ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশের দৃষ্টান্ত অনুসরণের আহ্বান

ধরিত্রী রক্ষায় প্যারিসে জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলন শুরু

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ১ ডিসেম্বর ২০১৫

ধরিত্রী রক্ষায় প্যারিসে জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলন শুরু

কাওসার রহমান, প্যারিস (ফ্রান্স) থেকে ॥ প্যারিস হারেনি, হেরেছে সন্ত্রাস। রক্তক্ষয়ী সন্ত্রাসী হামলার পরও ফ্রান্সের রাজধানীতে প্রায় ১৫০টি দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের উপস্থিতিতে শুরু হয়েছে জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলন। সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ ধরিত্রী এবং ভবিষ্যত প্রজন্মকে বাঁচানোর জন্য একটি সর্বজনীন জলবায়ু চুক্তিতে উপনীত হওয়ার জন্য বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলনে যোগ না দিলেও সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উচ্চারিত হয়েছে বাংলাদেশের নাম। দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশের দৃষ্টান্তকে কাজে লাগানোর আহ্বান জানানো হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর প্রতি। প্যারিসে বিশ্বের ১৫০ দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান একযোগে একত্রিত হয়ে সন্ত্রাসীদের ঔদ্ধত্যকে নাকচ করে দিয়ে সূচনা করেছেন এক ঐতিহাসিক জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলন। তারা জলবায়ু পরিবর্তন রোধে একটি সর্বজনীন চুক্তিতে উপনীত হওয়ার মানসিকতা নিয়ে বিশ্ব মানবিকতার আশাবাদকে নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। সোমবার সকাল ১১টায় প্যারিসের লা বারগেট সম্মেলন কেন্দ্রে শুরু হয়েছে ১৯৭টি দেশের অংশগ্রহণে জাতিসংঘের দুই সপ্তাহব্যাপী বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ১৫০টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান যোগ দেন। এই রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধানদের মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা থেকে শুরু করে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন, চীনের প্রেসিডেন্ট ঝি জিনপিং, জার্মানির চ্যান্সেলর এ্যাঞ্জেলা মার্কেল, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ, এমনকি আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্টও এ সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সফর বাতিল করার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী গুরুত্বপূর্ণ এ সম্মেলনের অপার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। জাতিসংঘ বলছে, বিশ্বের ইতিহাসে একদিনে কোন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বিশ্বের সর্বোচ্চসংখ্যক রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান একত্রিত হয়েছেন। সোমবার সকাল ১১টায় প্যারিসের লা বারগেট কনফারেন্স সেন্টারে শুরু হয়েছে ১৯৭টি দেশের অংশগ্রহণে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন। জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন কোন দেশের সীমান্তকে সম্মান করে না। ফলে বিশ্বের অনেক দেশ, অগণিত মানুষ এই নীরব ঘাতকের শিকার হচ্ছে।’ তিনি বিজ্ঞানীদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, বিজ্ঞানীরা পরিষ্কার করে বলেছেন বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তন ঘটছে। এটা মানুষের জীবনধারাকে পরিবর্তন করে দিচ্ছে। তাই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমাতে আমাদের উন্নত দেশগুলোর জীবনধারাকে পরিবর্তন করতে হবে। চলুন আমরা আমাদের জীবনধারাকে সুসংহত করতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় একযোগে কাজ করি। বান কি মুন বিশ্ব নেতৃবৃন্দের উদ্দেশে বলেন, এই ধরিত্রী এবং ধরণীর ভবিষ্যত প্রজন্ম আপনাদের হাতে। এই ধরণীর ভবিষ্যত সম্পর্কে আপনাদেরই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আপনারাই পারেন প্যারিসে একটি অর্থবহ ও গতিশীল জলবায়ু চুক্তিতে উপনীত হতে। প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনের সভাপতি ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লরেন্ট ফেবিয়াস তার উদ্বোধনী বক্তৃতায় জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বাংলাদেশের দৃষ্টান্ত টেনে আনেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ বড় বড় ৯টি প্রাকৃতিক দুর্যোগ অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে মোকাবেলা করেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঝুঁকিপূর্ণ ও ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো বাংলাদেশের এই দৃষ্টান্তকে অনুসরণ করতে পারে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সভাপতি ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাদ বলেন, ‘পৃথিবীর ইতিহাসে এত উচ্চপর্যায়ের আন্তর্জাতিক বৈঠক আর হয়নি। যেখানে বিশ্বের ১৫০টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান উপস্থিত হয়েছেন। কারণ একটাই সবাই এই পৃথিবী ও পৃথিবীর ভবিষ্যত জীবন নিয়ে চিন্তিত। মানব জাতির সকল আশা আজ আমাদের কাছে।’ প্রথা ভেঙ্গে এবার লিডার্স ইভেন্টের মাধ্যমে এবার জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলন শুরু করা হয়েছে। যাতে সম্মেলনে আগাত বিশ্ব নেতৃবৃন্দ শুরুতেই বক্তৃতা করে সম্মেলনের আলোচনায় দিকনির্দেশনা দিতে পানের। ফলে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর পরই শুরু হয় বিশ্ব নেতৃবৃন্দের বক্তৃতা। প্রথমেই বক্তৃতা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তার বক্ততার পর পরই বক্তৃতা করেন জার্মানির চ্যান্সেলর এ্যাঞ্জেলা মার্কেল, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন প্রমুখ। তারা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন সন্ত্রাসীদের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তাই প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ১৩০ ব্যক্তির সম্মানে হলেও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় একটি চুক্তিতে উপনীত হওয়ার আহ্বান জানান। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বিশ্ববাসীকে আশ্বস্ত করে বলেন, ‘আমরা প্রধান দুই কার্বন নির্গমনকারী দেশ জলবায়ু পরিবর্তন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে আমাদের দায়িত্ব নির্ধারণ করেছি।’ তিনি সম্ভাব্য প্যারিস চুক্তিকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করেন। সন্ত্রাসী হামলার কারণে প্যারিসে জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনকে সফল করতে প্যারিসে কঠোর নিরাপত্তা বলায় তৈরি করা হয়েছে। বিশ্ব নেতাদের উপস্থিতির কারণে গত দুইদিন প্যারিস শহরে সব ধরনের বেসরকারী যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। শুধু চালু রাখা হয়েছে সরকারী যানবাহন তথা বাস ও মেট্রো সার্ভিস। অবশ্য প্যারিসবাসীর চলাচলের জন্য এই দুইদিন তাদের যানবাহনে চলাচল ফ্রি করে দিয়েছে সরকার।
×