ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে ‘উল্লম্ফন’

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১ ডিসেম্বর ২০১৫

মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে ‘উল্লম্ফন’

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে বিভিন্ন পণ্য আমদানিতে ঋণপত্র (এলসি) খোলার পরিমাণ আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১৫ শতাংশ বেড়েছে। একই সঙ্গে নিষ্পত্তি বেড়েছে ২৫ শতাংশ। এ সময়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি হয়েছে মূলধনী যন্ত্রপাতি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পদ্মা সেতুসহ সরকারের বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নকে ঘিরে দেশে বিনিয়োগের ধারা আবারও শুরু হয়েছে। উদ্যোক্তারা এ সুযোগ কাজে লাগাতে চাইছেন বলেই শিল্প স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধনী যন্ত্রপাতির (ক্যাপিটাল মেশিনারিজ) আমদানি বেড়েছে বলে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) মোট এক হাজার ৩১৯ কোটি ৪৫ লাখ (১৩ দশমিক ১৯ বিলিয়ন) ডলারের এলসি খোলা হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৭ শতাংশ কম। জুলাই-অক্টোবর সময়ে জ্বালানি তেল আমদানিতে এলসি খোলা কমেছে ৪৬ শতাংশ; খাদ্যপণ্যে কমেছে ৩০ শতাংশ। অন্য মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির ক্ষেত্রে প্রবণতা ঠিক এর উল্টো। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই-অক্টোবর সময়ে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য মোট ১২০ কোটি ১৩ লাখ ডলারের এলসি খোলা হয়েছে। নিষ্পত্তি হয়েছে ১১৪ কোটি ৫৭ লাখ ডলারের। প্রতিবেদনে দেখা যায়, চাল, গম, ডাল, দুগ্ধজাত খাবার ও চিনি আমদানি বাবদ খরচ কম হয়েছে। তবে এ সময়ে শিল্পের মধ্যবর্তী কাঁচামাল, মূলধনী যন্ত্রপাতি, কয়লা, পেপার এ্যান্ড পেপার বোর্ড আমদানি গত বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। গত বছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে এলসি খোলার পরিমাণ ছিল ১০৪ কোটি ৪৪ লাখ ডলার। নিষ্পত্তি হয়েছিল ৯১ কোটি ৭৩ লাখ ডলারের। তথ্য অনুযায়ী, গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির এলসি খোলার পরিমাণ বেড়েছিল ৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এলসি নিষ্পত্তি বেড়েছিল ২৮ দশমিক ২০ শতাংশ। চলতি বছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে মূলধনী যন্ত্রপাতির মধ্যে বাংলাদেশের রফতানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্প খাতের মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি বেড়েছে ৩০ শতাংশ। ট্যানারি শিল্পে বেড়েছে ৫০ শতাংশের বেশি। ওষুধ শিল্পে বেড়েছে ২৫ শতাংশ। এছাড়া প্যাকেজিং, কৃষি এবং সিরামিক শিল্পে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি বেড়েছে। তবে টেক্সটাইল ও পাট শিল্পে কমেছে। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক জায়েদ বখত রবিবার বলেন, পদ্মা সেতু, মগবাজার-মালিবাগ-মৌচাক ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল এবং কয়েকটি বড় বিদ্যুত কেন্দ্রের কাজ শুরু হয়েছে। এ সব ‘মেগা প্রকল্পের’ কাজ শেষ হলে দেশে শিল্প খাতের ব্যাপক প্রসার ঘটবে। এসব বিবেচনায় নিয়েই আমাদের ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরা বিদ্যমান শিল্প প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি নতুন নতুন শিল্পের জন্য ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আমদানি করছেন। ভবিষ্যত ব্যবসা মাথায় রেখেই তারা এটা করছেন। আর দেশে ‘স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশে’ বিরাজ করায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে সেই আস্থা ফিরতে শুরু করেছে বলে তিনি মনে করেন। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ এ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মহাব্যবস্থাপক কাজী ছাইদুর রহমান বলেন, এ ধরনের কয়েকটি অভিযোগ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আসায় তদন্ত করে সত্যতা খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কোন অবস্থাতেই যাতে অর্থ পাচার না হয় সেজন্য এখন বেশ কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।
×