ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

উত্তাল ফিফা, গ্রেফতার দুই

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ৪ ডিসেম্বর ২০১৫

উত্তাল ফিফা, গ্রেফতার দুই

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ আবারও উত্তাল বিশ্ব ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা। বৃহস্পতিবার আরও দু’জন ফিফার কর্মকর্তাকে আটক করেছে সুইজারল্যান্ডের পুলিশ। মূলত কোটি কোটি ডলার ঘুষের সন্দেহের ভিত্তিতেই ফিফা কর্মকর্তাদের আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে দেশটির বিচার মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘লাতিন আমেরিকার ফুটবল টুর্নামেন্ট এমনকি বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের বিভিন্ন ম্যাচের মার্কেটিং অধিকারের বিনিময়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ নেয়ার অভিযোগের ভিত্তিতেই ফিফার উচ্চপদের কর্মকর্তাদের আটক করা হয়।’ বৃহস্পতিবার নিউইয়র্ক টাইমস এক প্রতিবেদনে প্রকাশ করে যে, জুরিখের বিলাসবহুল হোটেল থেকে ভোরের অভিযানে ফিফার কয়েকজন কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আর এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পরই দু’জন কর্মকর্তাকে গ্রেফতারের বিষয়ে নিশ্চিত করে বিবৃতি দেয় সুইজারল্যান্ডের বিচার মন্ত্রণালয়। আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা না করা হলেও গ্রেফতারকৃতদ্বয় হলেন- হন্ডুরাসের আলফ্রেডো হাউয়িট ও প্যারাগুয়ের হুয়ান অ্যাঞ্জেল নাপুত। তবে ফিফার এই গ্রেফতার অভিযান শুরু করা হয় আমেরিকার বিচার বিভাগের নির্দেশেই। যা করা হয় গত ২৯ নবেম্বর। এ বিষয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমেরিকার গ্রেফতার অনুরোধের ভিত্তিতেই তাদের আটক করা হয়। তাদের কোটি কোটি টাকার ঘুষ গ্রহণের সন্দেহেই এই গ্রেফতার... অপরাধমূলক এসব কার্যক্রমের কিছু হয়েছে আমেরিকাতে। ইউএস ব্যাংকের মাধ্যমেই।’ হাউয়িট উত্তর ও মধ্য আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের ফুটবল কনফেডারেশন (কনক্যাকাফ) সভাপতি। আর নাপুত দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবল কনফেডারেশনের (কনমেবল) সভাপতি। দু’জনই ফিফার শক্তিশালী নির্বাহী কমিটির সদস্য। তাদের গ্রেফতারের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক টাইমস জানায়, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় জুরিখের বাউ ওলাখ হোটেলে অভিযান চালিয়ে ফিফার উচ্চপদের এই দুই কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের গ্রেফতারের উদ্দেশ্যেই এই অভিযান চালানো হয়েছিলো। এদিকে কর্মকর্তাদ্বয়কে গ্রেফতারের পর ফিফা এক বিবৃতিতে লিখেছে, যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ যে ব্যবস্থা নিয়েছে এই ব্যাপারে ফিফা অবগত আছে। সুইজারল্যান্ডের আইনের মধ্যে থেকে ফিফা এই তদন্তে যুক্তরাষ্ট্রকে পূর্ণ সহায়তা করবে। সুইস এ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস যে তদন্ত পরিচালনা করছে তাতেও সহায়তা দেবে। গত দুই দশক ধরে বিশ্বকাপ আয়োজনের স্বত্ব এবং ফিফার বাজারজাতকরণ ও সম্প্রচার চুক্তিতে দুর্নীতির কারণে চলতি বছরের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা ফিফার ১৮ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছিলো। এছাড়া গত ২৬ মে ফিফা নির্বাচনের আগেরদিন একই হোটেল থেকে দুর্নীতির অভিযোগে ৭ ফিফা কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করেছিলো সুইস পুলিশ। শুধু তাই নয়, ফিফার সাবেক সভাপতি এবং উয়েফার প্রধান মিশেল প্লাতিনির বিষয়েও গুঞ্জন ছিল যে যে কোন সময়ই গ্রেফতার হতে পারেন। কিন্তু তাদের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত তেমনটি হয়নি। তবে সেপ ব্লাটারের শনির দশা যেন কাটছেই না। দুর্নীতির অভিযোগে এমনিতেই ৯০ দিনের জন্য ফিফায় নিষিদ্ধ হয়েছেন তিনি। এবার প্রাপ্য পারিশ্রমিক না পাওয়ার অভিযোগ এনে তার বিপক্ষে মামলা করলেন তারই একসময়ের বন্ধু ও ফিফায় দীর্ঘদিন ‘ইলাস্ট্রেটর’ হিসেবে কাজ করা সাবেক ফুটবলার ওলে এ্যান্ডারসন। ডেনিশ এ কার্টুনিস্ট ব্লাটারের বিপক্ষে অভিযোগ করেন, ১৯৯৪ বিশ্বকাপের আগে ফুটবল ইতিহাস সম্পর্কিত একটি বিজ্ঞাপনী ইভেন্টের জন্য তাকে দিয়ে কিছু কাজ করিয়ে নেন ব্লাটার। ১৯৯৩ সালে এ্যান্ডারসন তার কাজ শেষ করলেও প্রাপ্য ১ লাখ ৬২ হাজার পাউন্ড পারিশ্রমিক পাননি। ব্লাটার তাকে এ পারিশ্রমিক থেকে বঞ্চিত করেন। ফিফার সঙ্গে দীর্ঘ ১৫ বছর যুক্ত থাকার পর এ ঘটনার পর পরই ব্লাটারের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ হয় এ্যান্ডারসনের। সত্তরের দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে ব্লাটারের বন্ধু ছিলেন তিনি। অথচ অভিযোগপত্রে ব্লাটারকে ‘স্বার্থপর শূকর’ বলে সম্বোধন করেছেন এ্যান্ডারসন। এছাড়া ফিফা সভাপতি ‘দীর্ঘ সময় ধরে সবার সঙ্গে বাজে ব্যবহার করেছেন’ এবং ‘তাকে বিচারের আওতায় এনে মুখোশ খুলে দেয়া উচিত’ বলেও মন্তব্য করেন ৭৬ বছর বয়সী সাবেক এ কোচ। একের পর এক অভিযোগে বিপর্যস্ত ব্লাটার।
×