাবনের জন্য জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে কাজ চলেছে কয়েক বছর ধরেই। যদিও কীটপতঙ্গের অনিষ্ট থেকে রক্ষা পেতে পদ্ধতিটির উদ্ভাবন কিন্তু বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন এটি প্রতিবেশগত ভারসাম্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির জিন বিশেষজ্ঞ জর্জ চার্চ বলেছেন, বিষয়টি পরীক্ষামূলক প্রয়োগে যাওয়ার আগে এ নিয়ে আরও চিন্তাভাবনা প্রয়োজন রয়েছে। যদি ম্যালেরিয়া পরজীবী প্রতিরোধ করতে না পারার অর্থ মশার নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে যাওয়া। তখন মশা অন্য জীবাণু দিয়ে সহজে আক্রান্ত হতে পারে। -নিউইয়র্ক টাইমস
×