ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

দ্রুত সিদ্ধান্ত আসবে, বাধা কমবে

নির্বাহী কাজে গতি আনতে মন্ত্রিসভা ও সচিব কমিটি

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ১ ডিসেম্বর ২০১৫

নির্বাহী কাজে গতি আনতে মন্ত্রিসভা ও সচিব কমিটি

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ সরকারের দুই মন্ত্রণালয়ের মধ্যে বিরোধ হলে আদালতে না গিয়ে নিজেরাই তা নিষ্পত্তি করার জন্য দুটি কমিটি গঠনের প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রণালয়কে গতিশীল এবং আরও কর্মক্ষম করে তুলতে এ উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এ লক্ষ্যে সচিব কমিটি ও মন্ত্রিসভা কমিটি নামে পৃথক দুটি কমিটি গঠনের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি মন্ত্রিসভা দেড় হাজার মিটার বা তার চেয়ে বড় দৈর্ঘ্যরে সেতু-টানেল ও ফ্লাইওভারসহ এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সেতু বিভাগের ওপর ন্যস্ত করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ আইন-২০১৫ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়। এ বিষয়ে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার জনকণ্ঠকে বলেন, এটি সরকারের একটি ভাল উদ্যোগ। এতে আন্তঃমন্ত্রণালয় সমস্যা আনেকাংশে কমে আসেব। তিনি বলেন, অতীতে এ জাতীয় সমস্যা সমাধানে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ উদ্যোগ নিত। এখন এর জন্য সুর্নিদিষ্ট কমিটি গঠন করা হচ্ছে। আশা করি, এর মাধ্যমে ভাল কিছু আসতে পারে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আন্তঃমন্ত্রণালয় সমস্যা নিরসনের লক্ষ্যে সচিব কমিটি ও মন্ত্রিপরিষদ কমিটি গঠিত হলে মন্ত্রণালয়গুলোতে কাজের গতি বেড়ে যাবে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে আন্তঃমন্ত্রণালয় সমস্যার কারণে কোন কোন ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হয় না। কিন্তু এ কমিটি কার্যকরী হলে কোন মন্ত্রণালয়কে এ জাতীয় সমস্যায় আর সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে হবে না। এছাড়া এ জাতীয় সমস্যার কারণে দেখা যায় কোন কোন মন্ত্রণালয় বা দফতর বা অধিদফতরে কোটি কোটি টাকার মোবাইল বিল, বিদ্যুত বিল, গ্যাস বিল অনাদায়ী রয়ে যায়। সে সকল সমস্যাও এ মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব হবে। আন্তঃমন্ত্রণালয় সমস্যার কারণে কোন কোন ক্ষেত্রে দেশের রাজস্ব আদায়েও সমস্যা তৈরি হয়। উন্নয়নমূলক অনেক কাজও বাধাগ্রস্ত হয়ে থাকে। এ জাতীয় নানা সমস্যা সমাধান করা যাবে এ কমিটির মাধ্যমে। আন্তঃমন্ত্রণালয় বিরোধ নিয়ে কোন কোন ক্ষেত্রে আদালতেও মামলা গড়িয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে বছরের পর বছর এ সব মামলা চলতে থাকে। এতে সংশ্লিষ্ট কাজ-কর্ম বছরের পর বছর আটকে থাকে। কিন্তু কমিটি গঠন করা হলে, প্রয়োজন অনুযায়ী যথা সময়ে তা নিরসন করে দ্রুত সংশ্লিষ্ট কাজ-কর্ম সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, দুই মন্ত্রণালয়ের মধ্যে কোন সমস্যা দেখা দিলে আদালতে না গিয়ে তারা সরাসরি এ কমিটির (সচিব) কাছে নালিশ করবে। এই কমিটি যদি নিষ্পত্তি করতে না পারে, তাহলে সেটা মন্ত্রিসভা কমিটিতে যাবে। সেটাই হলো আপীল কর্তৃপক্ষ। এরপর কেউ চাইলে আদালতেও যেতে পারবে। বিরোধ নিষ্পত্তিতে যেসব মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে আদালতে গেছে, তারাও এ কমিটিতে আসতে পারবে জানিয়ে সচিব বলেন, সেক্ষেত্রে মামলা প্রত্যাহার করা হবে। শফিউল আলম বলেন, ‘আন্তঃমন্ত্রণালয় আইনগত বিরোধ নিষ্পত্তি কমিটি’ নামে সচিব কমিটির প্রধান হবেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সংস্কার ও সমন্বয়)। পাঁচ সদস্যের এ কমিটিতে আরও থাকবেন আইন ও বিচার বিভাগের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন প্রতিনিধি, যিনি অন্তত মহাপরিচালক পদমর্যাদার হবেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্ম-সচিব (সমন্বয়) এ কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া যেসব মন্ত্রণালয়ের বিরোধ, তাদের সচিব বা প্রতিনিধিও কমিটিতে থাকবেন। কমিটি প্রয়োজন মনে করলে কাউকে সদস্য হিসেবে নেয়ার পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ মতামত নিতে পারবে। আর আপীল কমিটিতে সরকারের একজন জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী