ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার আঞ্চলিক যোগাযোগ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে চায়;###;সহযোগিতা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক, এডিবি, ইআইবি

প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য অর্জনে বাণিজ্য বাড়ানোর কৌশল

প্রকাশিত: ০৪:২২, ২ ডিসেম্বর ২০১৫

প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য অর্জনে বাণিজ্য বাড়ানোর কৌশল

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ২০২০ সালের মধ্যে ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে প্রবৃদ্ধি বাড়াতে আঞ্চলিক সম্ভাবনা কাজে লাগানো হচ্ছে। এ লক্ষ্যে আঞ্চলিক যোগাযোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে বাণিজ্য বাড়ানোর কৌশল নিয়েছে সরকার। তাছাড়া এ ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকসহ উন্নয়ন সহযোগীদের পরামর্শকে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। হাতে নেয়া হচ্ছে এ সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রকল্প। এ বিষয়ে ঢাকায় নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর জোহানেস জাট বলেন, দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে বাংলাদেশকে রফতানি বাড়াতে হবে। এ ক্ষেত্রে বড় মাঝারি ও ছোট সব বাজারেই রফতানি বৃদ্ধির প্রচেষ্টা চালাতে হবে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ পোশাক শিল্পে সাফল্য লাভ করেছে। কিন্তু অন্যান্য শিল্পেও সফলতা আনতে পারে। প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য অর্জন করতে হলে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক বাণিজ্য বৃদ্ধিতে নজর দিতে হবে। সূত্র জানায়, সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত ডায়াগনস্টিক ট্রেড ইন্টিগ্রেশন স্টাডি শীর্ষক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক বাণিজ্য বিশেষ করে দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোতে বাণিজ্য সম্প্রসারণের মাধ্যমে বাংলাদেশ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে। প্রতিবছর যে ২০ লাখ যুবক কর্মের বাজারে প্রবেশ করছে তাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য এই বাজার একটি সম্ভাবনা। স্টাডিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্ব দেয়া উচিত বাণিজ্য সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়ানোর প্রতি। রফতানি প্রবৃদ্ধি দ্রুত বাড়াতে হলে বাংলাদেশকে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বজার বহুমুখীকরণ করতে হবে। সেই সাথে রফতানি পণ্যের তালিকা বাড়াতে হবে। বলা হয়েছে, শ্রমিকদের সুযোগ বৃদ্ধির পাশাপাশি ক্রেতা আকর্ষণে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়াতে হবে। তাছাড়া প্রতিবেশী বাজারের প্রতিযোগিতাপূর্ণ পরিবেশে সাফল্যজনকভাবে রফতানি বাড়াতে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি করা যেতে পারে। এতে বলা হয়েছে, সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ বিভিন্ন খাত উন্নয়নে বড় ধরনের ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে প্রযুক্তি, ওষুধ, বাইসাইকেল এবং জাহাজ নির্মাণ শিল্পে। বাংলাদেশের প্রয়োজন হচ্ছে প্রতিবেশী দেশ যেমন চীন ও ভারত, অন্যান্য এশিয়ান দেশ যেমন দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের সঙ্গে নিবির যোগাযোগ গড়ে তোলা। কারণ এসব দেশে বাজার সম্প্রসারণের যেমন সুযোগ রয়েছে, তেমনি সরাসরি বিদেশী বিনিযোগ আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ আনতে বাংলাদেশকে যেসব উদ্যোগ নিতে হবে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, জমির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত ও গ্যাস সরবরাহ, চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা, ঢাকা চট্টগ্রাম রোড এবং রেল করিডর উন্নত করা এবং স্থল ও সমুদ্র বন্দরগুলোকে দ্রুত কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স করার ব্যবস্থা করা। অন্যদিকে বাংলাদেশকে ট্রান্স এশিয়া রেলওয়ে সংযোগ এবং এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত করতে রেল ও সড়ক খাতের অগ্রাধিকার প্রকল্প প্রণয়নে ২৪০ কোটি টাকা সহায়তা দিচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। মূলত এডিবির এ অর্থ আঞ্চলিক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে সম্ভাব্যতা যাচাই, বিস্তারিত নকশা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নে সহায়তা সংক্রান্ত কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। এসব কার্যক্রমের আওতায় তিন প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে- আঞ্চলিক রেল যোগাযোগের প্রকল্প প্রস্তাব তৈরিতে সহায়তা, ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল প্রকল্প প্রস্তুতিমূলক সুবিধার জন্য কারিগরি সহায়তা এবং আঞ্চলিক সড়ক যোগাযোগের প্রকল্প প্রস্তাব তৈরিতে সহযোগিতা প্রদান। প্রকল্প তিনটি বাস্তবায়ন করবে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এবং বাংলাদেশ রেলওয়ে। এগুলোতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার। এর মধ্যে এডিবি সহজ শর্তে ৩ কোটি ডলার ঋণ দেবে। অবশিষ্ট ব্যয় বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব খাত থেকে অর্থায়ন করা হবে। এ বিষয়ে এডিবির ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়েনচাই চ্যাং সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর শেষে বলেছেন, প্রবৃদ্ধি বাড়াতে আঞ্চলিক যোগাযোগ বা রিজিওনাল কানেক্টিভিটি বাড়ানোর উপর জোড় দেয়া উচিত। বাংলাদেশ বেশ কয়েকটি খাতে বেশ অগ্রগতি সাধন করেছে। তবে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনে আরও বেশ কিছু সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিতে হবে। এজন্য যোগাযোগ, প্রযুক্তি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবায় এডিবি তাদের সহায়তা বাড়াবে। এছাড়া সাউথ এশিয়ান সাবরিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশনের আওতায় রেলওয়ে যোগাযোগ উন্নয়নে ঋণ দিচ্ছে এডিবি। এ লক্ষ্যে ৫০ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার (প্রায় ৪ হাজার ৪০০ কোটি টাকা) ঋণ চুক্তি সম্প্রতি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এডিবির দেয়া এ ঋণ ৫ বছর গ্রেস পিরিয়ডসহ ২৫ বছরে পরিশোধযোগ্য। অর্ডিনারি ক্যাপিটেল রিসোর্সেস (ওসিআর) ঋণের সুদের হার লন্ডন ইন্টার ব্যাংক অফার্ড রেট (লাইবর) ভিত্তিক এবং এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিএফ) ঋণের সুদের হার ২ শতাংশ। রেলপথ মন্ত্রণালয় এ প্রকল্পের উদ্যোগী মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ রেলওয়ে বাস্তবায়নকারী সংস্থা।
×