ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্যারিসে সফল জঙ্গী হামলা সম্পর্কে তদন্তকারীদের অভিমত

গোয়েন্দা নজরদারিতে ঘাটতি

প্রকাশিত: ০৩:৫৫, ৩ ডিসেম্বর ২০১৫

গোয়েন্দা নজরদারিতে ঘাটতি

প্যারিসে গত মাসে সংঘটিত রক্তক্ষয়ী হামলার রেশ এখনও কাটেনি। সব হামলাকারী এখনও ধরা পড়েনি। অনেকেই এখনও পলাতক রয়েছে। এদের মধ্যে একজন হামলার পর পর ঘটনাস্থল ঘুরে দেখে গেছে বলেও জানা গেছে। প্যারিসে ১৩ নবেম্বর হামলার কিছুৃ পরের ঘটনা। সময় তখন রাত ১০টা। আবদেল হামিদ আবাউদ ভাড়া করা কারটি বাড়ির বাইরে পার্ক করে রাখেন। তিনি থাকতেন প্যারিসের মন্ট্রেউইল শহরতলীতে। বাসার মধ্যে কালাশনিকভ রাইফেলটি নামিয়ে রেখে বেরিয়ে পড়েন অজানা গন্তব্যের উদ্দেশে। মাত্র আধ ঘণ্টা আগেই তিনি ওই কালাশনিকভ রাইফেলটি দিয়ে ব্যাপক গুলিবর্ষণ করেন বলে ধারণা করা হয়। নিরাপত্তা ক্যামেরাগুলো যে তার প্রতিটি পদক্ষেপ নজরদারি করছে সেটি বোধহয় তিনি খেয়াল করেননি। সেখান থেকে ৯ নম্বর সাবওয়ে (পাতাল রেল) ধরেন। তিনি শহরের যে অংশটিতে ফিরে আসেন সেটি এখনও নিরাপত্তা বাহিনী অবরুদ্ধ করে রেখেছে। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ওই রাতের মধ্যেই আবাউদ তার গ্রুপের হামলা শিকার ক্যাফে ও থিয়েটার হলগুলোর পাশ দিয়ে হেঁটে পার হয়ে গেছেন। আবাউদের গ্রুপটি ইউরোপের মাটিতে গত এক বছরে চারবার হামলার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। প্রতিটি ভুল থেকে কিছু না কিছু তারা শিখেছে। শেষ পর্যন্ত তারা একটি বড় রকম অঘটন ঘটাতে সক্ষম হয়। আবাউদ শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্তে এলেন যে, এখন সময়টি ভিন্ন। জঙ্গী হামলা চালিয়ে বিশ্বজুড়ে সাড়া ফেলে দিতে হলে এটিই উপযুক্ত সময়। আক্রমণকারী গ্রুপটিকে কাছে থেকে নেতৃত্ব দেন আবাউদ। তার গ্রুপের মধ্যে যেমন ছিল পুরনো বন্ধু তেমনি ছিল চরমপন্থায় দীক্ষিতরা। আক্রমণকারী প্রত্যেকে স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণ করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিল। আক্রমণ স্থল হিসেবে বেছে নেয়া হয় ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের ব্যস্ততম একটি বাণিজ্যিক এলাকা। বেলজিয়ামে জন্মগ্রহণকারী ২৮ বছর বয়সী আবাউদ ছিলেন ইসলামিক সেস্টের (আইএস) একজন পদাতিক সৈন্য। পরে তার পদোন্নতি ঘটে। তিনি জঙ্গী সংগঠনটির লেফটেন্যান্ট বনে যান। পশ্চিমা গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পরপর চারবার ব্যর্থতার পর বড় ধরনের কিছু একটা করে দেখানোর জন্য আবাউদের ওপর চাপ ছিল। ফ্রান্সের অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাস দমন বিষয়ক ইউনিটের সাবেক প্রধান লুই কাপ্রিওলি জানিয়েছেন, চারটি হামলাই তার বাহিনী ২০১৫ সালে ঘটিয়েছে। সবগুলোই ব্যর্থ হয়েছে এবং চরম বিব্রতকরভাবে ব্যর্থ হয়। প্যারিসে ১৩ নবেম্বর হামলার দু’সপ্তাহ পরে নিহত ১৩০ জনকে সমাধিস্থ করা হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে হামলায় অংশগ্রহণকারী পুরো গ্রুপটি সম্পর্কে পুলিশ পর্যাপ্ত তথ্য সংগ্রহ করে। এরা সংখ্যায় ছিল নয় জন। এই ভয়াবহ ঘটনা কিভাবে তারা ঘটাতে পারল কোথায় কোথায় ছিল নিরাপত্তা ঘাটতি সে সম্পর্কে অনেক কিছু এখন জানা যাচ্ছে। গোয়েন্দা নজরদারিতে ঘাটতি পুরোপুরি কাজে লাগিয়েছে আইএস জঙ্গীরা। তদন্তকারীর এখন আবাউদের গ্রুপের আগের হামলাগুলো বিশ্লেষণ করে দেখছে, কিভাবে নিজেদের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে তারা নিজেদের দক্ষতা বাড়িয়ে ছিল। ফ্রান্সে অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাস দমন বিভাগ হামলা হতে পারে বারংবার এ ধরনের ইঙ্গিত হওয়ার পরও তাতে কান দেয়নি। যে কারণে তারা অনেকটা নিশ্চিত একই সঙ্গে একাধিক স্থানে সুসংগঠিতভাবে হামলা চালাতে পেরেছে।এ বছর জানুয়ারিতে বেলজিয়ামের ভেরভিয়ের্স শহরের পুলিশ একটি গোপন জঙ্গী আস্তানায় হানা দিয়ে তাদের একটি হামলার ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিয়েছিল। -ইন্টারন্যাশনাল নিউইয়র্ক টাইমস।
×