ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চম সমাবর্তন

তরুণ প্রজন্মের হাত ধরে এগিয়ে যাবে দেশ ॥ রাষ্ট্রপতি

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ২৬ নভেম্বর ২০১৫

তরুণ প্রজন্মের হাত ধরে এগিয়ে যাবে দেশ ॥ রাষ্ট্রপতি

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস ॥ রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ বলেছেন, তরুণ প্রজন্ম আমাদের মূল্যবান সম্পদ। তাদের হাত ধরে দেশ আগামীতে এগিয়ে যাবে। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের বড় শক্তি ছিল যুব সমাজ। স্বাধীনতা অর্জনের পর দীর্ঘদিন ধরে পরাজিত শক্তি তরুণদের নানাভাবে বিপথগামী করার চেষ্টা করেছে, এখনও করছে। তরুণ প্রজন্ম যাতে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে পারে এবং দেশপ্রেমের মহান চেতানায় উদ্বুদ্ধ হতে পারে সেদিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। শিক্ষার্থীদের বিচিত্র ভাবনার বিস্তার এবং অভিনব উদ্ভাবন কৌশলের দিকনির্দেশনা দিতে হবে। সরকার তরুণদের বিশ্ব ব্যবস্থার সঙ্গে সমতালে চলতে ডিজিটাল বংলাদেশ কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। এ কর্মসূচীকে এগিয়ে নিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। মহান ভাষা আন্দোলন, স্বাধিকার ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনসহ মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ঐতিহ্যকে ধারণ করে ছাত্র সমাজ জাতি গঠনে অবদান রাখবে- জাতি এটাই তা প্রত্যাশা করে। রাষ্ট্রপতি বুধবার বিকেলে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫ম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতির ভাষণে এসব কথা বলেন। তিনি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর। রাষ্ট্রপতি তাঁর বক্তব্যের শুরুতে পরম শ্রদ্ধার সঙ্গে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করে বলেন, তিনি অপরিসীম ত্যাগ-তিতিক্ষা এবং জেল-জুলুম উপেক্ষা করে বাঙালী জাতিকে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ উপহার দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি চার জাতীয় নেতাসহ মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী বীর শহীদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে বলেন, তাঁদের সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের স্বাধীনতা। তিনি বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে খুলনা অঞ্চলের জনগণের রয়েছে বিপুল অবদান। ১৯৭১ সালে হানাদার বাহিনীর সঙ্গে বীব বিক্রমে লড়াই করে বহু মুক্তিযোদ্ধা জীবন উৎসর্গ করেছেন। হানাদার বাহিনীর নিষ্ঠুর বর্বরতার সাক্ষ্য বহন করছে গল্লামারী বধ্যভূমি। তিনি মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ বলেন, ‘১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠার পর সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ শিক্ষার পরিবেশ বজায় রেখে এ বিশ্ববিদ্যালয়টি একাডেমিক কার্যক্রমের রজতজয়ন্তী পূর্ণ করল। এটি বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় ভিত্তিক শিক্ষার ইতিহাসে এক অনন্য অর্জন। আমার বিশ্বাস, জ্ঞান-বিজ্ঞানের নবতর শাখার বিকাশ ঘটিয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হবে। অমি এ বিশ্বদ্যিালয়ের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করি’। রাষ্ট্রপতি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলরের বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, খুলনা বিশ্বদ্যিালয়ে শিক্ষার মান অর্জনের লক্ষ্যে ‘সেন্টার অব এক্সিলেন্স ইন টিচিং এ্যান্ড লার্নিং’ এবং ‘ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি এ্যাসুরেন্স সেল’ স্থাপনের বিষয়টি অত্যন্ত সময়োপযোগী। আমাদের সন্তানদের গবেষণার উপযুক্ত পরিবেশ ও সুযোগ করে দিতে পারলে দেশ উপকৃত হবে। তিনি বলেন, গবেষণা নিরন্তর সাধনার বিষয় এবং তাতে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। তিনি গবেষণা খাতে অর্থ বরাদ্দ এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা ও পরামর্শ প্রদানের জন্য মঞ্জুরি কমিশন এবং একই সঙ্গে উচ্চ শিক্ষা সম্প্রসারণ ও সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে সার্বিক সহায়তা প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান। সমাবর্তনে ডিগ্রীপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘তোমরা দেশের উচ্চতর মানবসম্পদ। তোমাদের কাছে জাতির প্রত্যাশা অনেক। মনে রাখতে হবে ত্রিশ লাখ শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের গর্বিত উত্তরসূরী তোমরা। তোমরা এ দেশকে এগিয়ে নেবে সুন্দর আগামীর পথে, সমৃদ্ধির পথে। মনে রাখবে এ দেশ ও সমাজ আজ তোমাদের এ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। তাদের কাছে তোমরা ঋণী। তোমরা তোমাদের অর্জিত জ্ঞান, মেধা ও মনন দিয়ে দেশমাতৃকার কল্যাণ করতে পারলে সে ঋণ কিছুটা হলেও শোধ হবে। জাতির প্রত্যাশা পূরণ হবে’। রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করা। সে লক্ষ্য অর্জনে তোমরা অবদান রাখবে জাতি তা প্রত্যাশা করে’। অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তা ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর ইমেরিটাস ড. আনিসুজ্জামান এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নান। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্জনসহ গুরুত্বপূর্ণ দিক উল্লেখ করে বক্তব্য রাখেন। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ট্রেজারার খান আতিয়ার রহমান। সমাবর্তন বক্তা ড. আনিসুজ্জামান বলেন, ‘জ্ঞানের সৃষ্টি কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজন নয়, সমাজ ও দেশের প্রয়োজন। সমাজ যদি জ্ঞানভিত্তিক না হয়, তার অগ্রগতি থেমে যেতে বাধ্য। জ্ঞানের অপরিহার্য শর্ত মুক্তবুদ্ধির চর্চা করা, সব বিষয়ে প্রশ্ন করা। বাংলাদেশে আজ যে ধরনের পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা চলছে তা মুক্তবুদ্ধি চর্চার অনুকূল নয়। এ অবস্থা আমাদের মধ্যযুগীয় অন্ধকারের দিকে টানবে। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে হবে। ব্যক্তি স্বাধীনতা, বাক স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের যে স্বাধীনতা সংবিধান আমাদের দিয়েছে আমরা তা প্রয়োগ করতে চাই’। সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগদানের পূর্বে রাষ্ট্রপতি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনির্মিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের উদ্বোধন ফলক উন্মোচন করেন এবং সমাবর্তন অনুষ্ঠান সমাপ্তিলগ্নে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমের ২৫ বছর পূর্তিতে রজতজয়ন্তীর বছরব্যাপী উৎসবের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। সমাবর্তন অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্যবৃন্দ, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যবৃন্দ, বেসামরিক ও সামরিক প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ, স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধি, ইলেকট্রনিক, প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়ার প্রতিনিধিসহ চার সহস্রাধিক আমন্ত্রিত অতিথি উপস্থিত ছিলেন। সমাবর্তনে ২০১১ থেকে ২০১৫ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ফল প্রকাশিত বিভিন্ন ডিসিপ্লিনের চার হাজার ৫২৯ জন শিক্ষার্থীকে আনুষ্ঠানিকভাবে ডিগ্রী প্রদান করা হয়। পরীক্ষার ফলে অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য ১৩ জনকে স্বর্ণপদক এবং একজনকে পিএইচডি ডিগ্রী প্রদান করা হয়।
×