ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আওয়ামী লীগ অফিস মুখর থাকলেও বিএনপি কার্যালয়ে হাতাহাতি

মনোনয়ন চূড়ান্ত করেও ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী নিয়ে শঙ্কায় বড় দু’দল

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ৩ ডিসেম্বর ২০১৫

মনোনয়ন চূড়ান্ত করেও ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী নিয়ে শঙ্কায় বড় দু’দল

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ সরগরম তৃণমূলের রাজনীতি। দেশের ইতিহাসে এবারই প্রথম দলীয় প্রতীকে মেয়র নির্বাচন হচ্ছে। ২৩৫ পৌরসভায় দলীয় প্রার্থিতা চূড়ান্ত করে দল মনোনীত মেয়র প্রার্থীদের অনুকূলে প্রতীক বরাদ্দের প্রত্যয়নপত্র বিতরণও বুধবার শেষ করেছে দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। কাল শুক্রবার থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে নৌকা, ধানের শীষ, লাঙ্গলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মার্কা নিয়ে নির্বাচনী জনপ্রিয়তার লড়াই। প্রার্থিতা চূড়ান্ত করলেও দেশের বিভিন্নস্থানে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীর আশঙ্কায় বড় দু’দলই নিচ্ছে কঠোর ব্যবস্থা। দু’দলেরই নীতিনির্ধারকদের দাবি, এখন অনেক জায়গায় বিদ্রোহী প্রার্থী থাকলেও মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পর কোথাও তা থাকবে না। তবে এবার স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত দলগতভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এবার জোটের বাইরে এককভাবেই পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। অন্যদিকে বিএনপি নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় শেষ পর্যন্ত জোটগতভাবেই নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জামায়াত এবার দলভিত্তিক নির্বাচনে অংশ নিতে না পারায় ‘দাঁড়িপাল্লা’র বদলে কয়েকটি স্থানে ‘ধানের শীষ’ নিয়েই মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার চেষ্টা করছে। অন্যদিকে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি এবং ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটে থাকা ১৪ দল স্ব স্ব নির্বাচনী প্রতীক নিয়ে আলাদাভাবেই কয়েকটি পৌরসভায় প্রার্থী দিচ্ছে বলে জানা গেছে। তবে এবারের দলভিত্তিক প্রথম নির্বাচনে মূলত লড়াই হবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীদের মধ্যে। জাতীয় নির্বাচনের আদলে প্রথম দলভিত্তিক পৌর নির্বাচনে উভয় দলই বেশ চ্যালেঞ্জ নিয়েই নির্বাচনী মাঠে মুখোমুখি হচ্ছে। এদিকে চূড়ান্ত প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দের প্রতীক বরাদ্দকে কেন্দ্র করে গত দু’দিন ধরেই মনোনীত মেয়র প্রার্থী, নেতাকর্মী সমর্থক ও শুভাকাক্সক্ষীদের ভিড়ে মুখরিত ধানম-ির আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার এবং গুলশানের বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়। মনোনয়ন প্রক্রিয়া শুরু থেকেই আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয় জমজমাট থাকলেও দীর্ঘ প্রায় ৯ মাস ধরে অনেকটাই পরিত্যক্ত হিসেবে থাকা খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলটির নেতাকর্মীদের পদভারে মুখরিত ছিল। প্রত্যয়নপত্র সংগ্রহকালে আওয়ামী লীগের ধানম-ির অফিস মুখরিত থাকলেও বিএনপি কার্যালয়ে মনোনয়ন প্রত্যাশী কিছু প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে বেশ কয়েক দফা হাতাহাতি, হৈ-হট্টগোল, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে ক্ষণে ক্ষণেই ওই এলাকায় উত্তেজনা দেখা যায়। এই দুই রাজনৈতিক কার্যালয় থেকেই চূড়ান্ত প্রার্থীরা প্রত্যয়নপত্র সংগ্রহ করে ফিরে গেছেন স্ব স্ব নির্বাচনী এলাকায়। সেদিক