মোঃ রফিকুল ইসলাম
স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মের ৪৫ বছরে দেশ অনুন্নত থেকে উন্নয়নশীল, উন্নয়নশীল থেকে আজ নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হলেও সমস্ত মানুষের ভাগ্য সমান্তরালভাবে পরিবর্তিত হয়নি। বাংলাদেশের শহর-নগর-বন্দরে ক্রমবর্ধমান হারে ভাসমান বা ছিন্নমূল মানুষের উপস্থিতি তারই প্রমাণ। বাংলাদেশে নদী-ভাঙ্গন ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষ হারাচ্ছে তার বাস্তুভিটা, জীবিকার তাগিদে পাড়ি জমাচ্ছে নগরে-বন্দরে কিন্তু মিলছে না নতুন বাস্তুভিটা, বাধ্য হয়ে মানুষ বসবাস করছে রাস্তা-ঘাটে, ফুটপাথে, রেল স্টেশনে, বাস টার্মিনালে, বিপণীবিতানে, ফ্লাইওভারের নিচে, পরিত্যাক্ত ভবনে, পার্কে, মাঠে ও বস্তিতে; এরাই ভাসমান বা ছিন্নমূল মানুষ। একটি অসমাজতান্ত্রিক দেশে মানুষে মানুষে ধন-সম্পদে অসমতা থাকবে তা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু, বিবিধ কারণে মানুষ ছিন্নমূল হয়ে ভাসমান মানবতের জীবন-যাপন করবে তা অত্যন্ত অমানবিক । যেসমস্ত কারণে মানুষজন ছিন্নমূল ও ভাসমান, তা হলো- চরম দারিদ্র্য, বেকারত্ব, চড়া সুদের নিষ্পেষণ, প্রাকৃতিক দূর্যোগÑ বিশেষ করে নদী-ভাঙ্গন। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে, প্রতিবছর প্রায় ৬০ হাজার মানুষ উদ্বাস্তু হচ্ছে নদী-ভাঙ্গনের কারণে। যা একটি পরিবেশগত ও প্রাকৃতিক একটি সমস্যা। সাম্প্রতিককালে এর সাথে যোগ হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা। সারাবিশ্বে ক্রমবর্ধমান হারে কার্বণ ডাইঅক্সাইডের নিঃসরণ ও বনজ সম্পদ উজাড়ের ফলে জলবায়ুর উষ্ণতা বেড়েছে বিপজ্জনক হারে। এর প্রভাবে পর্বতশৃঙ্গ ও সমুদ্রপৃষ্ঠের বরফরাজি দ্রুত গলে বাড়িয়ে দিচ্ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের পানির উচ্চতা। ফলে, তলিয়ে যাচ্ছে ও লবণাক্ত হচ্ছে উপকূলীয় এলাকার ফসলী জমি ও আবাসস্থল, ধংসপ্রাপ্ত হচ্ছে উপকূলীয় এলাকার কৃষি ব্যবস্থা ও অবকাঠামো। মানুষ হচ্ছে উদ্বাস্তু ভাসমান। তারা জানছেই না কাদের ভোগ-বিলাসিতায় আর কার্বণ নিঃসরণে তাদের কপাল পুড়েছে। এ পরিস্থিতির অন্যতম নিষ্ঠুর শিকার আজ বাংলাদেশ। ভাসমান মানুষের উল্লেখযোগ্য অংশ হচ্ছে জলবায়ু উদ্বাস্তু। দেশে এখন ভাসমান মানুষের সংখ্যা প্রায় ৪৮ লাখ, বেসরকারী হিসাবে তা প্রায় ১ কোটি। শুধু ঢাকা শহরেই বস্তিবাসী মানুষের সংখ্যা প্রায় ৩৫ লাখ এবং সম্পূর্ণ বাস্তুহীন ভাসমান মানুষের সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ। ভাসমান এ মানুষজনের চরম দুর্দশা ও সৃষ্ট নাগরিক ও সামাজিক সমস্যা উপহাস করছে আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও নগরের চাকচিক্যকে। নেত্রকোণা থেকে
শীর্ষ সংবাদ: