ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ছেলেবেলা ও ছাত্রজীবন

প্রকাশিত: ০৪:০৯, ১ ডিসেম্বর ২০১৫

ছেলেবেলা ও ছাত্রজীবন

ঢাকায় ছাত্রজীবনের সূচনা (৩০ নবেম্বরের পর) গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকের আওয়ামী লীগের অর্থমন্ত্রী শহীদ এএসএম কিবরিয়া ছিলেন ভাল ছাত্র এবং রাজনৈতিকভাবে সচেতন থাকা সত্ত্বেও তিনি ছাত্র রাজনীতিতে মোটেও সক্রিয় ছিলেন না। আমাদের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী প্রয়াত সাইফুর রহমান ছিলেন প্রথম বর্ষের ছাত্র এবং খুবই পড়ুয়া ও রাজনীতিতে অনীহাসম্পন্ন ছাত্র। তারা দু’জনই গ্রেফতার হন। কিবরিয়া সাহেবের ঘরে কার্ল মার্কসের একটি বই ছিল। সুতরাং তাকে মনে করা হয় একজন কম্যুনিস্ট। সাইফুর রহমান প্রশ্ন করেছিলেন যে, কেন এই আক্রমণ? তবে তার ঘরে ২/১টি প্রচারপত্র পাওয়া যায়। এ রকম অনেক নিরীহ ছাত্র গ্রেফতার হয়। পুলিশের তালিকায় যেসব ছাত্রনেতা ছিলেন তাদের মধ্যে সলিমুল্লাহ হলের ক্রীড়া সম্পাদক একরামুল আমিন সব সময় তাদের পেছনে পেছনে থাকেন। কিন্তু তাকে চিনত না বলে তিনি গ্রেফতার হননি। একরামুল আমিন অবশ্য সলিমুল্লাহ হলের প্রধান নেতা ছিলেন। এই একরামুল আমিন জীবনে সফল ছিলেন এবং সম্ভবত পূর্ব পাকিস্তান শিল্প সংস্থায় রসায়ন প্রকৌশলী বিভাগে একজন বড় কর্তা ছিলেন। বহু বছর পর আশির দশকে তার বড় বোনের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। তখন জানতে পারি যে, একরামুল আমিন ২৫ তারিখের পুলিশ আক্রমণ থেকে রক্ষা পেলেও ঘটনাটি তাকে দারুণভাবে বিধ্বস্ত করে এবং অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী হন। সুস্থ হবার পর তার বড় ধরনের স্মৃতি বিভ্রম হয় এবং তিনি ফেব্রুয়ারি মাসের কোন ঘটনাই তার জীবনে আর মনে করতে সক্ষম হননি। যা হোক, পুলিশ মোট ২৫ জন ছাত্র এবং হাউস টিউটর মফিজ উদ্দিনকে গ্রেফতার করে। তাদের যখন কয়েদী ভ্যানে উঠাল তখন তাদের নামে মুহুর্মুহু স্লোগান উঠল। এই ২৬ তারিখেই কতিপয় অধ্যাপক এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ চৌধুরী ও মুনীর চৌধুরী ছাড়াও অধ্যাপক পি সি চক্রবর্তী, জগন্নাথ কলেজের অধ্যাপক অজিত কুমার গুহ, বরিশালের পরিষদ সদস্য সতীন্দ্রনাথ সেন এদিন গ্রেফতার হন। আগের দিন পরিষদ সদস্য আব্দুর রশীদ তর্কবাগিশ, খয়রাত হোসেন, মনোরঞ্জন ধর এবং গোবিন্দ লাল ব্যানার্জীও গ্রেফতার হন। সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটির সহ-সভাপতি আবুল হাশেমও ২৫ তারিখে গ্রেফতার হন। ২৯ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জের মর্গান হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মোমতাজ বেগমকে গ্রেফতার করা হয়। এদের অনেকেই বহুদিন কারাবন্দী ছিলেন। ২৭ তারিখে সরকারী হুকুমে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেয়া হলো এবং ছাত্ররা তখন দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ল। এতে কিন্তু সরকারেরই ক্ষতি হলো। কারণ, সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে এসব ছাত্র নুরুল আমিন সরকারের বিরুদ্ধে নানা ধরনের প্রচারণায় অংশগ্রহণ করে। মোমতাজ বেগম ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস থেকে বহুদিন নির্বাসিত ছিলেন। তাকে ইতিহাসে ফিরিয়ে নিয়ে আসি আমি ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। সে সময় বিভুরঞ্জন সরকার একটি আলোচনা সভার ব্যবস্থা করেন, যার বিষয়বস্তু ছিল ‘ভাষা আন্দোলনে মহিলা’। সেখানে আমি আমন্ত্রিত হই সিলেটে মহিলাদের অগ্রণী ভূমিকার কারণে। সিলেটে আমার চাচিসম বেগম জোবেদা রহিম চৌধুরী ও আমার আম্মা সৈয়দ শাহার বানু চৌধুরী এবং খালাসম সৈয়দ লুতফুন্নেসা চৌধুরী মূল্যবান ও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন ১৯৪৮ ও ১৯৫২ সালে। সেই আলোচনায় আমি মোমতাজ বেগমের কথা বলি। কারণ প্রচারণাকালে আমি নারায়ণগঞ্জে তার স্কুলে যাই। চলবে...
×