থেকে জাতীয় পার্টি, জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, সিপিবিসহ নিবন্ধিত অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যালয়ে তেমন কোন ভিড় লক্ষ্য করা যায়নি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকায় বেশ ক’জন বিতর্কিত ও অজনপ্রিয় প্রার্থী মনোনয়ন পাওয়ায় ওইসব এলাকায় কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ক্ষোভ, অসন্তোষ এবং কোথাও কোথাও প্রতিবাদ-বিক্ষোভের ঘটনাও ঘটেছে। তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি রাজনৈতিক কৌশলগত কারণে কেউ-ই আনুষ্ঠানিকভাবে গণমাধ্যমে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশে অপারগতা প্রকাশ করে। প্রসঙ্গত, আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় ২৩৫ পৌরসভায় নির্বাচনে আজ ৩ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন। এবারই প্রথম দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের অংশ হিসেবে মেয়র নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার হচ্ছে। আওয়ামী লীগের প্রত্যয়নপত্র বিতরণ শেষ ॥ আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার লক্ষ্যে দল মনোনীত প্রার্থীদের দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার স্বাক্ষরিত প্রত্যয়নপত্র (মনোনয়ন) বিতরণ শেষ করেছে আওয়ামী লীগ। রীতিমতো উৎসবমুখর পরিবেশে মঙ্গলবার গভীর রাত প্রায় অধিকাংশ প্রত্যয়ন বিতরণ শেষ করেন দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। বুধবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত দলীয় সভানেত্রীর ধানম-ির রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে এসব ফরম বিতরণ শেষ করা হয়। প্রত্যয়নপত্র সংগ্রহকালে মেয়র প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকদের সেøাগানে সেøাগানে দিনভর মুখরিত থাকে ধানম-ির আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয় ও এর আশপাশের এলাকায়। আজ বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ দিন আনুষ্ঠানিকভাবে দলের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে ঘোষণা করার আভাস দিয়েছেন দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। ফরম বিতরণকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ঠেকাতে তারা সতর্ক আছেন। বিষয়টি গভীরভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে। জোটগতভাবে নির্বাচন না করার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রত্যেকটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের স্বকীয়তা বজায় রাখা, বিকাশ ও শ্রীবৃদ্ধির জন্য পৌর নির্বাচনে জোটগতভাবে যায়নি আওয়ামী লীগ। এভাবে সব নির্বাচন জোটবদ্ধভাবে করলে জোট এক সময় জড় বস্তুতে পরিণত হবে। তফসিল ঘোষণার পর গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করে আওয়ামী লীগ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তৃণমূল থেকে পাঠানো নাম থেকে কেন্দ্র নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করবে। তৃণমূল থেকে আসা প্রস্তাব নিয়ে সোমবার গণভবনে বৈঠকে বসেছিল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড। তবে ওই বৈঠকের পরও চূড়ান্ত তালিকা করা যায়নি। মনোনয়ন বোর্ডের একাধিক সদস্য জানান, প্রতিটি পৌরসভায় একজন করে প্রার্থীর তালিকা নিয়ে বৈঠকটি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে তা হয়নি। শতাধিক পৌরসভায় একাধিক নাম এসেছে। কোন কোনটিতে সাতটি পর্যন্ত নাম এসেছে। কিছু কিছু স্থানে বিএনপি থেকে সদ্য আওয়ামী লীগে যোগ দেয়া ব্যক্তির নামও এসেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব বিতর্কিতদের ভাগ্যে দলীয় মনোনয়ন জুটেনি। বেশকিছু