ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

সবার ওপরে জীবন সত্য- শিল্পকলায় থিয়েটার সপ্তাহ শুরু কাল

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ৩ ডিসেম্বর ২০১৫

সবার ওপরে জীবন সত্য- শিল্পকলায় থিয়েটার সপ্তাহ শুরু কাল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘সবার উপরে জীবন সত্য’ স্লোগানে আগামীকাল শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে ‘থিয়েটার সপ্তাহ ২০১৫’। দেশের অন্যতম নাট্য সংগঠন থিয়েটার আয়োজিত সপ্তাহব্যাপী এ নাট্যায়োজন হবে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার প্রধান মিলনায়তনে প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টায়। দলের ৭টি প্রযোজনা নিয়ে এ আয়োজনে আরও থাকছে মুনীর চৌধুরী সম্মাননা ও মোহাম্মদ জাকারিয়া স্মৃতিপদক প্রদান এবং ‘থিয়েটার পত্রিকার চল্লিশ বছর’ শীর্ষক সেমিনার। সন্ধ্যা ৬টায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। এ উপলক্ষে রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বুধবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলন হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন থিয়েটারের দলীয় প্রধান রামেন্দু মজুমদার, উৎসব আহ্বায়ক আপন আহসান, নাট্য নির্দেশক মারুফ কবির প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে রামেন্দু মজুমদার বলেন, মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের উন্মাদনা যখন আমাদের সকলের হৃদয়ে, তখনই সমমনা কয়েকজন মিলে গঠিত হলো থিয়েটার। উদ্দেশ্য, দুটো-নিয়মিত সৎ নাটক প্রযোজনা এবং একটি নাটকের পত্রিকা প্রকাশ করা। গত ৪৪ বছরের পথ পরিক্রমায় আমরা ৪৫টি নাটক প্রযোজনা করেছি, এবারের উৎসবে প্রথম অভিনয় হবে ৪৬তম প্রযোজনা- ‘মায়া নদী’। নাটক নির্বাচনে আমরা সবসময়ে গুরুত্ব দিয়েছি সমসাময়িক ঘটনাবলিকে। সমাজের নানা অসঙ্গতি তুলে ধরেছি আমাদের নাটকে। বিদেশী নাটকের অনুবাদ-রূপান্তর ও অভিনয় করেছি। নাটক নিয়ে দেশে-বিদেশে গিয়েছি, ৪টি পথনাটক করেছি মুক্তমঞ্চে। নাট্য প্রযোজনার আগেই প্রকাশিত হয়েছে বাংলাদেশের প্রথম নাটকের পত্রিকা-থিয়েটার। গত ৪৪ বছরে এ পত্রিকায় প্রায় তিনশত নাটক, অগণিত নাট্যবিষয়ক নিবন্ধ, আলোচনা প্রকাশিত হয়েছে। থিয়েটার পত্রিকা হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের নবনাট্য চর্চার বিশ্বস্ত সহযোগী। নাটকের ক্ষেত্রে কৃতী মানুষদের সম্মাননা জানাবার জন্য আমরা প্রবর্তন করেছি দুটি পদক-মুনীর চৌধুরী সম্মাননা (১৯৮৯ থেকে) এবং মোহাম্মদ জাকারিয়া স্মৃতি পদক (১৯৯৭ থেকে)। প্রতিবছর আমরা যোগ্য নাট্যজনকে পদক দুটি প্রদান করে থাকি। দেশে নাটকের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার অপ্রতুলতার কথা বিবেচনা করে আমরা ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠা করি থিয়েটার স্কুল- যা প্রতিষ্ঠাতা উপাধ্যক্ষ আবদুল্লাহ আল মামুনের প্রয়াণের পর নামকরণ করা হয় আবদুল্লাহ আল-মামুন থিয়েটার স্কুল। গত ২৫ বছর ঢাকাতে এক বছর মেয়াদী সার্টিফিকেট কোর্স চালু রাখা ছাড়াও ঢাকার বাইরে ১৩টি জেলায় তিন মাস মেয়াদী প্রশিক্ষণ কোর্সের আয়োজন