ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

থ্রি-হুইলার চলাচলে ফের ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ২৮ নভেম্বর ২০১৫

থ্রি-হুইলার চলাচলে ফের ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক আবারও দুর্ঘটনাপ্রবণ হয়ে উঠেছে। আতঙ্কে রয়েছে হাইস্পিড গাড়ির চালক ও যাত্রীরা। কারণ যে কোন মুহূর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে থ্রি-হুইলার গাড়ি। সেতু মন্ত্রীর নির্দেশনা ও সরকারের প্রজ্ঞাপনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে থ্রি-হুইলার মালিক-চালক কর্তৃপক্ষ। এদিকে, থ্রি-হুইলারকে অবৈধ বাণিজ্যের চাবিকাঠি বানিয়ে ফায়দা লুটছে জেলা পুলিশ। সবচেয়ে বেশি থ্রি-হুইলার সিএনজি ট্যাক্সি ও ভডভডি চলাচল করছে চট্টগ্রামের কুমিরা থেকে ফেনী পর্যন্ত। প্রশ্ন উঠেছে, গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে থ্রি-হুইলার গাড়ি চলাচল নিষিদ্ধসহ জরিমানা বিধান করা হলেও তা রয়ে গেছে খাতা-কলমে। চট্টগ্রাম থেকে মহাসড়কে ফেনী ঘুরে এসে দেখা গেছে, হাজারো সিএনজি ট্যাক্সি ও ভডভডি চলছে এই মহাসড়কে। মহাসড়কের বাঁকে বাঁকে আকস্মিক মোড় ঘুরিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে পরিবহনের গতিশীলতা। বিশেষ করে ইউনিয়ন পর্যায়ের বাঁকগুলোর শাখা রোড থেকে আচমকা মূল সড়কে উঠে আসছে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে। ফলে ঘটছে অহরহ দুর্ঘটনা। নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ এ যানের চলাচল। বিশেষ করে স্থানীয়দের পরিবহনে এ ধরনের যান ব্যবহার হলেও ইউনিয়ন পরিষদ কিংবা পৌরসভার পক্ষ থেকেও সরকারের নিয়ম মেনে চলার বিষয়টি নিয়ে কোন ধরনের চাপাচাপি নেই। এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ বিভাগের এক প্রকৌশলী জানিয়েছেন, এক প্রশাসন আরেক প্রশাসনকে ঠেকাচ্ছে থ্রি-হুইলার গাড়ি চলাচলে। সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশনাকে ঘিরে চলছে পুলিশের অপতৎপরতা। জেলা পুলিশের আরেকটি অবৈধ আয়ের উৎস সৃষ্টি হয়েছে থ্রি-হুইলার গাড়ির নিষেধাজ্ঞায়। সওজের পক্ষ থেকে থ্রি-হুইলার চলাচলে বাধা দিতে পুলিশ প্রশাসনকে তাগিদ দেয়া হলেও ভেস্তে যাচ্ছে চিঠি চলাচালি। ফলে থ্রি-হুইলার গাড়ির চালক-মালিকরা অবৈধ আয়ের ও সরকারি বিধির ব্যত্যয় ঘটানোর প্রক্রিয়াটিকে ঠেকাতে পেরেছে অর্থ লেনদেনে। গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে থ্রি-হুইলার গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। এ ক্ষেত্রে তিন থেকে দশ হাজার পর্যন্ত আইন অমান্যকারীকে জরিমানা করার বিধান ঠুকে দেয়া হয়েছে। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি পর্যায়ে এসে প্রশাসনে নজরদারি কমে যায় মহাসড়কে। ফলে দেদারসে চলছে থ্রি-হুইলার গাড়ি। গ্রামে-গঞ্জে অলিগলিতে চলার নির্দেশনা দেয়া হলেও থ্রি-হুইলার গাড়ির চালক-মালিকরা পুলিশকে ম্যানেজ করে মহাসড়কে উঠছে। চট্টগ্রামের কালুশাহ মাজার গেটের পর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মূল অবস্থান শুরু। এর আগের অংশটুকু শহরের অবয়বে গড়া। ফলে ফৌজদারহাটের টোল রোড পর্যন্ত থ্রি-হুইলার গাড়ি কখনই বন্ধ হয়নি। কিন্তু ১ সেপ্টেম্বরের পর থেকে প্রায় ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যথেষ্ট কড়াকড়ি ছিল প্রশাসনের। চেকপোস্ট বসিয়ে জেলা পুলিশের বাড়বকু-, সীতাকু-, মীরসরাই, জোরারগঞ্জ, বারৈয়ারহাট, মুহুরীগঞ্জ, ফাজিলপুর, লালপোল ও মহিপাল পর্যন্ত থ্রি-হুইলার গাড়ির চলাচল বন্ধ হয়নি আদৌ। থ্রি-হুইলার গাড়িকে ঘিরে জেলা পুলিশের বাণিজ্যে সরকারের জরিমানার খাতাগুলোকে অলিখিত রেখে দিয়েছে। ফলে পুলিশকে দৈনিক ভিত্তিতে উৎকোচ দিয়ে চলছে মূল পয়েন্টের টার্নিংগুলোতে অবৈধ চলাচল। এছাড়াও পেট্রোল বা ডিজেলের পাম্প মেশিনে তৈরি ভডভডিও সীতাকু- থেকে চট্টগ্রামের বিভিন্ন বাজার, সীতাকু- থেকে মীরসরাই, মীরসরাই থেকে ফেনী অবধি চলাচল করছে। ১ থেকে দেড় টন বহন ক্ষমতার এসব গাড়ির কোন সংকেত বাতি যেমন নেই, তেমনি নেই নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। যে কোন মুহূর্তে মহাসড়কে উঠে আসছে আবার হরহামেশা চলে যাচ্ছে নিজের গন্তব্যে। এ ক্ষেত্রেও পুলিশ নীরব ভূমিকা পালন করছে পকেট বাণিজ্যের বিষয়টি চিন্তা করে। অভিযোগ রয়েছে, থ্রি-হুইলার গাড়ি রাস্তায় উঠলেই জরিমানা করার বিধান থাকলেও তা করছে না পুলিশ। আবার থ্রি-হুইলার গাড়ি না থাকায় বড় গাড়ির চালকরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে পুলিশের পক্ষ থেকে। সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী প্রায় প্রতিদিনই চেকপোস্ট বসিয়ে গাড়ির কাগজপত্র চেকিং থেকে শুরু করে মহাসড়কে না ওঠার পরামর্শ দেয়া হলেও চালক-মালিকের সঙ্গে আঁতাত করেই চলছে এই যান। এরপরও যেসব থ্রি-হুইলার গাড়ি চলছে সেগুলো গ্যাস নেয়ার জন্য বিভিন্ন পাম্পে চলাচল করছে বলে দাবি পুলিশের। এ ব্যাপারে সীতাকু- থানার ওসি জানিয়েছেন, মহাসড়কে থ্রি-হুইলার গাড়ি চলাচলে পুলিশী বাধা অব্যাহত আছে। তবে মহাসড়কে থ্রি-হুইলার গাড়ি চলাচল করলে কত জরিমানা নিতে হবে তা তিনি জানেন না। এ ক্ষেত্রে নগরীর ষোলশহর জেলা ট্রাফিক পুলিশের কার্যালয়ে যোগাযোগ করতে বললেন প্রতিবেদককে।
×