পৌরসভায় তৃণমূল নেতারা অপেক্ষাকৃত অজনপ্রিয় ও মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়-স্বজন কিংবা নিকটজনদের একক প্রার্থী করে তালিকা কেন্দ্রে পাঠালেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে থাকা মাঠ জরিপ বিশ্লেষণকালে এসব অসঙ্গতি ধরা পড়ে। সেক্ষেত্রে তৃণমূলের পাঠানো প্রার্থীর বদলে জরিপে এগিয়ে থাকা ত্যাগী নেতারাই শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত তালিকায় স্থান পেয়েছেন। মনোনয়ন বোর্ডের দু’জন নেতার দাবি, এরকম প্রায় অর্ধশতাধিক পৌরসভাতে তৃণমূলের সুপারিশের বাইরে জরিপে এগিয়ে থাকা জনপ্রিয় নেতারাই দলের সমর্থন পেয়েছেন। মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে নয়টার পর থেকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয় হতে মেয়র পদে মনোনয়নের প্রত্যয়নপত্র প্রার্থীদের হাতে তুলে দেয়া শুরু হয়। অনেক প্রার্থী সরাসরি আবার অনেকে মনোনীত ব্যক্তির মাধ্যমে প্রত্যয়নপত্র সংগ্রহ করে। আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদকদের নেতৃত্বে ওই কার্যালয় হতে প্রত্যয়নপত্র বিতরণ শুরু হয় এবং তা প্রায় রাত আড়াইটা পর্যন্ত চলে। তবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে কোন তালিকা সরবরাহ করা হয়নি। বুধবার এ বিষয়ে জাহাঙ্গীর কবির নানক সাংবাদিকদের জানান, বিচ্ছিন্নভাবে বিতরণকৃত নামগুলোর তালিকা চূড়ান্ত করে গণমাধ্যমে পাঠানো হবে। তবে তার কোন সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বলতে পারেননি তিনি। যদিও আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি ধানের শীষ প্রতীকের মেয়র প্রার্থীদের নাম মঙ্গলবারই গণমাধ্যমে সরবরাহ করা হয়। বিকেলে ফরম বিতরণকালে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, দলীয়ভাবে একক প্রার্থী দিলে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মধ্যে সাংগঠনিক তৎপরতা ও রাজনৈতিক চর্চার বিকাশ ঘটবে। জোটের বাইরে গিয়ে একক প্রার্থী দেয়ায় জোটে কোন সমস্যা হবে কি নাÑ জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোন ধরনের সমস্যা হবে না। জোট হচ্ছে আমাদের আদর্শের লড়াই। বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে কেউ নির্বাচন করলে দলীয়ভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে কি নাÑ জানতে চাইলে তিনি বলেন, দলের গঠনতন্ত্র মোতাবেক আমরা এগিয়ে যাব। আওয়ামী লীগের এই কেন্দ্রীয় নেতা আরও বলেন, আমরা চেষ্টা করছি যাতে কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী না হন। এ ব্যাপারে আমরা সতর্ক আছি। দেশের নির্বাচন কমিশন (ইসি) অত্যন্ত স্বাধীন। আমরা আশা করি, ইসি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান করবে। তিনি আরও বলেন, আমরা এ নির্বাচনে একটি শরিক দল হিসেবে আমাদের যথাযথ ভূমিকা পালন করবো। এ কথা এর আগেই আমাদের প্রতিনিধি দল গিয়ে ইসিকে বলে এসেছে। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আফম বাহাউদ্দিন নাসিম, কার্যনির্বাহী সদস্য সুজিত রায় নন্দী প্রমুখ। বিএনপিরও প্রত্যয়নপত্র বিতরণ শেষ, হাতাহাতি, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ॥ আসন্ন পৌরসভার দলীয় মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে প্রত্যয়নপত্র বিতরণ শেষ করেছে বিএনপি। আগের দিন ৬ বিভাগের প্রার্থীদের মধ্যে মনোনয়নপত্র বিতরণ শেষে বুধবার ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের প্রার্থীদের মধ্যে বিতরণের মধ্য দিয়ে এ কাজ শেষ করা হয়। দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তদের মধ্যে প্রত্যয়নপত্র বিতরণকে কেন্দ্র করে বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয় ছিল জমজমাট। আর নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে এ কার্যালয় প্রাঙ্গণ ছিল উৎসবমুখর। তবে বিচ্ছিন্নভাবে ক’জন দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সমর্থকদের মধ্যে হৈ-হট্টগোল, হাতাহাতি ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এদিকে দলীয় প্রতীকে প্রথমবারের মতো পৌরসভা নির্বাচনকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে বিএনপি। এ জন্যই দল মনোনীত প্রার্থীদের পক্ষে সকল বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশনা দিয়ে সকল জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে চিঠি পাঠিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। ওই চিঠিতে সংশ্লিষ্ট এলাকার দল মনোনীত মেয়র প্রার্থীর নামও রয়েছে। কেউ দলের চেয়ারপার্সনের নির্দেশনা অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার কথাও এ চিঠিতে রয়েছে বলে জানা গেছে। জানা যায়, সারাদেশের ৩৩৫ পৌরসভার মধ্যে বুধবার পর্যন্ত ৩৩১টি পৌরসভার মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে মনোনয়নপত্র বিতরণ করা হয়েছে। বাকি ৪টি আজ বৃহস্পতিবার দেয়া হতে পারে। তবে এ ৪টি জামায়াতকে দেয়া হতে পারে। মেয়র পদ ২০ দলীয় জোটের শরিকদের মধ্যে ইতিমধ্যেই এলডিপিকে চট্টগ্রামের চন্দনাইশ ও জাতীয় পার্টিকে (কাজী জাফর) ও কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা পৌরসভায় মেয়র পদ ছেড়ে দিয়েছে বিএনপি। আজ সারাদেশের সকল পৌরসভায় একযোগে বিএনপি দলীয় মেয়র প্রার্থীরা তাদের মনোনয়নপত্র জমা দেবেন। বিএনপির নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দল এখন চরম ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। দেশব্যাপী টানা আন্দোলনের পর নেতাকর্মীদের নামে অসংখ্য মামলা দেয়া হয়। অনেক নেতাকর্মী এখনও কারাগারে। নতুন করে গ্রেফতার আতঙ্কে অনেকেই আত্মগোপনে। এমন পরিস্থিতিতে পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। তাই দলের এই ক্রান্তিকালে সবাই যাতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করেন সেই ব্যাপারে নানা পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এ নির্বাচনে ভাল ফল করতে না পারলে বিএনপি রাজনৈতিকভাবে সঙ্কট কাটাতে পারবে না। তাই এ নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা। বুধবার পৌর নির্বাচনে দলের পক্ষ থেকে দলীয় চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে মনোনয়ন চাইতে আসা বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে বিচ্ছিন্নভাবে হৈ-হট্টগোল, হাতাহাতি ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে থেমে থেমে উত্তেজনা তৈরি হতেও দেখা যায়। বুধবার দুপুর আড়াইটার দিকে নরসিংদীর মনোহরদী পৌরসভার মনোনয়ন প্রত্যাশী দুই গ্রুপের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। দুপুর ২টা ২০ মিনিট থেকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের কাছে প্রত্যয়নপত্র বিতরণ শুরু হয়। এর ১০ মিনিটের মাথায় চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ের ভেতরে হট্টগোল শুরু করে মনোহরদী পৌরসভার মেয়র হিসেবে মনোনয়ন প্রত্যাশী মাহমুদুর রহমান ও আমিনুর রহমান। তাদের দাবি, দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন না করে মনোহরদী পৌরসভায় দল থেকে মেয়র পদে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে বিএনপির সংস্কারপন্থী প্রয়াত আব্দুল মান্নান ভুঁইয়ার অনুসারী আব্দুল খালেককে। তারা চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করেন এবং অপর পক্ষের সঙ্গে হাতাহাতি ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় লিপ্ত হন। এ সময় সেখানে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বিএনপির সহ-প্রচার