নিজস্ব সংবাদদাতা, পাবনা, ৩ ডিসেম্বর ॥ ‘এদেশে শ্যামল রং রমণীর সুনাম শুনেছি’ কাব্যগ্রন্থের জন্য বাংলা একাডেমির পুরস্কারপ্রাপ্ত ষাটের দশকের অন্যতম কবি ওমর আলী আর নেই। বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টায় বার্ধক্যজনিত কারণে নিজ বাসভবন পাবনার কোমরপুরে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহি ...রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। তিনি ৩ ছেলে ও ৪ মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। ২০১২ সালের ২৩ মার্চ হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে তিনি আর স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেননি, তিনি বাকরুদ্ধও ছিলেন। প্রায় দু’মাস আগে কবি উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রধানন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে দুই লাখ টাকা অনুদান দেন।
বৃহস্পতিবার রাতে পাবনা টাউন হল ময়দানে এবং কোমরপুর হাইস্কুল মাঠে জানাজা শেষে রাতেই আরিফপুর কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। তার মৃত্যুতে পাবনার রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিগণ শোক প্রকাশ করেছেন।
পাবনা শহর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে সদর উপজেলার পদ্মা নদী তীরবর্তী প্রত্যন্ত গ্রামে কোমরপুরে ১৯৩৯ সালের ২০ অক্টোবর তার জন্ম। শৈশব থেকেই তিনি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত চরম দুরবস্থার মধ্যে তিনি দিনাতিপাত করেছেন। ১৯৫৫ সালে হাম্মাদিয়া হাইস্কুল থেকে প্রবেশিকা, ১৯৬২ সালে কায়েদে আযম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক, ১৯৬৫ সালে সরকারী এডওয়ার্ড কলেজ থেকে স্নাতক পাস করেন তিনি। ১৯৭০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজী সাহিত্যে এমএ এবং ১৯৭৫ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে এমএ পাস করেন।
এরপর কবি ওমর আলী বগুড়ার নন্দীগ্রাম কলেজে ইংরেজী প্রভাষক পদে যোগদানের মধ্য দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। সেখান থেকে চলে আসেন কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা কলেজে। এখানে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত এবং পরে পাবনার সরকারী শহীদ বুলবুল কলেজসহ দেশের বিভিন্ন কলেজে অধ্যাপনা করেন। সর্বশেষ ১৯৯৯ সালের অক্টোবর মাসে অধ্যাপক হিসেবে পুনরায় পাবনার সরকারী শহীদ বুলবুল কলেজে এসে চাকরি জীবন শেষ করেন।
এক সময় তিনি বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক, সাপ্তাহিক ও সাহিত্য সাময়িকীতে নিয়মিত কবিতা লিখেছেন। তিনি ছিলেন দুই বাংলার সুপরিচিত কবি। এ যাবত কবিতা ও উপন্যাস মিলে তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৩০-এর ওপরে। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হচ্ছেÑ ‘ওমর আলীর শ্রেষ্ঠ কবিতা।’ প্রতিভার স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি অর্জন করেছেন বাংলা একাডেমি পদক, বন্দে আলী মিয়া পদক, আলাওল পদক, আবুল মনসুর আহমেদ পদক, রাজশাহী বিভাগীয় গুণীজন সম্মাননা পদক প্রভৃতি। কাব্য সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৮১ সালে ‘এদেশে শ্যামল রং রমণীর সুনাম শুনেছি’ কাব্যগ্রন্থের জন্য তিনি লাভ করেন বাংলা একাডেমির পুরস্কার। এ ছাড়া তিনি বাংলা একাডেমির ফেলো সদস্যও ছিলেন।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: