ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আলোচনায় দিবারাত্রির টেস্ট;###;মোঃ নুরুজ্জামান

সিরিজ অস্ট্রেলিয়ার

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ২ ডিসেম্বর ২০১৫

সিরিজ অস্ট্রেলিয়ার

ডিনার শেষ শেষ হতেই সত্যিকারের দিবারাত্রির আমেজ। ভুল নয়, ঠিকই পড়ছেন ‘ডিনার’! অনেক প্রথমের দিবারাত্রির টেস্টে সর্বশেষ অবদান, টেস্ট ক্রিকেটের প্রথম ডিনার সেশন। প্রথাগত লাঞ্চ বিরতির জায়গায় চা-বিরতি, আর চা-বিরতির জায়গায় ডিনার! টেস্ট ম্যাচে ফ্লাডলাইট জ্বলে উঠলে এমনটাই হওয়ার কথা!! এ যে ইতিহাসের নতুন এক দিকের উন্মোচন। এ্যাডিলেডের কৃত্রিম আলোয় প্রথমবারের মতো গোলাপি বলে টেস্ট খেলল দুটি আন্তর্জাতিক দল। ম্যাচের আর সব ছাপিয়ে যেখানে সব আলো কেড়ে নেয় দিবারাত্রির আয়োজন। ২৭ নবেম্বর- দুটি সেশন ফুরোবার পরই আগমন সেই মাহেন্দ্রক্ষণের, যখন আলোর নিচে টেস্টের নাচন, গ্যালারিতে ঔজ্জ্বল্য ছড়াল দর্শক। ৪০ মিনিটের ডিনার বিরতির পর দু-দল মাঠে নামতেই অভিনব সেই দৃশ্য। ওভাল ঘিরে জ্বলছে ফ্লাডলাইট। ৪৪ হাজারেরও বেশি দর্শকের সামনে সাদা পোশাক গায়ে গোলাপি বলে ‘ব্যাট-বলের’ কাব্য। ফ্লাডলাইটে প্রথম পেসার হিসেবে বলটা করেন অস্ট্রেলিয়ার পিটার সিডল। আর সেটি খেলার সৌভাগ্য হয় প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ডের বিজে ওয়াটলিংয়ের। তবে জস হ্যাজলউডের নামটিই হয়ত ইতিহাস হয়ে থাকবে। শুরুতে মার্টিন গাপটিলকে এলবিডব্লিউ করে দিবারাত্রির টেস্টের প্রথম উইকেটি নেন তিনিই । ও হ্যা খেলা শুরুর আগে অকাল প্রয়াত ফিলিপ হিউজেসকে স্মরণ করতেও ভুল হয়নি অসিদের। মাঠের ক্রিকেটার থেকে শুরু করে গোটা গ্যালারি দাঁড়িয়ে ছিল শ্রদ্ধাবনত মাথায়। ঐতিহাসিক দিবারাত্রির টেস্ট মাঠে গড়ানোর দিনটাই যে ছিল হিউজেসের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। জ্বলে ওঠে ফ্লাডলাইট, বোলারের হাত থেকে ছুটে আসে গোলাপি বল। ইতিহাসের সাক্ষী হয় এ্যাডিলেড। এ্যাডিলেড ওভালে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় ও শেষ টেস্টে আর সবই ছিল গৌণ। আলোচনায় কেবলই ‘দিবারাত্রির’ আয়োজন। ঐতিহাসিক এ টেস্টে নিউজিল্যান্ডকে ৩ উইকেটে হারিয়ে ২-০তে তিন ম্যাচের সিরিজ জিতে নিল অস্ট্রেলিয়া। দুই ইনিংসে সফরকারী কিউইরা অলআউট হয় ২০২ ও ২০৮ রানে। তৃতীয় দিন ৭ উইকেট হারিয়ে জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ১৮৭ রান তুলে নেয় অসিরা। প্রথম ইনিংসে স্বাগতিকদের সংগ্রহ ছিল ২২৪ রান। ১০ উইকেট নিয়ে আলোচিত এই টেস্টে ম্যাচসেরা পেসার জস হ্যাজলউড। আর দুরন্ত ব্যাটিংয়ে সিরিজসেরা হয়েছেন তারকা ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার। ব্রিসবেনের প্রথম টেস্টে ২০৮ রানে জিতেছিল স্টিভেন স্মিথের দল। আর পার্থে রান-বন্যার দ্বিতীয় ম্যাচ ড্র হয়। ১৩৮ বছরের ইতিহাসে নতুন ধারার সাক্ষী হয় এ্যাডিলেড। গোলাপি বলে ফ্লাডলাইটের আলোয় প্রথম বারের মতো অনুষ্ঠিত হলো দিবারাত্রির টেস্ট। এ আয়োজন ঘিরে আলোচনা-সমালোচনার কমতি ছিল না। পক্ষে বিপক্ষে মত দিয়েছেন ক্রিকেটের বড় বড় রথী-মহারথী। তবে দিবারাত্রির টেস্টের পক্ষে কথা বললেন সাক্ষী হওয়া দুই অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ ও ব্রেন্ডন ম্যাককুলাম। যদিও বোলারদের দাপটে মাত্র তিন দিনেই জয় তুলে নেয় স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া। তিন ম্যাচের সিরিজ ২-০তে জিতে নেয় স্মিথ-বাহিনী। ‘এটা ছিল অসাধারণ এক অভিজ্ঞতা। তিন দিনে শেষ হওয়া কোনো টেস্ট ম্যাচে ১,২০,০০০ দর্শক উপস্থিতি সত্যি এ্যামেজিং।’ বলেন বিজয়ী অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক স্মিথ। এ্যাডিলেডে তিন দিনে মোট ১,২৩,৭৩৬ জন দর্শক খেলা উপভোগ করেন। যেখানে ইতিহাসের অংশ হতে প্রথম দিনই উপস্থিত হন ৪৭,৪৪১ জন; ১৯৩২-৩৩এর পর এ্যাডিলেডে যা দর্শক উপস্থিতির নতুন রেকর্ড। বিষয়টা সামনে উঠে আসার কারণটা অনুমেয়। ওয়ানডে ও টি২০র দাপটে গত কয়েক বছর ধরে টেস্টের ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে আসছিলেন অনেকে। দর্শক সংখ্যা বাড়াতে তাই অভিনব এই দিবারাত্রির টেস্টের আয়োজন। যাতে অফিস বা দিনের কাজ শেষ করে বিকেলে ও সন্ধ্যায় দর্শক মাঠে হাজির হতে পারেন। সে লক্ষ্যে অনেকটাই সফল এই আয়োজন। সফরকারী অধিনায়ক ম্যাককুলাম যেমন বলেন,‘টেস্টকে আকর্ষণীয় কর তুলতে এটি যুগান্তকারী এক পদক্ষেপ। এটা ভাবা যায় তিন দিনে ১,২০,০০০ মানুষ মাঠে এসেছে? যার অর্থ দর্শক ধারণাটা গ্রহণ করেছে। এটা তারই প্রমাণ। ভবিষ্যতে আমরা আরও বেশি করে এ ধরনের ম্যাচ চাইব। কেবল অস্ট্রেলিয়া নয়, নিউজিল্যান্ডেও যেন দিবারাত্রির টেস্টের আয়োজন হয়। দর্শক এ আয়োজনকে ভালভাবে গ্রহণ করেছে বলে উল্লেখ করেন আয়োজক দেশ অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের (সিএ) নির্বাহী প্রধান জেমস সাদারল্যান্ড। তিনি বলেন, ‘এটা উপযুক্ত সময়ের দারুণ এক আয়োজন। যেটিকে দর্শক লুফে নিয়েছে। এত মানুষ উপস্থিত হয়ে বুঝিয়েছেন যে, তারা আরও দিবারাত্রির ম্যাচ দেখতে চান।’ আলোচিত দিবারাত্রির টেস্টে সবচেয়ে বিশ বিতর্ক হয়েছে গোলাপি বল নিয়ে। সদ্য অবসরে যাওয়া অস্ট্রেলীয় ওপেনার ক্রিস রজার্স যেমন বলেন,‘আমাকে পরিষ্কারভাবে বলটা দেখতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। ঠিক লাল বলের মতো পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছিলাম না। একটু ঝাপসা মনে হচ্ছিল, যা কখনেই আদর্শ হতে পারে না।’ গোলাপি বলে অনুশীলনের অভিজ্ঞতা থেকে একথা বলেন তিনি। ডেভিড হাসি তো পরীক্ষামূলক নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া একাদশের মধ্যকার প্রস্তুতি ম্যাচটিতে মাঠেই ছিলেন। তিনি বলেন,‘এটা ৮০ ওভারের মতো টেকসই নয়। ম্যাচে আমাদের দুবার বল বদল করতে হয়েছিল। সুতরাং আমার মনে হয়, দেরি হওয়ার আগেই ভাবার প্রয়োজন আছে!’ তবে ম্যাচ শুরুর আগেও নিজেদের পক্ষে দৃঢ় ছিলেন বলটির প্রতিষ্ঠা কোম্পানি কোকাবুরার ম্যানেজিং ডিরেক্টর ব্রেট এলিয়ট,‘শেষ পাঁচ বছর ধরেই অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া ক্রিকেটে এমসিস, ইসিবি ও সিএ গোলাপি বলে প্রচুর সংখ্যক ম্যাচ খেলেছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আত্মপ্রকাশের জন্য এটি এখন পুরোপুরি প্রস্তুত। যদিও অনেকে বলটির দৃশ্যমানতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আসছিলেন। কিন্তু আমরা প্রাকৃতিক রং ব্যবহার করেছি। ফলে এটা আগের চেয়েও উজ্জ্বল হয়েছে। এছাড়া যত ভাবে সম্ভব বলটিকে পরীক্ষা করা হয়েছে।’ বল যদি ঝামেলাই করত, অবশ্যই সেটি অধিনায়ক টের পেতেন। এ নিয়ে বরং এতটুকু অভিযোগ নেই স্মিথ ও ম্যাককুলামের।
×