করি। এবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি নিয়ে নাটকে এক বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা কোর্স চালুর আয়োজন চলছে। এর আগে আমরা ১১টি নাট্যোৎসবের আয়োজন করেছি। এর মধ্যে ১৯৮৫ সালে থিয়েটারের ৭টি প্রযোজনা নিয়ে আয়োজিত হয়েছিল থিয়েটার সপ্তাহ। এবার আবারও আমরা আমাদের নিজেদের ৭টি প্রযোজনা নিয়ে আয়োজন করেছি থিয়েটার সপ্তাহের- যার মধ্যে থাকছে একটি নতুন নাটক। আমাদের চার দশকের পথচলায় যুক্ত হয়েছে অনেক নতুন সদস্য। উৎসব আহ্বায়ক আপন আহসান ৭ দিনের অনুষ্ঠানমালা তুলে ধরে বলেন, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর সন্ধ্যা ৭টায় মঞ্চায়ন হবে আবদুল্লাহ আল মামুন রচিত ও নির্দেশিত নাটক ‘কোকিলারা’। নাটকটির নব-রূপায়ণ করেছেন সুদীপ চক্রবর্তী। ৫ ডিসেম্বর দলের ‘মায়া নদী’ নাটকের উদ্বোধনী মঞ্চায়ন। নাটকটি রচনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন মারুফ কবির। ৬ ডিসেম্বর মঞ্চায়ন হবে ‘কুহুকজাল’। এটি রচনা করেছেন মাসুম রেজা এবং নির্দেশনা দিয়েছেন ত্রপা মজুমদার। ৭ ডিসেম্বর মঞ্চায়ন হবে ‘মুক্তধারা’। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত এ নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন নায়লা আজাদ। ৮ ডিসেম্বর মঞ্চায়ন হবে ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’। সৈয়দ শামসুল হক রচিত এ নাটকটি নির্দেশনা দিয়েছেন আবদুল্লাহ আল মামুন। নব-রূপায়ণ করেছেন সুদীপ চক্রবর্তী। ৯ ডিসেম্বর মঞ্চায়ন হবে ‘বারামখানা’। পান্থ শাহরিয়ারের রচনায় নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন ত্রপা মজুমদার। সমাপনী আয়োজনের অংশ হিসেবে ১০ ডিসেম্বর বিকেল ৪টায় অনুষ্ঠিত হবে ‘থিয়েটার পত্রিকার চল্লিশ বছর’ শীর্ষক সেমিনার। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। সমাপনী সন্ধ্যায় মঞ্চায়ন হবে নাটক ‘মেরাজ ফকিরের মা’। নাটকটির রচনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন আবদুল্লাহ আল মামুন। জাতীয় নাট্যশালায় প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টায় টিকেটের বিনিময়ে নাটকের মঞ্চায়ন হবে। সেমিনার সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। পার্বত্য শান্তি চুক্তির ১৮তম বার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ॥ পার্বত্য শান্তি চুক্তির ১৮তম বার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নন্দন মঞ্চে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয় বুধবার সন্ধ্যায়। শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। একাডেমির সচিব জাহাঙ্গীর হোসেন চৌধুরীর স্বাগত বক্তব্যের মধ্যদিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। আলোচনা শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চংঙ্গা, গারো, বম ভাষার গানের কথায় অন্তর দেওয়ানের নৃত্য পরিচালনায় পরিবেশিত হয় সমবেত নৃত্য, চৈতি চাকমার পরিবেশনায় চাকমা ভাষায় একক সঙ্গীত, সাঁওতালদের পরিবেশনায় সমবেত বাহা নৃত্য ক্ষুদ্র-নৃ গোষ্ঠী-চাকমা সমবেত নৃত্য, রেম হিম আমলাইয়ের পরিবেশনায় বম রোমান্টিক একক সঙ্গীত।
×