ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কুরিয়ারে মাদক পাচার, এক চালানেই আটক লাখ ইয়াবা

প্রকাশিত: ০৬:০২, ৩০ নভেম্বর ২০১৫

কুরিয়ারে মাদক পাচার, এক চালানেই আটক লাখ ইয়াবা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় প্রতিদিনই কুরিয়ার সার্ভিসে নিয়মিত মাদক পাচার করা হয়- এমন তথ্যের ভিত্তিতেই র‌্যাব ওঁৎপেতে ছিল। পর পর তিন দিন অনুসরণ করার পর শনিবার রাতেই ধরা পড়ে কাক্সিক্ষত সেই চালান। এক চালানেই আটকে দেয়া হয় ১ লাখেরও বেশি ইয়াবা। দেশের সেরা বলে দাবিদার একটি কুরিয়ার সার্ভিসের পার্সেল শাখায় অভিযান চালিয়ে ধরা হয় এ চালান। এ ঘটনায় চলছে তোলপাড়। প্রশ্ন উঠেছে- তাহলে কি ওই পরিবহন কুরিয়ার সার্ভিসের আড়ালে এ ধরনের রমরমা মাদক বাণিজ্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। র‌্যাব সদর দফতরের মিডিয়া শাখা থেকে জানানো হয়, এ ধরনের অভিযোগ এবারই প্রথম নয়। এর আগেও মাদকসহ অন্যান্য চোরাই পণ্যের অভিযোগ উঠেছে ঐ পরিবহনের নামে। মূলত কুরিয়ার ব্যবসার আড়ালে মাদক ব্যবসার মুনাফাও আকর্ষণীয় হওয়ায় দিন দিনই বাড়ছে এ ধরনের অভিযোগ। আর মাদক ব্যবসায়ীরাও কুরিয়ারের নামে গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বেছে নিয়েছে নিরাপদ মাধ্যম হিসেবে। ভারতীয় শাড়ি থেকে শুরু করে ইয়াবার চালান এমনকি অস্ত্রের ব্যবসাও চলছে ইমার্জেন্সি সার্ভিসে। সরকারী পোস্ট অফিস ব্যবহার না করে কুরিয়ার সার্ভিসকে বেছে নেয়ার মূল কারণ হচ্ছে কম সময়ের মধ্যে সরবরাহ। শনিবার রাতে মাদকের বড় চালান পাচারের ঘটনায় ঐ পরিবহনের নামে মাদক ব্যবসার অভিযোগ উঠেছে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব সেভেন সদস্যরা সন্ধ্যা থেকেই ওই পরিবহনের একটি গুদাম ঘর পাহারা দিয়ে আসছিল ছদ্মবেশে। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পরও ১ লাখ পিস ইয়াবার চালানের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করতে পারেনি। তবে কৌশলে কাঠের আলমিরাতে সিলিংয়ের ওপর সংরক্ষণ করা ইয়াবার চালান উদ্ধার করেছে র‌্যাব সদস্যরা। চট্টগ্রাম থেকে মাকসুদ আহমদ জানান, বছর কয়েক আগেও গোয়েন্দা পুলিশের একটি টিম অবৈধভাবে আসা বিপুল পরিমাণ শাড়ি ও থ্রি পিসের একটি চালান আটক করে ঐ পরিবহনের কাজির দেউরি শাখা থেকে। অভিযোগ রয়েছে, ঐ পরিবহনের চট্টগ্রামস্থ বিভিন্ন শাখায় ছোটখাট পার্সেলের প্যাকেটও খুলে দেখাতে বাধ্য করা হয় প্রেরককে। সেখানে আস্ত একটা আলমিরায় প্রায় ৩ কোটি টাকা মূল্যের ইয়াবার চালান পাচার হচ্ছে তা না জানার পেছনে উদ্দেশ্য কি। আবার প্রেরক ও প্রাপকের মোবাইল নাম্বার বন্ধ থাকার পেছনেও কৌশল কাজ করেছে বলে ধারণা র‌্যাব কর্মকর্তাদের। কারণ, অভিযানের পর পরই ওই মোবাইল নম্বরগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। ইয়াবার চালান সম্পর্কে জ্ঞাত হয়ে উক্ত পরিবহনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পার্সেল বুকিং দিয়েছে কিনা তা তদন্তের মাধ্যমে খোলস উন্মোচন করা প্রয়োজন। এর আগেও যেহেতু ঐ পরিবহনের কাউন্টারের মাধ্যমে ভারতীয় অবৈধ পণ্যের চালান চট্টগ্রামে এসেছে। নগরীর ডবলমুরিং থানাধীন ধনিয়ালাপাড়াস্থ এসএ পরিবহনের পার্সেল সেন্টার থেকে এ ধরনের ইয়াবার চালান উদ্ধারের ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মাঝে। কুরিয়ার ব্যবসার অন্তরালে মাদকের ব্যবসায় রমরমা হয়ে যাওয়া প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠলেও সম্পৃক্তদের গ্রেফতার করতে না পারায় প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে র‌্যাব। কারণ, র‌্যাবের গোয়েন্দা টিম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করলেও চট্টগ্রাম থেকে নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশে গুদাম থেকে প্রেরণের অপেক্ষায় থাকা আলমিরার প্রাপককে গ্রেফতার করতে পারেনি। ফলে প্রশ্ন উঠেছে মাদক চালানের পাচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা হাতছাড়া হওয়ায়। র‌্যাব-৭ এর প্রেস ব্রিফিং থেকে জানা গেছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতেই র‌্যাব শনিবার সন্ধ্যা থেকে ধনিয়ালাপাড়াস্থ ঐ পরিবহনের পার্সেল শাখা হিসেবে খ্যাত ওই শাখাটিতে অপেক্ষায় ছিল র‌্যাব সেভেনের একটি অভিযান টিম। রাত সাড়ে ৯টার দিকে ওই সেন্টারের ব্যবস্থাপককে চ্যালেঞ্জ করেই গোপন সংবাদের অস্তিত্ব খুঁজতে অভিযান চালানো হয় একটি কাঠের আলমিরাতে।
×