ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

৭১ আসনে একাধিক প্রার্থী বিজয়ী হওয়ার পথে এরাই বড় বাধা

বিদ্রোহী প্রার্থী দমনে গোপন মিশনে মাঠে আওয়ামী লীগ

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ৫ ডিসেম্বর ২০১৫

বিদ্রোহী প্রার্থী দমনে গোপন মিশনে মাঠে আওয়ামী লীগ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী দমনে গোপন মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছে আওয়ামী লীগ। এ লক্ষ্যে দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে কেন্দ্রীয় নেতারা ইতোমধ্যে তৃণমূলে যেতে শুরু করেছেন। কেন্দ্র থেকে সর্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে বিদ্রোহী প্রার্থীদের সঙ্গে। প্রথমে কেন্দ্রীয় নেতারা বুঝিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থীদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেবেন। এতে কাজ না হলে সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বিদ্রোহী প্রার্থীদের আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হবে। বহিষ্কৃতদের ভবিষ্যতে আর দলে ফিরিয়ে নেয়া হবে না, এমন কঠোর অবস্থানের কথাও জানিয়ে দেয়া হচ্ছে বিদ্রোহী প্রার্থীদের। জানা গেছে, আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় ২৩৫ পৌরসভা নির্বাচনে ৭১টিতে আওয়ামী লীগের একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে। সার্বিক প্রস্তুতি থাকলেও নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার ক্ষেত্রে বিদ্রোহী প্রার্থীরাই এখন বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। এ বাধা দূর করতে ৯ দিনের বিশেষ মিশন নিয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা মাঠে নেমেছেন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও চান প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠেয় পৌর নির্বাচনে একক প্রার্থীই মাঠে থাকুক। তাই দলীয় সভানেত্রীর নির্দেশে কেন্দ্রীয় নেতারা ছুটছেন তৃণমূলে। বিদ্রোহী প্রার্থী থাকা পৌরসভাগুলোতে গিয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা প্রথমে সমঝোতার চেষ্টা করবেন। শেষ পর্যন্ত কোন বিদ্রোহী প্রার্থী তাদের মনোনয়ন প্রত্যাহার না করলে ঢাকায় এসেই তাদের দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ পৌর নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে না নিলে তাদের বহিষ্কার করা হবে বলে চরম হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। শুক্রবার সাংবাদিকদের এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে যদি কেউ ১৩ তারিখের মধ্যে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করেন, তাহলে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে আওয়ামী লীগের কোন প্রার্থী নির্বাচন করতে পারবে না। সূত্রমতে, বিদ্রোহী প্রার্থীদের বুঝিয়ে কিভাবে বসিয়ে দেয়া যায় সে ব্যাপারে করণীয় ঠিক করতে শুক্রবার ধানম-িতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সম্পাদকম-লীর সদস্যরা জরুরী বৈঠকে বসেন। বৈঠকে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও সড়ক পরিবহন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, ডাঃ দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানকসহ কেন্দ্রীয় বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন। জানা গেছে, বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, সংসদ সদস্য নন এমন কেন্দ্রীয় নেতাদের তৃণমূলে থাকতে হবে। একই সঙ্গে বৈঠকে বিদ্রোহী প্রার্থী ঠেকাতে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে সাত বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সাত সাংগঠনিক সম্পাদককে নির্দেশ দেয়া হয়। তবে পাঁচ সাংগঠনিক সম্পাদক সংসদ সদস্য হওয়ায় নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী আইনি বাধ্যবাদকতা থাকায় সে বিষয়টি মাথায় রেখে কাজ করতে বলা হয়েছে। আর বাকি দুই সাংগঠনিক সম্পাদককে শুক্রবারই স্ব স্ব বিভাগে গিয়ে কাজ শুরু করতে বলা হয়েছে। এই নির্বাচনকে সরকারের জনপ্রিয়তার মাপকাঠি হিসেবে ধরে সব পৌরসভাতে একক প্রার্থী নিশ্চিত করতে নানা কৌশল প্রয়োগেরও