ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শিবিরের ভয়ঙ্কর সেই সহস্রাধিক ‘সাথী’ এখন কোথায়-

প্রকাশিত: ০৫:২২, ২৬ নভেম্বর ২০১৫

শিবিরের ভয়ঙ্কর সেই সহস্রাধিক ‘সাথী’ এখন কোথায়-

শংকর কুমার দে ॥ যুদ্ধাপরাধীর দল জামায়াতের সহযোগী সংগঠন ছাত্র শিবিরের সহস্রাধিক সদস্য ভয়ঙ্কর সাথী ক্যাডারের খোঁজে গোয়েন্দা সংস্থা। যুদ্ধাপরাধী জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মুজাহিদের ফাঁসির রায় কার্যকর করা হলে অদৃশ্য হয়ে পড়েছে শিবিরের সাথী ক্যাডাররা। এমনকি ফাঁসির রায় কার্যকরের বিরুদ্ধে হরতাল আহ্বানের পরও মাঠে দেখা যায়নি তাদের কোন তৎপরতা। অথচ দেশব্যাপী পেট্রোলবোমার সহিংস সন্ত্রাস চালানোর অগ্রভাগে ছিল এই সাথী ক্যাডাররাই। সহিংস সন্ত্রাসের মাঠ কাঁপানো, দাবড়ে বেড়ানো ভয়ঙ্কর প্রকৃতির সাথী ক্যাডারদের হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে যাওয়ায় নানা প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন গোয়েন্দারা। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, আত্মগোপনে থেকে চোরাগোপ্তা হামলা করে সারাদেশে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ ও নাশকতামূলক কর্মকা-ে নেতৃত্ব দিচ্ছিল শিবিরের সাথী ক্যাডাররা। সহিংস সন্ত্রাসী হামলা চালাতে আধুনিক পোশাক পরে বেশভূষা পাল্টে ফেলায় পারদর্শী তারা। ফলে তাদের গ্রেফতার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। শিবিরের সাথীরা দলীয় কর্মকা-ের আলোচনার জন্য মোবাইল ফোনও ব্যবহার করে না। সদস্য, কর্মী ও সমর্থকদের সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাত করে নাশকতামূলক কর্মকা- চালানোর পরিকল্পনা করছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালাচ্ছে গোয়েন্দারা। কিন্তু তালিকাভুক্ত সাথী ক্যাডার খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কোথায় যেন অদৃশ্য হয়ে গেছে তারা। চলতি বছরের মার্চ থেকে নবেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৮ মাসে তিন শতাধিক শিবিরের কর্মী, ক্যাডার গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কিন্তু কোন সাথী ক্যাডারের হদিস মেলেনি। তাহলে তারা উধাও হয়েছে কোথায়- এই প্রশ্ন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর। সূত্র মতে, গত মার্চ থেকে নবেম্বর পর্যন্ত গ্রেফতার হওয়া তিন শতাধিক শিবিরের কর্মী-ক্যাডারকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, ছাত্র শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হতে হলে প্রথমে তাকে হতে হবে ‘দাওয়াত প্রাপ্তি’। ছাত্র শিবিরের দাওয়াত পৌঁছাতে হবে। দাওয়াত প্রাপ্তির কাজে সন্তুষ্ট হওয়ার পর ওই পদে নিয়োগ দেয়া হয়। এরপর তার কাজের ওপর ভিত্তি করে হন ‘কর্মী’ পদধারী। দুই থেকে তিন বছর কর্মী পদে থাকার পর পরীক্ষার ভিত্তিতে তাকে ‘সাথী’ পদে নিযুক্ত করা হয়। শিবিরের একটি ইউনিটে থাকে শতাধিক কর্মী ও দাওয়াত প্রাপ্তি। একজন সাথীর অধীনে থাকে তারা। সাথীরা সংগঠনে অপারেশন কমান্ডার হিসেবে কাজ করে। একজন শিবির কর্মী ‘সাথী’ পদে নিযুক্ত হওয়ার পর তাকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয় অজ্ঞাত স্থানে। ওই প্রশিক্ষণে শিবিরের একাধিক সাথী অংশ নেয়। বিক্ষোভ মিছিল থেকে প্রতিপক্ষের ওপর হামলার কৌশল সম্পর্কে দলীয় কর্মী ও দাওয়াত প্রাপ্তিদের শিখিয়ে দেয় শিবিরের সাথীরা। রাজপথে শিবিরের ধ্বংসাত্মকমূলক কর্মকা- পরিচালনা করার সময় একজন নেতাকর্মীদের চাঞ্চল্য রাখতে বিভিন্ন সেøাগান দেন। সেøাগানবাজ ঐ ব্যক্তিরাই সাধারণত হয় সাথী। সাথীরা হয় খুবই ভয়ঙ্কর প্রকৃতির। গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা জানান, চোরাগোপ্তা হামলা হোক আর প্রকাশ্যেই হোক, যারাই সন্ত্রাস ও নাশকতামূলক কর্মকা-ে জড়িত তাদেরই গ্রেফতার করা হয়েছে এবং গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত আছে। শিবিরের সন্ত্রাসীরা এখন ছোট ছোট গ্রুপে বিভক্ত। বিএনপি-জামায়াত জোটের ডাকা অবরোধ-হরতালের নামে পেট্রোলবোমার আগুনে পুড়িয়ে মারার সহিংস সন্ত্রাস কঠোর হস্তে দমন করেছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। তারপর থেকেই মূলত গা-ঢাকা দিয়েছে শিবিরের সন্ত্রাসী ক্যাডার সাথীরা। মুজাহিদ ও সাকা চৌধুরীর ফাঁসির রায় কার্যকর করার পরও এই দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার সাথী সদস্যদের মাঠে দেখা যায়নি। পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেছেন, শিবিরের নেতাকর্মীদের তালিকা তৈরি করা অব্যাহত আছে গোয়েন্দা সংস্থার। এই পর্যন্ত যে তালিকা তৈরি করা হয়েছে তাতে রয়েছে শিবিরের সহস্রাধিক সাথীর নাম। কিন্তু যারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েছে, শিবিরের সাথী পরিচয় দেয়নি তারা। সংগঠনের পরিচয় লুকিয়ে ব্যক্তিগত পরিচয় দিয়ে তারা নিজেদের আড়াল করার চেষ্টা করছে। সহিংস সন্ত্রাসে অভিযুক্ত সাথী ক্যাডারদের প্রকৃত পরিচয় উদঘাটনের চেষ্টার পাশাপাশি হঠাৎ কোথায় অদৃশ্য হয়ে গেল তা এক প্রশ্নবোধক হয়ে দেখা দিয়েছে। তবে কি তারা কৌশল পাল্টাচ্ছে, নাকি নাশকতার বড় ছক কষছে?
×