সম্পাদক এসে যারা হট্টগোল সৃষ্টি করেছে তাদের কার্যালয় থেকে বের করে দিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন। বিকেল চারটার দিকে রাজবাড়ী পৌরসভার মনোনয়ন প্রত্যাশীরাও হট্টগোল করে। রাজবাড়ী ছাত্রদলের একটি গ্রুপ গুলশান কার্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে তাদের বিপক্ষে থাকা গ্রুপের বিরুদ্ধে সেøাগান দিলে সেখানকার পরিবেশ উত্তপ্ত হয়। সেøাগানকারীরা অভিযোগ করে রাজবাড়ীতে বিএনপির সংস্কারপন্থীদের মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে। কিন্তু ত্যাগী নেতাকর্মীদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। তাদের সেøাগানের ভাষা ছিল- ‘সংস্কারপন্থীদের গালে গালে, জুতা মারো তালে তালে’। তাদের এ সেøাগান চলাকালে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ের ভেতর থেকে বেরিয়ে এসে বিএনপির সহ-প্রচার সম্পাদক এবং মনোনয়ন কমিটির সদস্য সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বিক্ষুব্ধদের সেøাগান দিতে বারণ করেন। তবে বিক্ষুব্ধ রাজবাড়ীর ছাত্রদল কর্মীরা বলেন, জেলা বিএনপির সভাপতি আলী নেওয়াজ খইয়াম একজন সংস্কারপন্থী। তার অনুসারীদের পৌরসভায় মেয়র পদে মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে। এ সময় প্রিন্স বলেন, কোন সংস্কাপন্থীকে মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে না। খালেদা জিয়া যাদের নিয়ে তালিকা চূড়ান্ত করেছেন, তাদের বাইরে কাউকেই মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে না। এ ঘটনার আগে মাদারীপুরের শিবচরে জাহাঙ্গীর কামাল নামের একজনকে মনোনয়ন দেয়ার ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন মাদারীপুর শিবচরের বিএনপি নেতাকর্মীরা। শিবচরের নেতাকর্মীদের অভিযোগ জাহাঙ্গীর কামাল ২০০১ সালে খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার ঘটনার অন্যতম আসামি। তিনি তখন আওয়ামী লীগের হয়ে এ হামলা করেন। এখন বিএনপির হয়ে মনোনয়ন পেয়েছেন। এ সময় ক্ষুব্ধ মাদারীপুর শিবচর বিএনপির নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা মামলার চার্জশীটের কপি সাংবাদিকদের মাঝে বিতরণ করেন। এ নিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে কিছুটা উত্তেজনা তৈরি হয়। দলীয় মনোনয়নপত্র বিতরণকে কেন্দ্র করে আগের দিনের মতো বুধবারও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের সামনে ছিল উৎসুক নেতাকর্মীদের ভিড়। মাঝেমধ্যে নেতাকর্মীরা থেমে থেমে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নামে সেøাগান দেন। এদিকে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত যারা দলীয় মনোনয়নের জন্য বিএনপির প্রত্যয়নপত্র গ্রহণ করেছেন বলে জানা গেছে তাদের মধ্যে রয়েছেন ঠাকুরগাঁও সদরে মির্জা ফয়সাল আমিন, পীরগঞ্জে রাজিউর রহমান রাজু, রানীশংকৈলে শাহজাহান আলী, পঞ্চগড় সদরে তৌহিদুল ইসলাম, দিনাজপুর সদরে জাহাঙ্গীর আলম, ফুলবাড়িতে সাইদুল ইসলাম, বীরগঞ্জে আমিনুল বাহার, বিরামপুরে আশরাফ আলী ম-ল, হাকিমপুরে শওকত হোসেন শিল্পী, নীলফামারীর সৈয়দপুরে আমজাদ হোসেন সরকার, জলঢাকায় ফাহমিদ ফয়সাল চৌধুরী, লালমনিরহাট সদরে আবদুল হালিম, পাটগ্রামে একে মোস্তফা হালিমুজ্জামান, রংপুরের বদরগঞ্জে পরিতোষ চক্রবর্তী, কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে আদম আলী, উলিপুরে তারিক আবুল আলা চৌধুরী, গাইবান্ধা সদরে শহীদুজ্জামান শহীদ, গোবিন্দগঞ্জে ফারুক আহমেদ, সুন্দরগঞ্জে মশিউর রহমান সবুজ, কুড়িগ্রাম সদর নুরুল ইসলাম, বগুড়া সদরে এ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান, শেরপুরে স্বাধীন কুডু, সারিয়াকান্দিতে টিপু সুলতান, গাবতলীতে সাইফুল ইসলাম, আদমদিঘীতে তোফাজ্জল হোসেন ভুট্টু, কাহালুতে আবদুল মান্নান ভাটা, ধুনটে