ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সুদের বোঝা

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ২৮ নভেম্বর ২০১৫

সুদের বোঝা

ঋণ করে ঘি খেয়ে বিপাকে পড়া কারও কারও পক্ষে স্বাভাবিক। তবে ক্ষুদ্রঋণ গ্রহণের পর সুদের বোঝা মাথায় নিয়ে গরিবী চক্র থেকে বেরোতে না পারার বিষয়টি অসমীচীন ও অস্বাভাবিক। এর পেছনের প্রধান কারণ ঋণের ওপর উচ্চহারে সুদ আরোপ। ঋণের টাকা অর্থনৈতিক কার্যক্রমে লাগিয়ে যে মুনাফা করা সম্ভব, সুদের হার সে তুলনায় যথেষ্ট বেশি হলে আম ও ছালা দুটিই যাওয়ার যোগাড় হয়। সে কারণে ক্ষুদ্রঋণের টাকা পরিশোধ না করতে পেরে গরিব মানুষ বসতভিটা খোয়ায়, কিডনির মতো মূল্যবান অঙ্গও বেচতে হয়। এ ধরনের সংবাদ খবরের কাগজে প্রকাশিত হওয়ার পরও আমরা শুনিনি দরিদ্রদের অমানবিক ঋণচক্র থেকে উদ্ধার পাওয়ার কোন পথ মিলেছে। ক্ষুদ্রঋণে দায়মুক্তির বাধা যে সুদের বোঝাÑ এ বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খোলাখুলিভাবে ব্যক্ত করেছেন। সুদের চাপে সঞ্চয় থাকে না বলেই ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থায় গ্রহীতাদের পক্ষে দারিদ্র্যসীমা থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব হয় নাÑ এ বাস্তবতা যথার্থই অনুধাবন করেছেন তিনি। ক্ষুদ্রঋণ এ দেশের গরিব মানুষের জন্য অভিশাপ না আশীর্বাদ, এ নিয়ে এখন জোরালোভাবে প্রশ্ন উঠছে। ক্ষুদ্রঋণ গ্রহণ করে তারা কি আত্মনির্ভরশীল হতে পারছে, নাকি তাদের আরও নিঃস্ব-রিক্ত করে ফেলছে; সে প্রশ্নও দেখা দিয়েছে। ক্ষুদ্রঋণ থেকে আসা যাক বৃহৎ ঋণের প্রসঙ্গে। সেখানে ঘটি-বাটি-ভিটে হারানোর মতো অত শোচনীয় পরিস্থিতি নয়, তবে সেখানে বিরাজ করছে রুদ্ধতা, স্থবিরতা। তারও মূল কারণ ওই সুদের বোঝা। ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে সেই পুঁজি বিনিয়োগ করে ব্যবসা করবেন। নির্ধারিত সময়ে সুদসহ ঋণের টাকা ফেরত দেবেন। এতে ব্যাংকগুলোর অর্থনৈতিক প্রবাহ সচল থাকবে। দেশের অর্থনীতিও গতিশীল থাকবে। এটাই স্বাভাবিক ও স্বীকৃত। অথচ শুধু উচ্চ হারের কারণে ব্যবসায়ীদের ওপর সুদ হয়ে উঠছে বোঝাস্বরূপ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যমতে, শিল্প খাতে মেয়াদী ঋণে ১৫ থেকে ১৮ শতাংশ পর্যন্ত সুদ আদায় করছে ব্যাংকগুলো। অথচ এর সঙ্গে সার্ভিস চার্জ আদায় করা হচ্ছে কিছুটা বেপরোয়াভাবে। ঋণের সুদ হারের পাশাপাশি ঋণ প্রক্রিয়াকরণ ফি বাবদ ব্যাংকগুলো বিভিন্ন ধরনের চার্জ নিচ্ছে। এছাড়া মেয়াদ পূর্তির আগে ঋণ সমন্বয় করতে চাইলে কোন কোন ব্যাংক এ বাবদ অতিরিক্ত ৩ থেকে ৪ শতাংশ চার্জ আদায় করছে, যার ফলে সামগ্রিকভাবে উদ্যোক্তাদের ২০ থেকে ২২ শতাংশ হারে সুদ গুনতে হচ্ছে। এই হারে সুদ নিয়ে যারা শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। শুধু তাই নয়, ব্যাংকে বেড়ে যাচ্ছে খেলাপী ঋণ। এমন অবস্থায় গড়ে উঠতে পারছে না নতুন শিল্প-কারখানা। আবার যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠান নির্মাণের উদ্যোগ কিছুটা এগিয়েছিল তাও মাঝপথে থেমে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে ব্যাংকের উচ্চ সুদের কারণে। দেশীয় বিনিয়োগ বাড়াতে হলে, বেসরকারী খাতকে চাঙ্গা করতে চাইলে সুদের হার পুনর্বিবেচনার কোন বিকল্প নেই। সুদের হার নিয়ন্ত্রণ ও ঋণনীতি সহজ করা হলে বেসরকারী উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে এগিয়ে আসতে পারবেন। আর তাহলে দেশের অর্থনীতিও বিকশিত হবে।
×