ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রেজা ফারুক

শীতে উষ্ণতার খোঁজে

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ৪ ডিসেম্বর ২০১৫

শীতে উষ্ণতার খোঁজে

প্রকৃতিতে পাতাঝরার দিন আসন্ন। হেমন্তের বিদায়ের প্রহরে শীতের গুছিয়ে বসার তুমুল তোড়জোড়ের প্রভাব ইতোমধ্যে পড়তে শুরু করেছে নিসর্গের ওপর। আর এ নৈসর্গিক রূপবদলের ছাপ দৈনন্দিন জীবনের পুরো চালচিত্রকে পাল্টে দেয়ার জন্যও নিচ্ছে বিপুল প্রস্তুতি। আবহমান বাংলার চিরায়ত ষড়ঋতু ম-িত বৈচিত্র্যময় প্রকৃতির যে মায়াবী আবেশ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রকে নানাভাবে স্পর্শ করে যায়- সেই প্রাকৃতিক আবহের হাত ধরেই প্রতিদিনকার কাজকর্ম, চলাফেরায় আসে বাহুমাত্রিক ছন্দ। যদিও জীবনের এই ছন্দের গহনে রয়েছে এক অনন্তকালীন ধারাবাহিকতা। তারপরেও সেই ধারাবাহিকতাকে ছাপিয়ে জীবনের প্রতিটি স্পন্দনে বেজে ওঠে নতুন সুরের মূর্ছনা। হেমন্ত-শীতের আঁজলায় ফিকে রোদের ঝালর ফোটা বিকেলটাকে তুলে দেয়। তখনই শীতের কিশোর তার কুয়াশাডোবা ভাঁজ করা রুমালের ভাঁজ খুলে বিছিয়ে দেয় গ্রাম বাংলার ধু ধু মাঠ-আর নগর জীবনের ব্যস্ততম সময়ের রোজকার এক চিলতে অবসর জাগা ক্ষণে। চারদিকে শুরু হয় শীতকে বরণ করে নেয়ার এক মহান উৎসব। একদিকে ভাপা পুলিনকশি, চিতই, বিবি সাহেবসহ অভিজাত নানা পদের ফিটা এবং সুগন্ধি চালের পায়েস আর ক্ষীর। অন্যদিকে বদলে যায় জীবনের ধরন। পাল্টে যায় প্রতিটা মানুষের পোশাক-আশাক, রূপচর্চা, সাজসজ্জাসহ প্রয়োজনীয় সকল কিছু। কেননা শীতের হিমেল হাওয়া আর কনকনে অনুভূতি শহর, বন্দর, গ্রাম, গঞ্জ, বিল, ঝিল সর্বত্র ভিন্ন এক গভীর শীতার্ত উপলব্ধি চড়িয়ে দেয় স্বাভাবিক নিয়মে। খাওয়া, দাওয়া থেকে শুরু করে শিশুদের জন্য বাড়তি তদারকিও বেড়ে যায় মায়েদের তরফ থেকে। একই সঙ্গে বয়সী মানুষও একটু সতর্ক হয়ে যায়। বিশেষ করে সবার মধ্যেই শুরু হয় উষ্ণ তার খোঁজ। শীত এমন এক ঋতু যে ঋতুর ভেতর একরত্তি উষ্ণতা যেন এক মহাসম্পদ আর দামী বস্তু হয়ে ওঠে। ফলে, শীতের পোশাকের জন্য শুরু হয় আকুলি বিকুলি, কাজুয়ালি ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত পোশাকের জায়গায় স্থান করে নেয় শীতের পোশাক। হাফশার্ট, সিল্ক, সিøভলেস ড্রেসের জায়গায় চলে আসে। কোট, ব্লেজার, স্যূট, পুলওভার, জাম্পার, জ্যাকেট, মাফলার, কানটুপি, ফারকোট, শাল, চাদর, ফুলসিøভ শার্ট, টি-শার্ট, ফতুয়া, থ্রিপিস কার্ডিগান, কম্ফর্টার গলাবন্ধ, সুতির এক্সক্লুসিভ শাড়ি, গর্জিয়াস শাড়ি, তাঁতের শাড়িসহ নানা ডিজাইনের শীতের পোশাক। পাশাপাশি ধুলোধূসর বৃষ্টিহীন শীতকালজুড়ে পোশাকের রঙেও আসে বিবর্তণ। গাঢ় রঙটাই সাধারণত শীতে বেশ ফেভার করে সবাইকে। এদিকটা বিবেচায় নিয়ে ফ্যাশন ট্রেডেও চলে শীতের পোশাক তৈরির প্রস্তুতি। সব বয়সী মানুষের জন্যই আউটলেটের কালেকশনে আসে শীত উপযোগী নানা ধরনের পোশাক। নগরজীবনে শীত অনেকটা ঘরোয়া ঋতু হিসেবে চিত্রিত হলেও গ্রাম বাংলায় এর প্রভাবটা বিশেষভাবে অনুভূত হয়। গ্রামের মানুষের শীতের পোশাক সংগ্রহের বেলায়ও থাকে একটা দৈন্য। একটা কানটুপি, মাফলার কিংবা একটা সাধারণ চাদর যেমন অনেকের থাকে না। থাকে না শীত নিবারণেরও জন্য লেপ-তোষক, কম্বল তো দূরে থাক কখনও সখনও একটা ভাল কাঁথাও। এই হলো গ্রামীণ জীবনের স্পষ্ট ধারার চিত্র। এই চিত্রটাকে বদলে দিতে সবাইকেই এগিয়ে আসতে হবে। শীতের আনন্দ যেমন আছে তেমনি আছে কষ্টও। এই আনন্দ আর কষ্টের আপ টেনে করে এসেই যেন বাংলার শুষ্ক নদী, খাল, বিল, জলাশয়, ধূসর মাঠে মাঠে হলদে সর্ষের ক্ষেত্রে ধবল বকের মতো নামবে শীত। মডেল : ফিটন খান ও সিনহা পোশাক : খানদানি ছবি : কেবি সোহাগ
×