সিদ্ধান্ত হয় বলে জানা গেছে। বৈঠকের বিষয়ে সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আগামী ৯ দিনের মধ্যে যেসব জেলায় পৌরসভা নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী আছে, সেখানে সংশ্লিষ্ট জেলা নেতাদের সঙ্গে এবং বিদ্রোহী প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলব। বিদ্রোহীদের বসিয়ে দেয়াই আমাদের এখন অন্যতম কাজ। জানা গেছে, ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় হাইকমান্ডের নির্দেশে বিদ্রোহী প্রার্থী ঠেকাতে ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন ফরিদপুরে এবং সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ সিলেটে গিয়ে কাজ শুরু করেছেন। বিদ্রোহী প্রার্থী দমন ছাড়াও দলীয় মেয়র প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে সরকারের উন্নয়ন কর্মকা- জনগণের সামনে তুলে ধরার নির্দেশনা দেয়া হয়। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের আত্মীয়স্বজনরা একক প্রার্থীর তালিকা থেকে বাদ পড়ায় তারা এখন বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এসব বিদ্রোহী প্রার্থী অনেকটা অনড় অবস্থানে রয়েছেন। ২৩৫ পৌরসভার প্রতিটিতে গড়ে ৭ জন করে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যার্শী ছিলেন। এক্ষেত্রে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের কাছ থেকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের জন্য আগাম কোন চিঠি না নেয়ায় অনেকটা বিপাকে পড়েছে দলটি। তাই দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে কেন্দ্রীয় নেতারা তৃণমূলে গিয়ে বুঝিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থীদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের উদ্যোগ নিয়েছেন। সূত্র জানায়, পৌরসভা নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেছে আওয়ামী লীগ। সে কারণে সারাদেশের এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে দলটি। গত দুই দিন পৌর মেয়র পদে বিদ্রোহী প্রার্থীদের তালিকা প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা হাতে তুলে দিয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা। সে সময় উপস্থিত থাকা একাধিক নেতা জানান, এ তালিকা দেখে প্রধানমন্ত্রী ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, তৃণমূলের মতামত এবং বিভিন্ন রিপোর্টের ভিত্তিতে দলের ত্যাগী ও জনপ্রিয় নেতাদের মেয়র পদে একক প্রার্থী করে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। অনেকে না বুঝে হয়ত বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। তাই বুঝিয়ে তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ব্যবস্থা করতে হবে। আমি মাঠে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী দেখতে চাই। এদিকে শুক্রবার ধানম-িতে সম্পাদকম-লীর বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ সাংবাদিকদের জানান, ২৩৫টি পৌরসভার মধ্যে ৭১টিতে দলের বিকল্প প্রার্থী রয়েছে। ১৩ ডিসেম্বরের মধ্যে একটি পৌরসভায়ও কোন বিদ্রোহী প্রার্থী থাকবে না। তিনি বলেন, তৃণমূল পর্যায় থেকে যে গাইডলাইন দিয়েছিলাম তাদের (তৃণমূল) সুপারিশ এবং আমাদের মাঠ জরিপের তথ্য নিয়ে প্রার্থিতা দেয়া হয়েছে। এ সময় তিনি মনোনয়নবঞ্চিত কিছু প্রার্থীর কথায় কান না দিতে সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানান। আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত দু’জন প্রভাবশালী নেতা ১৩ ডিসেম্বরের পর দেশের কোন পৌরসভাতেই দলের বিদ্রোহী প্রার্থী থাকবে না এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আওয়ামী লীগ একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল। দলের মনোনয়ন চাওয়া এবং পাওয়ার মতো অনেক যোগ্য নেতা আছেন। কিন্তু আমাদের বেছে নিতে হয় একজনকে। তাই মান অভিমান থাকতেই পারে। দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ায় রাগ অভিমান ভুলে বিদ্রোহী প্রার্থীরা আগামী ১৩ তারিখের মধ্যেই তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেবেন এমনটাই প্রত্যাশা। তিনি বলেন, এ নির্বাচনে তৃণমূল আওয়ামী লীগ যে আরও বেশি ঐক্যবদ্ধ তা প্রমাণ করতে চাই।
×