পর্যবেক্ষণ
অনীক মাহমুদ
অকর্মণ্য দিগন্তের অকালবোধন হয়
কপাল ফেটে দাঁত বেরোয় রাক্ষসের আদলে
পুচ্ছ বেঁধে ঘুরলেও ময়ূরের রা বেরোয় না
কাকের কণ্ঠরোলে
স্কুলের দিবস মিথ্যে মিথ্যে আস্ফালনে কাটালেন
কলেজের রাত্রিও মেঘে মেঘে কুলিশবর্ষণে নাজেহাল
বিশ্ববিদ্যালয়েও তথৈবচ বন্ধ্যাক্লিষ্টতা
আইল ডিঙানো কৃষকের মামুলি সাফল্যে
খুশি হয়ে বাড়ি ফিরলেন
এখন পড়ন্ত বিকেলে হিসেবের ঝুলি খুলে
কয়েকটা উপলের কারসাজি গুনে
ভিন্নরকম মহাস্তাবকতা ছড়ালেন বাতাসে
নিজেই নিজের স্তোকবাক্যে লজ্জাহীন
বস্তুত আত্মপ্রসাদের দরজা খুলে বুক ভরে
নিলেন বাতাস,
এখন হিসেবের ভুলে শূন্য আস্ফালন
বেরাদর, পরচর্চা যদি রিকেটসিয়াল ফিবারের উদগাতা হয়
তবে তার আশ্রয় মজ্জায় বাগান
সময়ের নামতা পড়ে শেষ করুন গাজনের রাত
ভোলানাথ সিদ্ধিদাতা আপিল করুন তাকেতুকে
তবে অবহেলা করলেন বড্ড রুজির কাণ্ঠায়
থু থু ছিটালেন অষ্টপ্রহর নিচের পবিত্র পাতে!
বিহ্বলতা
গোলাম কিবরিয়া পিনু
গুহায় প্রত্যাবর্তন করি
নিকৃষ্ট প্রজাতি হয়ে উঠি
পিছনমুখী অতীত নিয়ে পতনমুখী হই!
অধঃপতিত অবস্থায় হ্রাস হতে থাক
মানবিক শুচি ও সৌন্দর্য,
প্রত্যাহার করে নিই-অর্জিত ভ্রাতৃত্ব
প্রতিবেশীসুলভ সহনশীলতা! বিহ্বলতা নিয়ে
আপোসে পাপোষে দু’পা রাখি
যেখানে-সেখানে!
নিজেকে গুটিয়ে ফেলি-চোখ ফিরিয়ে নিই
সত্য থেকেÑযুক্তি থেকেÑমুক্তি থেকে
চেতনায় যেন কোনো উত্থান না ঘটে;
মানবজীবন পরিপূর্ণ অবসর নিয়ে
খোপে গিয়ে স্থির থাক!
তাঁবু তুলে নিই-
বিউগল বাজিয়ে বাজিয়ে পিছু হটে যাই!
আত্মকথা সিরিজ
মুহাম্মদ ফরিদ হাসান
আমার ভেতর কোনো পুকুর নেই
কেবল বিমর্ষ একটা নদী আছে
বাড়িঘর, উঠোন, আমার প্রিয় মুখগুলো
নদীর স্রোতের মতো কঠিন-কাজল
আমি সেই ভয়ে একটা পুকুর হতে চাই।
প্রতিদিনই আমি খুঁড়তে নামি নিজের ভেতর
পরান গহীনে কত কী খুঁজি
আতিপাতি খুঁজি দয়াদ্র চোখ, প্রেমিকার শহর
স্মৃতি আর আঙুলকাটা রক্তের ঘ্রাণ...
আমি আজও খুঁড়ে চলেছি
খুঁড়তে খুঁড়তে এখন আমি প্রবহমান নদী
প্রবল স্রোতে ছুটছি কোনো সুফলা গ্রামের দিকে
যে গ্রামে একটি কোমল পুকুর আছে...
