ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নছর প-িতের মক্তব

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২৮ নভেম্বর ২০১৫

নছর প-িতের মক্তব

পার্বতীপুরের সর্বজন শ্রদ্ধেয় প্রয়াত শিক্ষক নছরউদ্দিন সরকার। এলাকায় নছরপ-িত নামে এক ডাকে তিনি পরিচিত। সে যুগে মাইনর পাস করে তিনি ছিলেন জ্ঞানের অধিকারী। চল্লিশ দশকের দিকে পলাশবাড়ী ইউনিয়নে নিজগ্রাম কালাইঘাটিতে এলাকার শিক্ষানুরাগীদের সহযোগিতায় বাড়ি-বাড়ি ঘুরে ছাত্রছাত্রী সংগ্রহ করে মক্তব স্থাপন করেন। মাটির ঘর, খড়ের ছাউনি। চেয়ার টেবিল বেঞ্চ কিছুই নেই। ছাত্রছাত্রীরা মেঝেতে মাদুর বিছিয়ে লেখাপড়া করে। এভাবেই যাত্রা শুরু। পরবর্তীতে এটি পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত রূপান্তরিত হয়। সু-শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে শিক্ষার্থীদের নিজ বাড়িতে রেখে শিক্ষা দিতেন। তাদের জন্য আলাদা ঘর ছিল। দূরের শিক্ষার্থীরা এখানেই রাত্রিযাপন ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেই খাওয়া দাওয়া করেছে। অসাম্প্রদায়িক চিন্তা চেতনায় বিশ্বাসী মানুষটি ছিলেন বাংলা, ইংরেজী, আরবি, ফার্সি ভাষায় লিখতে পড়তে, পড়াতে পারদর্শী। ছাত্রছাত্রী ছিল তার সন্তানতুল্য। তাদের তাঁর মতো করে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। বাস্তব জীবনে তার হাতে গড়া অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী শিক্ষার উপরের ধাপে গিয়ে কখনও ঝরে পড়েনি। ১০৫ বছর বয়সে ১৯৮৮ সালে তাঁর মৃত্যু হয়। এই বরেণ্য প-িতের জন্মভূমি এখন কেমন আছে দেখতে গিয়ে আমূল পরিবর্তন চোখে পড়ে। পার্বতীপুর শহর থেকে সে গ্রামে যেতে কাঁচা রাস্তা এখন পাকা হয়েছে। ঘরে ঘরে বিদ্যুতের আলো। তার হাতেগড়া মক্তব-পাঠশালার সেই মাটির ঘরের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। একই স্থানে নির্মিত হয়েছে পাকা অবকাঠামো। প্রতিষ্ঠানটি রূপান্তরিত হয়েছে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। উপচে পড়া ছাত্রছাত্রী। গরমে মাথার উপর ফ্যান ঘোরে। তার নাতি শিক্ষক শামসুল ইসলাম বাড়ির নির্মাণাধীন পাকা ঘর দেখিয়ে বললেন এখানেই ছিল দাদুর মক্তব। এখানেই তিনি ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে সময় কাটাতেন। তাঁর মৃত্যু হয়েছে ঠিকই। তবে তিনি যে শিক্ষার আলো জ্বালিয়ে গেছেন তা নিভে যায়নি। Ñশ.আ.ম হায়দার পার্বতীপুর থেকে
×