আলিমুদ্দিন, নন্দীগ্রামে সুশান্ত কুমার শান্ত, শিবগঞ্জে আবদুল মতিন, জয়পুরহাট সদরে সামসুল হক, কালাইয়ে সোহেল তালুকদার, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে শফিকুল ইসলাম, নাচোল মোঃ কামরুজ্জামান, নওগাঁ সদরে নাজমুল হক সনি, নজিপুরে আনোয়ার হোসেন, রাজশাহীর কাকনহাটে হাফিজুর রহমান, আড়ানিতে তোজাম্মেল হক, মুন্ডমালায় ফিরোজ কবির, কেশরহাটে আলাউদ্দিন আলো, গোদাগাড়ীতে আনোয়ারুল চৌধুরী, তাহেরপুরে আবু নাঈম মোহাম্মদ শাসমুর রহমান মিন্টু, ভবানীগঞ্জে আবদুর রহমান প্রামাণিক, তানোরে মিজানুর রহমান মিজান, কাটাখালীতে মাসুদ রানা, চারঘাটে জাকিরুল ইসলাম বিকুল, দুর্গাপুরে সাইদুর রহমান মন্টু, পুটিয়ায় বাবুল হোসেন লাল্টু, নৌহাটায় মকবুল হোসেন, নাটোর সদরে ইমদাদুল হক মামুন, গুরুদাসপুরে মশিউর রহমান বাবলু, সিংড়ায় শামীম আল রাজী, বড়াইগ্রামে ইসহাক আলী; সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে নজরুল ইসলাম, সদরে মোকাদ্দেস আলী, উল্লাপাড়ায় বেলাল হোসেন, রায়গঞ্জে নূর সাঈদ সরকার, বেলকুচিতে আবদুর রাজ্জাক ম-ল, কাজীপুরে মাসুদ রায়হান মুকুল; পাবনার চাটমোহরে আবদুর রহিম কালু, সাঁথিয়ায় সিরাজুল ইসলাম, সুজানগরে আজমল আলী বিশ্বাস, ফরিদপুরে এনামুল হক, ভাঙ্গুড়ায় মুজিবুর রহমান, সদরে নূর মোহাম্মদ মাসুম, ইশ্বরদীতে মোকলেসুর রহমান, মেহেরপুরের গাংনীতে ইনসারুল হক; কুষ্টিয়া সদরে কুতুব উদ্দিন আহমেদ, মিরপুরে আবদুল আজিজ খান, কুমারখালীতে তরিকুল ইসলাম, খোকসায় রাজু আহমেদ ও ভেড়ামারায় জোটের শরিক দল জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) নেতা মহিউদ্দিন, চুয়াডাঙ্গাার দর্শনায় মহিদুল ইসলাম, জীবননগরে নওয়াব আলী, আলমডাঙ্গায় মীর মহিউদ্দিন, সদরে খন্দকার আবদুল জব্বার, ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে একেএম সালেহ উদ্দিন বুলবুল, মহেশপুরে নাজিবুদ্দৌলা, হরিনাকু-ে মোঃ জিন্নাতুল হক, শৈলকুপায় খলীলুর রহমান, যশোরের নোয়াপাড়ায় রবিউল হোসেন, মনিরামপুরে শহীদ মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন, বাঘারপাড়ায় আবদুল হাই মোনা, চৌগাছায় সেলিম রেজা আউলিয়া, কেশবপুরে সামাদ বিশ্বাস, সদরে মারুফুল ইসলাম, মাগুরা সদরে ইকবাল আকতার খান, নড়াইলের কালিয়ায় এসএম ওয়াহিদুজ্জামান, সদরে জুলফিকার আলী, খুলনার চালনায় শেখ আবদুল মান্নান, সাতক্ষীরার কলারোয়ায় আকতারুল ইসলাম, সদরে তাসকির আহমেদ, বরগুনার বেতাগীতে হুমায়ুন কবির, পাথরঘাটায় মল্লিক মোঃ আইয়ুব, পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় আবদুল আজিজ, ভোলার বোরহান উদ্দিন মনিরুজ্জামান, দৌলতখানে আনোয়ার হোসেন, সদরে হারুনুর রশীদ, বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জে গিয়াসউদ্দিন দীপেন, বাকেরগঞ্জে মতিউর রহমান মোল্লা, উজিরপুরে শহীদুল ইসলাম, ঝালকাঠির নলছিটিতে মুজিবুর রহমান, পিরোজপুরের স্বরূপকাঠিতে শফিকুল ইসলাম ফরিদ, সুনামগঞ্জে ছাতকে সামসুর রহমান মাসুক, সদরে অধ্যক্ষ সেরিগুন, ধিরাইয়ে মাইনুদ্দিন চৌধুরী, হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে সাবেরুল হক, কুমিল্লার দাউদকান্দিতে টিআইএম খলিল, চৌদ্দগ্রামে নয়ন বাঙ্গালি, চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে আবদুল মান্নান খান, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে আজমত আলী বাহাদুর, বাঁশখালীতে কামরুল ইসলাম হোসাইনী, সাতকানিয়ায় রফিকুল আলম, মীরসরাইয়ে রফিকুল ইসলাম পারভেজ, রাউজানে আবদুল্লাহ আল হাসান, বারইয়ারহাটে মাইনুদ্দিন লিটন, রাঙ্গুনিয়ায় হেলাল উদ্দিন, সীতাকু-ে আবুল মনসুর, পটিয়ায় তহিদুল আলম, খাগড়াছড়ি সদরে আবদুল মালেক, মাটিরাঙ্গায় বাদশা মিয়া, রাঙ্গামাটি সদরে সাইফুল ইসলাম ভুট্টো, বান্দরবান সদরে জাবেদ রাজা ও লামায় আমির হোসেন।
×