আসামি
জাহিদ হায়দার
আমাকে দ- দাও চুম্বনে চুম্বনে।
কেন যে জামিন দাও,
সময় না হতে শেষ
দ্রুত আনো তোমার গরাদে।
বলো, আরো দোষ করো
অপরাধ করো
খুনি হও বাহুর বন্ধনে।’
১৯.১১.২০১৫
পাহাড় কাটে শব্দ হয়
রাগিব রেকেশি
নূড়ি পাথর উপচে উঠছে
কার সাধ্য রুখে
পাহাড় কাটে শব্দ হয়, দেখি
হচ্ছেটা কী, ঝুঁকে!
পাহাড় কাটে শব্দ হয়
বন ঘুঘুরা কাঁদে
কী নিদারুণ কষ্ট করে
বনের-ই মর্মরে।
রাতের আঁধার নিকষ কালো
পাখির ছোট্ট বাসা
পাহাড় বেয়ে গড়িয়ে পড়ে
বৃক্ষ ও বাগডাসা!
পাহাড় কাটে শব্দ হয়
ময়না টিয়া কাঁদে
হত্যা করে বন প্রকৃতি মানুষ
বসতি গড়বে চাঁদে?
আমাদের কিছু কথা আছে
নূর কামরুন নাহার
আমাদের আরো কিছু কথা আছে
না বন্ধু, না প্রেম, না স্বজনের অধিকার
তবু কিছু কথা বলা প্রয়োজন।
প্রদোষকাল, রাত্রির ক্ষয়ে যাওয়া প্রহর
মধ্য দুপুর অথবা স্মৃতিঘন সন্ধ্যায়
টেবিলে তস্তুরি রেখে মুখোমুখি নিবিড় নিশ্বাসে
আমাদের কিছু কথা আছে।
ফেরারি পাখির মতো ফিরে যাওয়া
সময়ের কিছু কণা কিংখাবে জড়ো করে
আত্মবিশ্বাসী চোখের ইঙ্গিতে
আমাদের আরো কিছু কথা আছে।
কিছু কথা আছে মায়াবী পেলব
কিছু নৈমিত্তিক নির্দোষ।
কিছু আছে দুঃখের উৎসমুখ চিহ্নিত করে
কিছু অস্তিত্বের।
আমাদের কিছু কথা বলা প্রয়োজন
না বন্ধু, না প্রেম না স্বজনের অধিকার
তবু কিছু কথা আছে আমাদের।
বিজয়ের মূলমন্ত্র
পৃথ্বীশ চক্রবর্ত্তী
বিজয়ের মাস এলে বিজয়ীরা আনন্দিত হন
বিজয়ী কবির মনে সাধ জাগে কবিতা লিখার
বিজয়ী প্রেমিক দেখে মুগ্ধ হাসি তার প্রেমিকার
বসন্ত হাওয়া যেন বিজয়ীর ছুঁয়ে যায় মন।
একুশের হাত ধরে একাত্তরে আসে এ বিজয়
কত সাধ কত স্বপ্ন কত আশা ও প্রত্যাশা নিয়ে
ত্যাগ-তিতিক্ষা অনেক ইজ্জতেরও বিনিময়
বহু ঝড় বহু যুদ্ধ বহু প্রাণ বহু রক্ত দিয়ে।
কতজনই অতীত ভাবে ডিসেম্বর এলে পরে
শহীদ ছেলের লাশ ভেসে ওঠে জননীর চোখে
বিধবা মায়ের বুক ওঠে তীব্র হাহাকার করে
বীরাঙ্গনা মা’র চোখ রক্ত জবার মতোন জ্বলে শোকে।
ভেদাভেদ ভুলে জাতি লাখো প্রাণে গড়ে বাংলাদেশ
সাম্য, মৈত্রী ও সম্প্রীতি তাই বিজয়ের আসল উদ্দেশ
তবে কেন বেড়ে যাচ্ছে স্বার্থ-দ্বন্দ্ব-সংঘাত-বিদ্বেষ
সাম্প্রদায়িক ছোবলে ধ্বংস হচ্ছে সোনার স্বদেশ?
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিজয়ের মূলমন্ত্র এই-
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের তাতে, কোন স্থান নেই।
শীর্ষ সংবাদ: