ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আনন্দ ও ক্ষোভের মিশেলে বগুড়ায় নির্বাচনী মাঠ

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ৪ ডিসেম্বর ২০১৫

আনন্দ ও ক্ষোভের মিশেলে বগুড়ায় নির্বাচনী মাঠ

সমুদ্র হক, বগুড়া অফিস ॥ মনোনয়নপত্র জমা দিতে না দিতেই সরব তো সরব একেবারে হৈ-হুল্লোর। আনন্দ আর ক্ষোভ দুইয়ের মিশ্রণে ভিন্ন ধরনের আমেজ ও উত্তেজনায় প্রাণের খবর, বাড়ির খবর, হাঁড়ির খবরÑ একে একে সবই বেরিয়ে আসছে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পাল্টে গেছে বগুড়ার পৌর নির্বাচনের চিত্র। বগুড়ার ১২ পৌরসভার মধ্যে এবার নির্বাচন হচ্ছে ৯টির। এর মধ্যে ৪টি পৌরসভায় মেয়রপদে গত নির্বাচনে যারা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির যে প্রার্থী ছিলেন তারাই আছেন। বগুড়া পৌরসভায় বর্তমান মেয়র এ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমানের (বিএনপি) সঙ্গে এ্যাডভোকেট রেজাউল করিম মন্টু (আওয়ামী লীগ), শিবগঞ্জ পৌরসভায় বর্তমান মেয়র মতিয়ার রহমান মতিনের (বিএনপি) সঙ্গে তৌহিদুর রহমান মানিক (আওয়ামী লীগ), কাহালুতে বর্তমান মেয়র হেলাল উদ্দিন কবিরাজের (আওয়ামী লীগ) সঙ্গে আব্দুল মান্নান ওরফে ভাটা মান্নান (বিএনপি) ও শেরপুরে বর্তমান মেয়র স্বাধীন কুমার কন্ডুর (বিএনপি) সঙ্গে আব্দুস সাত্তার (আওয়ামী লীগ)। বাকি ৫টির মধ্যে ৪টি সারিয়াকান্দি, নন্দীগ্রাম, গাবতলী ও সান্তাহারে বিএনপি প্রার্থীর কোন পরিবর্তন হয়নি। তারা বর্তমান মেয়র। আওয়ামী লীগের প্রার্থী পরিবর্তন হয়েছে। ধুনট পৌরসভায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তন হয়েছে। ধুনট পৌরসভায় ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল দানা বেঁধে ওঠায় দলীয় মনোনীত প্রার্থী শরিফুল ইসলামের বিপক্ষে স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন বর্তমান মেয়র এজিএম বাদশাহ। এই দুইজনকেই প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হতে হবে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আলিম উদ্দিন হারুনের সঙ্গে। সকলের দৃষ্টি বগুড়া পৌরসভার দিকে। ২ হাজার ৫ সালে ১৪ দশমিক ৭৬ বর্গকিলোমিটার পৌর এলাকাকে রাতারাতি ৬৯ দশমিক ৫৬ বর্গকিলোমিটারে সম্প্রসারিত করা হয়। ১২টি ওয়ার্ড টেনে হয় ২১টি। এমনও ওয়ার্ড আছে যা এখনও অজপাড়া গাঁ। সর্বশেষ নির্বাচনে বিজয়ী হন বিএনপি নেতা এ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান। বর্ধিত এলাকার মানুষ আশা করেছিল পৌর নাগরিক সুবিধা তারা পাবে- এলাকার পথঘাট, রাস্তাবাতি ঠিকঠাক হবে; তা আর হয়নি। শুধু ট্যাক্স বেড়েছে। চলতি মেয়রের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী এ্যাডভোকেট রেজাউল করিম মন্টু। পূর্বের পৌর আয়তনে তিনি চেয়ারম্যান হয়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন, তা আজও ধরে রাখতে পেরেছেন। পৌরসভার বর্ধিত এলাকার মানুষ উন্নয়নের আশা করে থাকায় এবং শহর এলাকায় তার জনপ্রিয়তার রেশ ধরে রেজাউল করিম মন্টু সেদিনের চেয়ারম্যান থেকে বর্তমানের মেয়রে উন্নীত হতেও পারেন। শিবগঞ্জ পৌরসভার বর্তমান মেয়র বিএনপির মতিয়ার রহমান মতিনের সঙ্গে বিএনপির একটি গ্রুপের চাপা বিরোধ দিনে দিনে প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে। পৌরসভায় বিএনপির কোন স্বতন্ত্র প্রার্থী না থাকায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী তৌহিদুর রহমান মানিকের ডালা ভরতেও পারে। মানিক মিডিয়াকর্মী এবং এলাকার রাজনৈতিক কর্মী। রাজনৈতিক কূটনীতি ঠিক রেখে ভোটারদের মন জয় করতে পারলে মেয়রের চেয়ারটি তাকে ডেকে নিতেও পারে। কাহালুতে বর্তমান মেয়র আওয়ামী লীগের হেলাল উদ্দিন কবিরাজ মাসখানেক আগে এক স্কুলের মাঠে ক্লাস বন্ধ রেখে কয়েকটি গরু জবাই দিয়ে বিরাট মজলিশ করেছেন। এ নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। এবার তার প্রতিপক্ষ বিএনপির আব্দুল মান্নান (ভাটা মান্নান হিসেবে অধিক পরিচিত)। কাহালু এলাকায় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের মধ্যে মান্নান নামের এত আধিক্য যে পেশা নামের সঙ্গে জুড়িয়ে দেয়া হয়। যেমন ভাটা টুপি ভিজিএফ ইত্যাদি। হেলাল উদ্দিন কবিরাজের নিজের আঙিনায় দুই ভাই আওয়ামী লীগের সমর্থক তবে ভিন্ন গ্রুপে। তা করলে জোয়ার ভাটা পাল্টে ইটের ভাটার দিকে গেলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। শেরপুর নন্দীগ্রাম গাবতলী সান্তাহার পৌরসভার অবস্থা এমনই যে এক গল্পের সংলাপের মতো- বলার কিছু নেই। মানে বুঝে নিন। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই জনঅরণ্যের শোরগোল নির্বাচনী বাদ্যকে চাপা দিতে পারেনি। ইলেকশন মানেই চায়ের পেয়ালার টুংটাং মিষ্টি ছন্দ, যা শুরু হয়েই গেছে।
×