ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

কেউ মানছে না ভার্সিটি কলেজ নাম ব্যবহার না করার নির্দেশ

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ৩০ নভেম্বর ২০১৫

কেউ মানছে না ভার্সিটি কলেজ নাম ব্যবহার না করার নির্দেশ

বিভাষ বাড়ৈ ॥ সরকারী প্রজ্ঞাপনের পর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ। কোন কিছুতেই কাজ হচ্ছে না। ‘বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ’ নাম ব্যবহার বন্ধ করছে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন সরকারী-বেসরকারী স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের কলেজগুলো। ‘বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ’ নাম ব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায়ও বিজ্ঞাপন দিচ্ছে তারা। শিক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠানকে বিশ্ববিদ্যালয় ভেবে ভর্তি হলেও পাস করার পর যথারীতি কলেজ হিসেবেই পাচ্ছে সনদ। তারপরও শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতে সরকারী আদেশ অমান্য করেই প্রতিষ্ঠানগুলো সাইনবোর্ডসহ নিজস্ব কাগজপত্রে ব্যবহার করছে ‘বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ’ শব্দ। এদিকে পরিস্থিতি সামাল দিতে এবার আইন প্রয়োগের হুঁশিয়ারি দিয়ে কলেজের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় শব্দটি ব্যবহার না করার নির্দেশ জারি করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। জানা গেছে, ইতোমধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজস্ব ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত আদেশ প্রকাশ করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কলেজের নামের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় শব্দ জুড়ে দেয়াকে বিধিবহির্ভূত উল্লেখ করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বলেছে, কোন অবস্থাতেই কলেজের নামের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় শব্দটি ব্যবহার করা যাবে না। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম যে নামে অধিভুক্তি লাভ করেছে অথবা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক অনুমোদিত পরিবর্তিত নাম অনুযায়ীই কলেজের কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। এর বাইরে নতুন নামকরণ, সংশোধন ও বিয়োজন করা হলে অধিভুক্তি সংক্রান্ত সংশোধিত রেগুলেশন-২০১৫ এর ২৫ ধারা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। কলেজের নামের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় যুক্ত করার প্রেক্ষাপটে গেল বছর জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংশ্লিষ্ট সকলকে সতর্ক করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ নামকরণ বিভ্রান্তিকর। কোন সরকারী-বেসরকারী কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ হিসেবে নামকরণ করা হয়নি। অধিবেশন চলাকালে এক সাংসদ প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চেয়েছিলেন, তার নির্বাচনী এলাকার সরকারী কলেজে ১৩টি বিষয়ে সরকার অনার্স কোর্স চালু করেছে। এ ধরনের কলেজগুলোকে বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ঘোষণার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে কি না? জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, দেশের কোন সরকারী কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ হিসেবে নামকরণ করা হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ নামে কোন কলেজের নামকরণের বিষয়টি বিভ্রান্তিকর। বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ নামে কোন কলেজের নাম ব্যবহার না করার জন্য ইতোমধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নির্দেশনা দিয়েছে। দেশের যেসব কলেজে অনার্স কোর্স চালু রয়েছে সে কলেজগুলোকে বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ হিসেবে ঘোষণা দেয়ার সরকারের কোন পরিকল্পনা নেই। এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনে জানিয়ে দেয়, ‘বিশ্ববিদ্যালয়’ ও ‘কলেজ’ নামের বাইরে ‘বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ’ নামে সংজ্ঞায়িত কোন কলেজ আক্ষরিক অর্থে নেই। কিন্তু প্রায়ই লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, বিভিন্ন কলেজ, কলেজের সাইনবোর্ড, নামফলক এমনকি বিভিন্ন যোগাযোগ (চিঠিপত্রসহ)Ñ এ অনেক ক্ষেত্রে ‘বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ’ নাম ব্যবহার করছে, যা কোনভাবেই যথার্থ নহে। এমতাবস্থায় সংজ্ঞায়িতভাবে না থাকায় ‘কলেজ’ এর স্থলে ‘বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ’ নামটি ব্যবহার না করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। প্রজ্ঞাপনটি জারির পরই মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) সংশ্লিষ্ট সকলকে বিষয়টি জানিয়ে দিলেও কোন কাজেই আসছে না সরকারের এ নির্দেশনা। