ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দাতাদের সুদ বাড়ানোর চেষ্টা রোধে সতর্ক হতে হবে ॥ অর্থমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ৩ ডিসেম্বর ২০১৫

দাতাদের সুদ বাড়ানোর চেষ্টা রোধে সতর্ক হতে হবে ॥ অর্থমন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, এখনই দাতাদের সুদ বাড়ানোর চেষ্টা প্রতিরোধ করতে হবে। কেননা ইতোমধ্যেই নিম্ন মধ্য আয়ের দেশে যাওয়ার বিশ্বব্যাংকের ঘোষণার প্রেক্ষিতে জাপানসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা সুদ বাড়াতে নোটিস দিয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। কেননা জাতিসংঘের মূল্যায়ন ও ঘোষণা আসবে ২০১৮ সালে, তারপরও তিন বছর আমরা স্বল্পোন্নত দেশের সুযোগ-সুবিধা পাব। তাই ২০২১ সালের মধ্যে মধ্য আয়ের দেশে যাব, এটা সত্য। কিন্তু এখনই সুদ বাড়ানোর কারণ নেই। আমরাও চাই না ২০২১ সালের আগেই আমরা মধ্য আয়ের দেশে চলে যাই। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণে বাংলাদেশের অগ্রগতি পর্যালোচনা বিষয়ে এক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা দারিদ্র্য নিরসনে ব্যাপক অগ্রগতি অর্জন করেছি। তারপরও এখনও বাংলাদেশের চার কোটি মানুষ দরিদ্র রয়েছে। কিন্তু বিশ্বের অনেক দেশই রয়েছে যাদের জনসংখ্যাই চার কোটি নেই। সেক্ষেত্রে আমাদের স্বল্প সুদে ঋণ পাওয়ার যে সুযোগ তা অব্যাহত রাখা উচিত। বুধবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। সভাপতিত্ব করেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন। বক্তব্য রাখেনÑ শিল্প সচিব মোশাররফ হোসেন, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসিমা এবং পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিবসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, আমরা শিক্ষাক্ষেত্রে অনেক দূর এগিয়েছি। কিন্তু মাধ্যমিক শিক্ষার অবস্থা ভাল নয়। কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিশেষ করে কলেজ সরকারীকরণ করা হলেই শিক্ষকরা ঢাকায় আসতে চান। অনেকেই ঢাকায় এসে বসে বসে বেতন নেন, কাজ করেন না। স্বাস্থ্য খাতে সমস্যা রয়েছে, যেমন কমিউনিটি ক্লিনিকে মানুষের ভিড় হয়, বসার জায়গা থাকে না। কিন্তু থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে অনেক বড় বিল্ডিং থাকলেও রোগী থাকে না। বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে খতিয়ে দেখতে হবে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে এনজিও সংস্থাগুলো ভাল কাজ করেছে। এখন ঋণদানকারী প্রায় ২৮ হাজার নিবন্ধিত সংস্থা রয়েছে। কিন্তু এনজিওদের কার্যক্রম কোন কোন সময় নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়। এটি করতে গিয়ে যাতে তাদের কাজ করতে কোন সমস্যা না হয় সেদিকে কৌশলী হতে হবে। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, গ্রামীণ অর্থনীতি বদলে গেছে। বিদ্যুত ও অবকাঠামো উন্নয়ন হয়েছে। মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু প্রতিরোধ অগ্রগতি অনেক। আমরা মধ্য আয়ের দেশে গেলে সুবিধাবঞ্চিত হব কি-না, সেসব বিষয় নিয়ে ইতোমধ্যেই আলোচনা শুরু হয়েছে। এজন্য জিএসপি প্লাস সুবিধার বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আমেরিকা ছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ডিউটি ফ্রি সুবিধা দিচ্ছে। বিশেষ করে চীন ও জাপান অনেক পণ্যে এই সুবিধা দিচ্ছে। সেক্ষেত্রে আমেরিকা ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশনকে (ডাব্লিউটিও) পাশ কাটিয়ে যে টিপিপি চুক্তি করেছে, এতে বাংলাদেশের কোন সমস্যা হবে না। কেননা ওই সব দেশে আমরা ডিউটি ফ্রি সুবিধা পেয়ে আসছি। সভায় জানানো হয়, স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হতে হলে যে তিনটি নির্দেশক রয়েছে তার মধ্যে দুটি যেমন মাথাপিছু আয় ও মানব উন্নয়নে অগ্রগতি হয়েছে। অন্যটি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে এখনও খারাপ অবস্থায় আছে। ২০১৮ সালের মধ্যে এক্ষেত্রেও অগ্রগতি অর্জিত হবে। সভায় জানানো হয়, সর্বশেষ যে মূল্যায়ন হয়েছে সেক্ষেত্রে দেখা যায়, মধ্য আয়ের দেশে যেতে হলে মাথাপিছু আয় এক হাজার ২৪২ মার্কিন ডলার, সেখানে (২০১৩-১৪ অর্থবছরের হিসাব মতে) বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ৯৭৯ মার্কিন ডলার। কিন্তু জাতিসংঘের সংস্থা সিডিপির হিসাব মতে একই সময়ে মাথাপিছু আয় হয়েছিল ৯২৬ দশমিক ৩ মার্কিন ডলার। মানব উন্নয়ন সূচকের ক্ষেত্রে মধ্য আয়ের দেশে যেতে হলে প্রয়োজন ৬৬ বা তার উপরে পয়েন্ট। সেখানে বিবিএসের হিসাব মতে ৬৬ দশমিক ২৮ পয়েন্ট হয়েছে। কিন্তু সিডিপির হিসাব মতে এটি হয় ৬৩ দশামক ৮ পয়েন্ট। অন্যদিকে ইকোনমিক ভার্নাবিলিটি ইনডেক্সের ক্ষেত্রে দেখা যায় মধ্য আয়ের দেশে যেতে প্রয়োজন ৩২ বা তার উপরে পয়েন্ট, সেখানে বিবিএসের হিসাব অনুযায়ী হয় ২৫ দশমিক ৬, কিন্তু সিডিপির হিসাব অনুযায়ী দাঁড়ায় ২৫ দশমিক ১ পয়েন্ট। তবে ২০১৮ সালের চূড়ান্ত মূল্যায়নে এই দুই সংস্থার হিসাব মিলে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেছেন, হিসাবের কোড বা সিস্টেমের কারণে কম-বেশি হয়েছে।
×