ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ: চার সরকারী কর্মকর্তাকে সম্মাননা দিল কানাডা

প্রকাশিত: ০০:৪৮, ২ ডিসেম্বর ২০১৫

বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ: চার সরকারী কর্মকর্তাকে সম্মাননা দিল কানাডা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সাফল্য দেখানো সত্ত্বেও বাল্যবিবাহে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষ দেশের একটি। এখনো মাত্র ১৫ বছর বয়সেই দেশের ২৯ শতাংশ কন্যা শিশুর বিয়ে হয়ে যায়। গ্রাম এলাকায় বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ছে। কিন্তু শহরাঞ্চলে বাল্যবিবাহের প্রবণতা বাড়ছে; যা উদ্বেগজনক। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে স্কুলশিক্ষক ও সরকারী কর্মকর্তাদের আরও বেশি আন্তরিক ভূমিকা পালন করতে হবে। দেশে ৭৩ শতাংশ নারী সাইবার সহিংসতার শিকার। তাই বাল্যবিবাহসহ নারীর প্রতি সব ধরনের সহিংসতারোধে সাইবার সিকিউরিটিও নিশ্চিত করা জরুরী। বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস-২০১৫’ উপলক্ষে আয়োজিত এক সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিরা এসব কথা বলেন। ঢাকাস্থ কানাডা হাইকমিশন এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। নিজ নিজ কমিউনিটিতে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে উজ্জ্বল ভূমিকা রাখায় চার বাংলাদেশি সরকারি কর্মকর্তাকে অনুষ্ঠানে সম্মাননা দেয়া হয়। সম্মাননাপ্রাপ্তরা হলেন- বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ গউস, খুলনা জেলা প্রশাসক মোস্তফা কামাল, জামালপুর জেলা প্রশাসক মো. শাহাবুদ্দিন খান এবং সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ ফারুক আহমেদ। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম তাদের হাতে সম্মাননা সনদ তুলে দেন। এসময় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক রবার্ট ওয়াটকিনস ও ঢাকাস্থ কানাডার হাইকমিশনার বেনুয়া পিয়ের লাঘামে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, কন্যা শিশু ও নারীর অধিকার সুরক্ষায় পর্যাপ্ত আইন রয়েছে। কিন্তু এগুলোর যর্থাথ প্রয়োগ সব সময় হয় না। দেখা গেছে, পরীক্ষায় নম্বর পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রভাব রাখার আশঙ্কা থেকে ইভটিজিং, বাল্যবিবাহ, মানসিক নির্যাতনসহ বিভিন্ন সমস্যার বিষয়ে মেয়েরা স্কুল শিক্ষকের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করতে চায় না। তাদের এ মানসিক দ্বন্দ্বের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সরকার প্রতিটি স্কুলে একজন মনোবিদ বা কাউন্সেলর নিয়োগের চিন্তাভাবনা করছে; যারা এসব বিষয়ে মেয়েদের মনোবল বাড়াতে সাহায্য করবেন। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ আইনের খসড়ায় ১৬ বছর বয়সে মেয়েদের বিয়ের অনুমতির বিশেষ বিধান থাকা প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আশঙ্কার কিছু নেই। এটি এখনো চূড়ান্ত অনুমোদন পায় নি। ব্যক্তিগতভাবে ও একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমি মনে করি, মেয়েদের বিয়ের সর্বনিম্ন বয়স ১৮-ই থাকা উচিত। বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন সারা বিশ্বে প্রশংসিত হচ্ছে উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। টোল ফ্রি হেল্পলাইনের মাধ্যমে এর মধ্যে ২৪৩টি বাল্যবিবাহ বন্ধ করা গেছে। এখন আমাদের সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার মেয়েদের আত্মহত্যার কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ৭৩ শতাংশ নারী ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে হয়রানি, মানহানি ও সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। এসব মাধ্যমের অপব্যবহার বন্ধে সরকার ইন্টারনেট ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণে আনতে চায়। এর ধারাবাহিকতায় পাঠানো ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আগামী ৬ অথবা ৭ ডিসেম্বর ঢাকায় ফেসবুকের একটি টিমের সঙ্গে এসব বিষয়ে বৈঠক করবেন বলেও জানান তারানা। অনুষ্ঠানে কানাডার হাইকমিশনার বলেন, বাংলাদেশ সরকার বাল্যবিবাহ বন্ধে অঙ্গীকারবদ্ধ। এ লক্ষ্য অর্জনে সরকারি কর্মকর্তাদের অঙ্গীকার অপরিহার্য। টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হচ্ছে বাল্যবিবাহ নির্মূল করা। এটি সহজসাধ্য কোনো কাজ নয়। কানাডা এক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করে যাবে। রবার্ট ওয়াটকিনস বলেন, বাল্যবিবাহ ও আত্মহত্যার মধ্যে একটি কার্যকারণ সম্পর্ক রয়েছে। দেখা গেছে, বাংলাদেশে ৫০ শতাংশ আত্মহত্যাকারী মেয়ে বাল্যবিবাহের শিকার। শহরাঞ্চলেও দিন দিন বাল্যবিবাহের প্রবণতা বাড়ছে। এমন প্রেক্ষাপটে খসড়া আইনে থাকা মেয়েদের বিয়ের বয়স কমানোর বিষয়টি সরকার গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
×