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, অনার্স মাস্টার্স আছে এমন কলেজ বিশেষত রাজধানীর কলেজগুলো আদেশ লঙ্ঘনে এগিয়ে আছে সবচেয়ে বেশি। বেসরকারী কলেজগুলো নামের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করার মাধ্যমে শিক্ষা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে নির্বিঘেœ। রাজধানী পল্লবীতে আছে ‘শহীদ জিয়া মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে’। জাতীয় দৈনিকে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে চলে ভর্তি কার্যক্রম। মগবাজারের পাশেই আছে সিদ্ধেশ্বরী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ। ধানম-িতে দেখা যায় ডক্টর মালিকা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, ভর্তি বিজ্ঞপ্তি ছাপা হয়েছে উত্তরা টাউন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, যাত্রাবাড়ীর দনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ও মোহাম্মদপুর মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের নামেও। এভাবেই প্রতিদিন জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলোতে বিজ্ঞাপন দিচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ নামে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আক্ষরিক অর্থে নেই জানিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারিও করে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক অতিরিক্ত সচিব জনকণ্ঠকে বলেন, বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। অনেকেই আদেশ অনুসারে কাজ করছেন না। ইতোমধ্যেই মন্ত্রণালয়ে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। শীঘ্রই মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আবার সকল কলেজ কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি বলা হবে। বলা হবে আপনারা আর ‘বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ’ শব্দ ব্যবহার করবেন না। এভাবে কি বারবার আদেশ জারি করতেই থাকবেন? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, না এবার আইনী ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ বলতে কোন প্রতিষ্ঠান নেই। এভাবে প্রতিষ্ঠানের নাম বলা যাবে না। জানা গেছে, অনার্স ও মাস্টার্স পড়ানো হয় রাজধানীর এমন সরকারী কলেজগুলোর সরকারী কাগজপত্রে বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ না লেখা হলেও কলেজ গেটে, ছাত্রাবাসগুলোতে বা শিক্ষার্থীদের পরিবহনে বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ লেখা রয়েছে। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ রাজধানীর আবুজর গিফারী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, শেখ বোরহানউদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, হাবিবুল্লাহ বাহার ইউনিভার্সিটি কলেজ, ড. মালিকা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, সিদ্ধেশ্বরী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, মির্জা আব্বাস মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, সাভার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, দনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, খিলগাঁও মডেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, তেজগাঁও বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, মিরপুর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, মোহাম্মদপুর মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, ধানম-ি নিউ মডেল বিশ্ববিদ্যালয় (ডিগ্রী) কলেজ, শহীদ জিয়া মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, উত্তরা টাউন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজসহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠান। অধ্যক্ষ বা সংশ্লিষ্টরা অতি উৎসাহী হয়ে অনেক সরকারী কলেজের সঙ্গেও বিশ্ববিদ্যালয় লিখে গেটে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিচ্ছে। অথচ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সনদ পেলে তাতে সঠিকভাবে লেখা থাকছে কেবল কলেজ শব্দটি। কোথাও বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থাকছে না। মূলত রাজধানীসহ দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে প্রতিষ্ঠিত বেসরকারী কলেজগুলো বাণিজ্যিক উদ্দেশে বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ লিখছে বেশি। এতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারী কলেজগুলোতে ভর্তি হতে না পেরে শিক্ষার্থীরা এসব বিশ্ববিদ্যালয় কলেজগুলোতে ভর্তি হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ লেখা থাকায় নিজেদেরও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ভাবতে ভাল লাগছে বলে অনেক শিক্ষার্থী স্বীকার করেছেন। তাদের মতে, বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ দেখেই এসব কলেজে ভর্তি হয়েছেন তারা।
×