ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রবীন্দ্রনাথের মাঝেই ডুবে থাকি

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২৬ নভেম্বর ২০১৫

রবীন্দ্রনাথের মাঝেই ডুবে থাকি

সকালের ঘুমটা ভেঙ্গে যেত বাবার বাজানো টেপরেকর্ডারের গান শুনে। একেক সকালে একেক ধরনের গান বাজত। কখনও রবীন্দ্রসঙ্গীত, কখনও সতীনাথ কিংবা হেমন্ত, কখনওবা নজরুল সঙ্গীত। আর আমার ঘুম ভাঙ্গার প্রতীক্ষাটাও যেন ছিল গান শোনার। অর্থাৎ আমি মনে মনে চাইতাম প্রতি সকালের ঘুম যেন গান শুনেই ভাঙ্গে। আর গানের প্রতি ভাল লাগাটা আমার তখন থেকেই। কথাগুলো বলছিলেন এ সময়কার প্রতিশ্রুতিশীল রবীন্দ্রসঙ্গীতশিল্পী রাবেয়া আক্তার। ছোটবেলার বেড়ে ওঠা গাজীপুরে। বাবার পাশাপাশি বড় ভাইদেরও গানের প্রতি ছিল বেশ আগ্রহ। তারাও বিভিন্ন ধরনের আধুনিক গান শুনতেন, যে কারণে সব ধরনের গানের আবহটা খেলা করত মনের ভেতর। সে তাগিদ থেকেই গান শেখার হাতেখড়ি শুরু হয়। এ কাজে ইমিডিয়েট বড় বোন এবং বড় ভাই বেশ সাপোর্ট করেছে, যে কারণে সব ভাইবোনের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকলেও তাদের প্রতি একটু বেশি। এরপর উচ্চশিক্ষা এবং গানের জন্য ঢাকায় পাড়ি জমানো। গানের জন্য বুলবুল ললিতকলা একাডেমি ধানম-ি শাখা থেকে পাঁচ বছরের সার্টিফিকেট কোর্স সম্পন্ন করি। সেখানে আমার গানের পরিধি আরও বেড়ে যায়। ওস্তাদ হিসেবে পেয়েছি বিশিষ্ট রবীন্দ্রসঙ্গীতশিল্পী তপন মাহমুদ এবং মহাদেব ঘোষকে। পাঁচ বছরের সার্টিফিকেট কোর্স করে বের হওয়ার আগেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিই, যা আমার গানের ভিত আরও শক্ত করে। রেডিও-টিভিরও আমন্ত্রণ পেতে থাকি এ সময়। আর এই নিজেকে শিল্পী হিসেবে গড়ে তুলতে ঝালাই করতে থাকি। যে অনুষ্ঠানেই পারফর্ম করেছি সেখান থেকেই প্রশংসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছি। এটা আমার অনেক বড় একটা পাওয়া। রবীন্দ্রসঙ্গীত আমার মধ্যে যেন প্রাণের সঞ্চার ঘটায়। রবীন্দ্রনাথের মাঝেই ডুবে থাকি আমি। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, মিতা হক, অদিতি মোহসিন, কনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, সুবিনয় রায়, হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ও সাগর সেনের গান আমি মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনি। গান শুনতে শুনতে আমি যেন কোথায় হারিয়ে যাই। তবে রবীন্দ্রসঙ্গীতের পাশাপাশি আধুনিক গান এবং ফোক গানের প্রতিও আমার দুর্বলতা রয়েছে। সময় পেলে চর্চাও করি। বর্তমানে রবীরশ্মী সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছি। এছাড়া বাংলাদেশ রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী সংস্থার সদস্য হিসেবেও অন্তর্ভুক্ত রয়েছি। আমার সৌভাগ্য হয়েছে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় সঙ্গীত পরিবেশন করার। প্রতিটি অনুষ্ঠানেই অন্যরকম এক ভাললাগা তৈরি হয়, যা পরবর্তী অনুষ্ঠানের জন্য প্রেরণা যোগায়। কিছুদিন আগে ভারতের আগরতলায় রবীন্দ্র সম্মেলনে গান করার সুযোগ পাই। সেখানে তাদের আতিথেয়তা এবং গানের পরিবেশ দেখে বেশ ভাল লেগেছে। আগের চেয়ে বাংলাদেশে রবীন্দ্রসঙ্গীত চর্চা অনেকগুণ বেড়েছে। অনেক ছেলেমেয়েই এখন একাগ্রতা নিয়ে রবীন্দ্রসঙ্গীত চর্চা করছে, যা সত্যিকারার্থেই ইতিবাচক। সংস্কৃতিচর্চার বিকাশ না ঘটলে দেশ এগোবে না। বর্তমানে আমি শিক্ষকতা পেশার সঙ্গে জড়িত। এর পাশাপাশি আশাবরী সঙ্গীত একাডেমি নামে একটি সঙ্গীত একাডেমিও রয়েছে আমার। নিজে শুদ্ধভাবে সঙ্গীত শেখায় নিবিষ্ট রয়েছি, সে তাগিদ থেকে পরবর্তী প্রজন্মকেও শুদ্ধ সঙ্গীতচর্চার আহ্বান জানিয়ে যাই আমি প্রতিনিয়ত। আমার এ পথচলায় ওস্তাদ মহাদেব ঘোষের অবদান অনস্বীকার্য। উনি অনেক যতœ নিয়ে আমাকে তালিম দিয়েছেন। এছাড়াও এ পর্যন্ত আসতে যেসব মানুষের সহযোগিতা পেয়েছি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি তাদের সবার প্রতি। তাদের ভালবাসা কিংবা সহযোগিতা না পেলে আমি হয়ত এ পর্যন্ত আসতে পারতাম না। ২০১৪ সালে আমার দ্বিতীয় একক এ্যালবাম ‘রাঙিয়ে দিয়ে যাও’-এর গানগুলো শ্রোতারা বেশ সাদরে গ্রহণ করেছেন। আমার প্রথম এ্যালবামটি বের হয় ২০১০ সালে ‘ও বন্ধু আমার’ শিরোনামে। দুটো এ্যালবামই লেজার ভিশন থেকে প্রকাশিত হয়েছে। বর্তমানে আমি আমার তৃতীয় এ্যালবামের কাজ নিয়ে ব্যস্ত রয়েছি। এ এ্যালবামে রবীন্দ্রনাথের বিদেশী সুরের গানগুলো প্রাধান্য পাবে। শ্রোতাদের ভালবাসা এবং দোয়া নিয়ে আমি রবীন্দ্রসঙ্গীত চর্চায় আজীবন কাটিয়ে দিতে চাই- এটাই আমার প্রত্যাশা। তৌফিক অপু ছবি : জীবন ঘোষ
×