ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

২৯ নবেম্বর জরুরী বৈঠক

মংলা বন্দরে আটকে থাকা গাড়ি খালাসের উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ২৬ নভেম্বর ২০১৫

মংলা বন্দরে আটকে থাকা গাড়ি খালাসের উদ্যোগ

এম শাহজাহান ॥ শুল্কায়ন জটিলতায় মংলা বন্দরে দীর্ঘদিন আটকে থাকা গাড়িগুলো দ্রুত খালাসের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এই উদ্যোগের ফলে ২ হাজার ৭৯টি গাড়ি খালাস নিয়ে যে সঙ্কট তৈরি হয়েছিল তার অবসান হবে বলে মনে করছে সরকার। দ্রুত গাড়িগুলো খালাসের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ বাস্তবায়নের অগ্রগতি ও সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে আগামী ২৯ নবেম্বর জরুরী বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিতব্য এই বৈঠকে অর্থ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং সংশ্লিষ্ট সরকারী অন্যান্য দফতরের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে। জানা গেছে, বন্দর হতে দ্রুত গাড়িগুলো খালাস এবং শুল্কায়ন জটিলতা নিরসনে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ইতোমধ্যে নির্দেশনা প্রদান করেছেন। এছাড়া জটিলতা নিরসনে অর্থ মন্ত্রণালয়ে একাধিক বৈঠকও করা হয়েছে। কিন্তু অর্থ মন্ত্রীর সেই নির্দেশনা এনবিআরে উপেক্ষিত হওয়ায় গত পাঁচ বছর ধরে গাড়িগুলো আটকা আছে মংলা বন্দরে। প্রধানমন্ত্রীর উৎসাহে মংলা বন্দরের কার্যক্রম বাড়াতে গত ২০০৯ সালে এই বন্দর দিয়ে গাড়ি আমদানি শুরু হয়। কিন্তু পলিসি সহায়তা না পাওয়ায় গাড়িগুলো ছাড়করণ সম্ভব হয়নি। এছাড়া শুল্কায়ন মূল্য নির্ধারণে নিবর্তনমূলক পদ্ধতি বিদ্যমান থাকায় স্বাভাবিকভাবেও গাড়িগুলো খালাস হতে পারেনি। এই সঙ্কট উত্তরণে গত ৫-৬ বছর ধরে আমদানিকারকরা সরকারী দফতরগুলোতে চিঠি চালাচালি করছেন। অবশেষে প্রধামন্ত্রীর নির্দেশে গাড়িগুলো দ্রুত বন্দর হতে খালাসের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। তবে কি পরিমাণ গাড়ি শুল্কায়ন জটিলতায় আটকা পড়ে আছে সেই সংখ্যা নিয়েও এনবিআর এবং আমদানিকারকদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। এনবিআর বলছে, ২ হাজার ৭৯টি গাড়ি শুল্কায়ন জটিলতায় বন্দরে আটক রাখা হয়েছে। আর আমদানিকারকরা বলছেন, এই সংখ্যা ১ হাজার ৩৯৫টি যার মধ্যে ৮৮৩ এবং ৫৫২ ইউনিট গাড়ি রয়েছে। বাদবাকি ৬৮৪টি গাড়ির কোন শুল্কায়ন জটিলতা নেই। তবে এতকিছুর পরও সঙ্কট উত্তরণে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন এ শিল্পের উদ্যোক্তারা। এ প্রসঙ্গে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক ও বাংলাদেশে জাপানিজ শিল্প-বাণিজ্য বিষয়ক এ্যাসোসিয়েশনের বিশেষ উপদেষ্টা আবদুল হক জনকণ্ঠকে এই সঙ্কট দীর্ঘদিনের। অর্থমন্ত্রী বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নেয়ার পরও এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. নাসিরউদ্দীনের অসহযোগিতার কারণে বিষয়টি এখনও ঝুলে আছে। বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীও অবহিত আছেন। তাই তাঁরই নির্দেশে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আটকে থাকা গাড়িগুলো বন্দন হতে খালাসের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব আবুল কালাম আজাদ, এনবিআর চেয়ারম্যান, বিদ্যুত ও নৌ-সচিব মংলা বন্দর সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে গাড়িগুলো খালাসে তাঁরা ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন। আশা করব, দ্রুত আটকে থাকা গাড়িগুলো খালাস করে এ শিল্পের আমদানিকারকদের বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করা হবে। এদিকে, আটকে থাকা গাড়িগুলো সরকার পুলিশ বাহিনীর প্রয়োজনে তাদের তদারকিতে দেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এতে করে দেশের পুলিশ বাহিনীতে গাড়ির যে সঙ্কট রয়েছে তা দূর হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানিকারক ও ডিলারদের সংগঠন বারভিডা এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানের সভাপতিত্বে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, রাজস্ব বিভাগ ও মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে গাড়িগুলোর রিজার্ভ মূল্য নির্ধারণে কাস্টমস, পুলিশ এবং বিআরটিএকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বারভিডা সভাপতি হামিদ শরীফ জনকণ্ঠকে বলেন, মংলা বন্দরে আটকে থাকা গাড়িগুলো খালাসের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যে বৈঠক করা হচ্ছে, সেখানে উদ্যোক্তাদের ডাকা হয়নি। ওই বৈঠকে আমদানিকারকদের রাখা হলে ভাল হতো। তাই শীঘ্রই এ বিষয়ে বারভিডা কর্তৃপক্ষ অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করবে। তিনি বলেন, আমদানিকারকরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন সেদিকে সরকারের নজর দিতে হবে। জানা গেছে, শুল্কায়ন জটিলতায় খালাসের অপেক্ষায় বন্দরে পড়ে থাকা গাড়িগুলোর বাজারমূল্য প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। গত ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন আদেশে শুল্ক ছাড় দিয়ে গাড়িগুলো বন্দর থেকে খালাসের নির্দেশনা দেয়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও মন্ত্রণালয় দীর্ঘ এক বছরেও এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি।
×