সভাপতি হবেন। এর সদস্য হবেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, মুখ্য সচিব বা প্রধানমন্ত্রীর সচিব, আইন সচিব ও সচিব সমন্বয়। বিরোধ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবরাও কমিটিতে থাকবেন। কোন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বিরোধ দেখা দিলে এ কমিটি এড়িয়ে অন্য কোন মন্ত্রণালয় সরাসরি আদালতে যেতে পারবে কি-না জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, কেউ যাতে এভাবে আদালতে যেতে না পারে, সেজন্য একটি অনুশাসন জারি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সকল মন্ত্রণালয়কে জানিয়ে দেয়া হবে যে তাদের আগে এ কমিটিগুলোতে আসতে হবে। সেখানে সন্তুষ্ট না হলে আদালতে যাওয়ার সুযোগ তো আছেই। মূলবিষয় হলোÑ আপীলে যে সিদ্ধান্ত হবে, সেটা চূড়ান্ত। এরপর আর কোথাও যাওয়ার কথা নয়। ডিসিপ্লিনের জন্য। বর্তমানে সরকারের দফতরগুলোর মধ্যে কতগুলো মামলা চলছে তার কোন পরিসংখ্যান জানাতে না পারলেও সচিব বলেন, সংখ্যাটি অনেক। কমিটি করার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অফিসের অনুশাসন হলো, দুই মন্ত্রণালয় একে অপরের সহযোগী। তারা বিবাদে লিপ্ত হবে কেন? আমরা বিরোধে লিপ্ত হব না। নিজেদের মধ্যে আপোসে এটা নিষ্পত্তি করব। সেতু কর্তপক্ষ আইন ॥ দেড় হাজার মিটার বা তার চেয়ে বড় দৈর্ঘ্যরে সেতু-টানেল ও ফ্লাইওভারসহ এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সেতু বিভাগের ওপর ন্যস্ত করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ আইন-২০১৫ এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম জানান, এক হাজার ৫০০ মিটার বা তার চেয়ে বড় দৈর্র্ঘ্যরে সেতু ও টানেল, টোল সড়ক, ফ্লাইওভার, এক্সপ্রেসওয়ে ও এ্যালিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ সেতু বিভাগের আওতায় থাকবে বলে আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে। এছাড়া সেতু কর্তৃপক্ষের আওতাধীন স্থাপনা ও সংরক্ষিত অংশের জন্য এর ব্যবহাকারী কোন সংস্থা-ব্যক্তি বা যানবাহনের ওপর ফি বা টোল ধার্য ও আদায়ের দায়িত্বও কর্তৃপক্ষের আওতায় থাকবে। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ সেতু বিভাগের অধীনস্ত একটি স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা। আর সড়ক পরিবহন ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২০০৮ সালে গঠিত হয় সেতু বিভাগ। আইনের খসড়ায় বলা হয়, কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম পরিচালনার ভার থাকবে প্রশাসন বোর্ডের ওপর। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীকে চেয়ারম্যান এবং সেতু বিভাগের সচিবকে ভাইস-চেয়ারম্যান করে ১৫ সদস্যের এ বোর্ড গঠিত হবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রশাসন বোর্ড কর্তৃপক্ষের আওতাধীন স্থাপনাগুলো নির্ধারিত শর্তে ও সময়ের জন্য কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে ইজারা দিতে পারবে। বোর্ডকে সেতু কর্তৃপক্ষের তহবিলের অংশ বিশেষ বিভিন্ন লাভজনক খাতে বিনিয়োগ করার ক্ষমতাও দেয়া হয়েছে। খসড়ায় কর্তৃপক্ষের একজন নির্বাহী পরিচালক রাখার কথা বলা হয়েছে, যাকে সরকারের নির্ধারিত নিয়মে নিয়োগ দেয়া হবে। শফিউল আলম বলেন, নির্বাহী পরিচালক বোর্ডের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নসহ কর্তৃপক্ষের কাজ পরিচালনা করবেন। তহবিলের ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কাজের দায়িত্বও তার ওপর থাকবে। কর্তৃপক্ষের আওয়াতাধীন স্থানে কোন ব্যক্তি যানবাহন চলাচলে বাধা সৃষ্টি করলে, সীমানা প্রাচীর বসালে, কোন সংকেত বা বিজ্ঞপ্তি ধ্বংস বা অপসারণ করলে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে খসড়ায়। আর কেউ কর্তৃপক্ষের কোন আদেশ অমান্য করলে সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা যাবে বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান। মন্ত্রিসভার নির্ধারিত আলোচনার আগে এদিন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব আবু বকর সিদ্দিকের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব পাস হয়। তার আত্মার শান্তি কামনা করে মন্ত্রিসভা। এছাড়া শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খান এবং নৌ-পরিবহন সচিব শফিক আলম মেহেদির অবসর উপলক্ষে দীর্ঘ চাকরিজীবনের অবদানের জন্য তাদের অভিনন্দন জানানো হয়।
×