ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

তৌফিক অপু

ফ্যাশনে বিজয় দিবস

প্রকাশিত: ০৬:১৭, ৪ ডিসেম্বর ২০১৫

ফ্যাশনে বিজয় দিবস

বাঙালী মানেই সংগ্রাম, আন্দোলন আর স্বাধীনতার জাগরণের অমোঘ স্বাধীনতা অর্জনের অনন্য উজ্জ্বলতার প্রতীক। যে উজ্জ্বলতার প্রতিটি বাঁকে উদ্ভাসিত হয়ে আছে অফুরন্ত বীরত্ব গাথা। যে ইতিহাসের ভিতর স্বপ্নগুচ্ছের মতো বর্ণিল এক প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে দেশীয় ফেব্রিকের নিপুণ ছন্দবদ্ধোতায়। আর তারই প্রকাশ চোখের সম্মুখে মেলে ধরে ভিন্নমাত্রার নতুন আঙ্গিকে রূপায়িত আজ বাংলার ফ্যাশন। যা কিনা সম্পূর্ণ নিজস্বতা নিয়ে বাঙালীর মনকে ছুঁয়ে যেতে সক্ষম হয়। আজ তাই ফ্যাশনে বাঙালী সংস্কৃতি আর দেশাত্মবোধের স্ফুরণ হয়ে ওঠে লক্ষণীয়। সব বয়সী বাঙালীর জীবন ধারাই যেন ক্রমশ বদলে দেয় সমকালীন ফ্যাশনগল্প। যে গল্পের ছোঁয়ায় দৈনন্দিন জীবনের নানা পরতে এক একটি স্পন্দন ভিন্ন ভিন্ন আমেজে অনুরণিত হয়। এই অনুরণের ধরনেও রয়েছে বৈচিত্র্যময়তা। ষড়ঋতুর এই বাংলায় প্রকৃতির যেমন রয়েছে একটা হৃদয়ছোঁয়া রূপ। তেমনি বাঙালীর জীবন ধারায় আত্মাধিকার প্রতিষ্ঠারও রয়েছে আরও একটি অন্যরকম ছবি। যে ছবিটা বাঙালীর কাব্যিক জীবনবোধে সংগ্রামী চেতনার বৈপ্লবিক ঐকবদ্ধতার স্বরূপটাকে উন্মোচিত করে দেয়। সেই ১৯৫২ সাল থেকে এ বৈপ্লবিক ধারার গতিটা প্রবলবেগে সঞ্চারিত হতে থাকে। তারপর আসে ১৯৭১। ’৭১-এর ৩টি দিন বাঙালীর জীবনকে ভীষণভাবে নাড়া দিয়ে যাচ্ছে দীর্ঘ ৪৩ বছর ধরে। এর একটি ২৫ মার্চ। যেদিন পাকিস্তানী শাসকচক্রের ষড়যন্ত্রের জাল ঢাকাসহ সমগ্র বাংলাদেশের মুক্তিকামী জনতার ওপর ছড়িয়ে দিয়ে পাকহানাদার বাহিনী রাতের ঘোর অন্ধকারে চালায় নিষ্ঠুরতম, নৃশংস হত্যাযজ্ঞ। এ দিবসটিকে বাঙালীর জাতি অত্যন্ত ব্যথিত মনে স্মরণ করে প্রতি বছরের ২৫ মার্চ। ইতিহাসের এই বর্বরতম নির্মমতার ছবিটার পাসের ফ্রেমেই অতিযতেœ প্রতিটা বাঙালী আরও দুটি দিবসকে বাঁধাই করে রেখে আনন্দমুখর পরিবশে উদযাপন করে গভীর উদ্দীপনার। এর একটি ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস, অপরটি ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস। এ বিজয় দিবসকে ঘিরেই এখন মুখর ফ্যাশন ট্রেন্ড। নগর জীবনের দিকে দৃষ্টি রাখলেই এর প্রতি বিশ্বটা চোখে পড়বে। সব বয়সের বাঙালী নারী-পুরুষে মধ্যেই বিজয় দিবসের ছাপটা বিশেষভাবে লক্ষণীয়। শাড়ি, থ্রিপিস, পাঞ্জাবি, ফতুয়া, শার্ট, টিশার্টসহ সব ধরনের পোশাকেই বিজয় দিবসে বাংলার প্রতিকৃতি লাল সবুজের পতাকা অঙ্কিত হয়ে যেন প্রতিটা ড্রেসই হয়ে ওঠে এক একটি পতাকা। ইতিহাসের এই অবিস্মরণীয় দিনটিকে মহিমান্বিত করে তোলার লক্ষ্যে ফ্যাশন ডিজাইনারও কবিতার পঙ্ক্তিমালা থেকে শুরু করে নানা বিষয় তুলির আঁচড়ে উৎকীর্ণ করেন। পোশাকের বুকে উদ্ভাসিত হয় হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের অবিনশ্বর পঙ্ক্তি গাথা এবং মুক্তিযোদ্ধার প্রতিকৃতিসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নানা চিত্র। সব মিলিয়ে বাঙালীর স্বশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের প্রতিটা মুহূর্তকে ফ্যাশন ধারায় এক অন্য মাত্রায় চিত্রিত হতে দেখা যায় বিজয় দিবসের ফ্যাশনে। যা বাঙালীর চির স্বাধীনচেতা বৈশিষ্ট্যেরই প্রতিচ্ছবি। ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসে যে নির্মমতা দেখিয়ে ছিল পাকহানাদার বাহিনী সেই নির্মমতার গহনে যেমন লিপিবদ্ধ হয়েছে অজস্র এলিজিঃ। রচিত হয়েছে মন খারাপ করা এপিটাফ। পাশাপাশি নয় মাস যুদ্ধের মাধ্যমে বিজয় অর্জনের পর একইভাবে রচিত হয়েছে অসংখ্য অজস্র বিজয় গাথাও। আর এই বিজয় গাথার মুকুটে আরও একটি স্বর্ণোজ্জ্বল পারক গুঁজে দিয়েছে বাংলার চিরায়ত সংস্কৃতির মন্ত্রে সিক্ত ফ্যাশন ধারা। বাঙালী এখন উৎসব প্রিয় এক জাতি। বিজয় দিবসও তেমনি এক উৎসব। এ উৎসবের প্রভাব ফ্যাশন হাউসগুলোতে বেশ ভালোভাবেই লক্ষ্যণীয়। লাল সবুজকে প্রাধান্যদিয়ে পোশাক তৈরির প্রস্তুতি বেশ আগে থেকেই নিয়ে থাকে ফ্যাশন হাউসগুলো। এবারের বিজয় দিবসের উৎসব ভিন্ন এক মাত্রায় উপস্থিত হয়েছে ফ্যাশন প্রিয় বাঙালীর জীবনে। এরই মধ্যে বিজয় দিবসের ড্রেস কালেকশনের লক্ষ্যে তরুণ-তরুণীসহ সবার মধ্যেই বিপুল আগ্রহের ছাপ পরিলক্ষিত হচ্ছে এবং বুটিক শপগুলোতে চলছে কেনাকাটার ধুম। তরুণ-তরুণীদের মধ্যে টিশার্ট এবং ফতুয়ার চাহিদা বেশি হলেও পাঞ্জাবি, থ্রিপিস, শাড়ি, উত্তরীয় শোপিস, রুমালের চাহিদাও কম নয়। তবে প্রতিটা ড্রেসেই থাকছে ভিন্ন ভিন্ন ডিজাইনে লাল-সবুজের ছোঁয়া। প্রতিষ্ঠিত ফ্যাশন হাউসগুলো বিজয় দিবসের ড্রেসে আউটলেটগুলো ইতোমধ্যে সাজিয়ে তুলেছে। ড্রেসের সঙ্গে থাকছে নানা রকম শোপিসও। বাঙালী জাতির জীবনে ২৬ মার্চ একটি অমোঘ দিন। যে দিনটিকে ঘিরে সমগ্র বাঙালীর জাতি হয়ে ওঠে আবেগাপ্লুত। আবেগের এই স্পন্দিত আবহটা এবারের ১৬ ডিসেম্বরেও থাকবে বর্ণোজ্জ্বল গুঞ্জনে মুখর। কৃতজ্ঞতা : ফড়িং
×