ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জাপানী নারীর লাশ তুলে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন

প্রকাশিত: ০৫:২২, ২৮ নভেম্বর ২০১৫

জাপানী নারীর লাশ তুলে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অবশেষে শুক্রবার বহুল আলোচিত ঢাকায় জাপানী নারী হিরোয়ি মিয়েতার লাশ কবর থেকে তুলে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হলো। ডিএনএ পরীক্ষার জন্য লাশ থেকে প্রয়োজনীয় আলামত সংগ্রহ করে তার পরীক্ষা চলছে। ষাটোর্ধ ওই জাপানী নারীর রহস্যজনক মৃত্যুর পর মুসলমান পরিচয়ে উত্তরায় কবর দেয়া হয়েছিল। এ ঘটনায় দায়েরকৃত হত্যা মামলায় ৫ জনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। শুক্রবার সকাল ৬টার দিকে ষাটোর্ধ জাপানী নারীর লাশ উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরের সিটি কর্পোরেশনের খালপাড় কবরস্থান থেকে উত্তোলন করা হয়। ঢাকা জেলার একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে মিয়াতার লাশ উত্তোলনকালে কবরস্থানের তত্ত্ববাবধায়ক আবদুল কুদ্দুস উপস্থিত ছিলেন। তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ লাশটি তোলার পর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠায়। গত ২৬ নবেম্বর জাপানী এই নারীর লাশ কবর থেকে তুলে ময়নাতদন্তের অনুমতি দেয় ঢাকার সিএমএম আদালত। দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষ করে ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডাঃ সোহেল মাহমুদ সাংবাদিকদের জানান, জাপানী নাগরিকের ডিএনএ (শনাক্তকারী জিন) পরীক্ষার জন্য তার পা ও হাতের নখ এবং দুটি দাঁত সংগ্রহ করা হয়েছে। আলামতগুলো পরীক্ষাগারে পাঠানো হবে। আগামী এক মাসের মধ্যে ডিএনএ পরীক্ষার ফল পাওয়া যাবে। চূড়ান্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। তিনি আরও জানান, জাপানী নারীর দেহ পচে যাওয়ায় বাহ্যিকভাবে কোন আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়নি। এজন্য ডিএনএ পরীক্ষা ও ভিসেরা রিপোর্ট ছাড়া সুনিশ্চিতভাবে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ বলা কঠিন। ভিসেরা রিপোর্টের জন্য অনেক আলামত মহাখালী রাসায়নিক পরীক্ষাগারেও পাঠানো হবে। মৃত্যুর আগে ওই নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন কি না, তা নিশ্চিত হতে নিহতের হাইভেজনাল সফটের টিস্যু সংগ্রহ করা হয়েছে। তাও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। প্রসঙ্গত, গত ১৯ নবেম্বর বাংলাদেশের জাপান দূতাবাসের ভাইস কনস্যুলার কসোকি মাতসুনাগা উত্তরা পূর্ব থানায় মিয়াতার নিখোঁজের বিষয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। সাধারণ ডায়েরিতে বলা হয়, চলতি বছরের ২৬ অক্টোবর থেকে মিয়াতার সঙ্গে মায়ের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। মেয়ের মোবাইল ফোনটি বন্ধ। মিয়াতা ঢাকার উত্তরার ৬ নম্বর সেক্টরের ১৩/বি নম্বর সড়কের সিটি হোমসের ৪ নম্বর বাড়িতে ভাড়ায় বসবাস করত। তদন্ত শেষে মিয়াতাকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুমের উদ্দেশে মুসলমান পরিচয়ে কবর দেয়ার অভিযোগে গত ২৩ নবেম্বর উত্তরা পূর্ব থানার পরিদর্শক (অপারেশনস) মিজানুর রহমান একই থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় পুলিশ ২৪ নবেম্বর মিয়াতার কথিত বাংলাদেশী ব্যবসায়িক পার্টনার মোঃ জাকির পাটোয়ারী রতন (৪২) ও মারুফুল ইসলামকে (৩০) গ্রেফতার করে। তাদের দেয়া তথ্য মতে ওইদিনই রাশেদুল হক বাপ্পী (৪২), ফখরুল ইসলাম (২৭) ও ডাঃ বিমল চন্দ্র শীলকে গ্রেফতার করে। তাদের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। মামলার অভিযোগে আরও বলা হয়, গ্রেফতারকৃতরা গত ২৯ অক্টোবর মিয়াতাকে হত্যা করে। হত্যার পর আসামি জাকির পাটোয়ারীর প্রাইভেটকারযোগে লাশটি অপর আসামি মারুফুল ইসলামের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর আরেক আসামি জাহাঙ্গীরের (২৮) ও তার সহযোগীদের যোগসাজশে মিয়াতার নাম পরিবর্তন করে হালিমা খাতুন পরিচয়ে গত ২৯ অক্টোবরই বিকেলে দাফন করা হয়। মামলার প্রধান আসামি পলাতক। মামলা দায়েরের দিনই মিয়াতার মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে কবর থেকে লাশ তুলে ময়নাতদন্ত করার অনুমতি চেয়ে ঢাকার সিএমএম আদালতে আবেদন করেন মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা। জানা গেছে, মিয়াতা ২০০৬ সাল থেকে অবৈধভাবে বাংলাদেশে বসবাস করছিলেন। গ্রেফতারকৃতদের দাবি, মিয়াতার হোটেলে অনেক টাকা বিল হয়েছিল। যা তিনি পরিশোধ করতে পারছিলেন না। এমন পরিস্থিতি তারা মিয়াতাকে বসুন্ধরা এলাকার একটি বাড়িতে রাখেন। সেখানেই মারাত্মক ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়। মিয়াতার ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় তারা তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে সাহস পাননি। এমনকি বাড়তি ঝামেলা মনে করে বিষয়টি পুলিশকেও জানাননি। পুলিশ বলছে, গ্রেফতারকৃতদের এমন দাবি অযৌক্তিক। কারণ পুলিশ বা সরকার এতটা অমানবিক নয়। জাপান বাংলাদেশের অন্যতম বন্ধু দেশ। সেই দেশের একজন জ্যেষ্ঠ নাগরিক বাংলাদেশে বিনা চিকিৎসায় মারা যাবেন, সেটি অন্তত মেনে নেয়া যায় না। গ্রেফতারকৃতরা যোগাযোগ করলে, প্রয়োজনে পুলিশ বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারত। টাকার জন্যই এবং মিয়াতার ব্যবসা বাণিজ্য হাতিয়ে নিতেই গ্রেফতারকৃতরা ওই বিদেশীকে হত্যার পর মুসলিম পরিচয়ে লাশ দাফন করে ফেলে। কারণ লাশ গুম করতে দাফন সবচেয়ে ভাল অসৎ, কিন্তু সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য পন্থা।
×