ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপির প্রবাসী নেতারা আছেন সঙ্গে

জামায়াত ও যুদ্ধাপরাধী গোষ্ঠী লন্ডনে বসে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ৫ ডিসেম্বর ২০১৫

জামায়াত ও যুদ্ধাপরাধী গোষ্ঠী লন্ডনে বসে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত

শংকর কুমার দে ॥ লন্ডনে বসে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত জামায়াত ও যুদ্ধাপরাধী গোষ্ঠী। তাদের সঙ্গে আছেন বিএনপির প্রবাসী নেতারা। তারা উৎখাত করতে চান শেখ হাসিনা ও তার সরকারকে। লন্ডনে বসে ছক কষছেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক। তার সঙ্গে আছেন গোলাম আযমের ছেলে আমান আযমী, মতিউর রহমান নিজামীর মেয়ের জামাই ব্রিটিশ নাগরিক ব্যারিস্টার নজরুল ইসলাম, যুদ্ধাপরাধীর সাজাপ্রাপ্ত মইনুদ্দিন চৌধুরীসহ জামায়াত নেতৃবৃন্দ। পাকিস্তান রাষ্ট্রীয়ভাবে দুই যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির রায় কার্যকরের পর যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে প্রকাশ্যে পক্ষাবলম্বন করে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার ঘটনাটিও লন্ডনে বসে ষড়যন্ত্রেরই ফসল বলে মনে করছে গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে এই ধরনের তথ্য পাওয়া গেছে। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসির দ-াদেশপ্রাপ্ত দলের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃত্যুদ-াদেশ রায় কার্যকর করা ঠেকাতে নাশকতায় তৎপর হয়ে উঠেছিল প্রবাসে অবস্থানকারী জামায়াত-বিএনপির নেতৃবৃন্দ। তাদের চলমান এই তৎপরতায় অত্যন্ত নীরবে ও গোপনীয়তা রক্ষা করে নতুন করে যুক্ত হয়েছে পশ্চিমা বিশ্বের প্রভাবশালী একটি বৃহৎ দেশ। সরকারের উচ্চ পর্যায়ে জমা দেয়া গোয়েন্দা সংস্থার একটি প্রতিবেদনে এই ধরনের অভিযোগের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দুই যুদ্ধাপরাধী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- কার্যকর করার আগে পশ্চিমা বিশ্বের প্রভাবশালী বৃহৎ দেশের ঢাকার দূতাবাস ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন জামায়াত-বিএনপির একাধিক নেতৃবৃন্দ। দেশের বাইরে বিদেশে থেকে যুদ্ধাপরাধীর রায়ের বিরুদ্ধে নিজের সর্বোচ্চ শক্তি কাজে লাগাচ্ছেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক। আমেরিকা-ইউরোপের বিভিন্ন ফোরামে, মানবাধিকার সংগঠনে বিশেষ করে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছে তারা। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টির অপতৎপরতায় যুক্ত দেশটির বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ফাঁসি কাঠে ঝুলে মৃত্যু হওয়া দলটির সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লা ও কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় কার্যকরের সময়ও বিদেশী তৎপরতা দেখা গেছে। একই ধরনের তৎপরতা দেখা গেছে আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রায় কার্যকরের সময়ও। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে লন্ডনে বসে ষড়যন্ত্রকারীদের ধরনের প্রচেষ্টাকে হুমকি উল্লেখ করে বলা হয়েছে। এ ধরনের চেষ্টা বন্ধ না করা গেলে বাংলাদেশ সরকারের বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে অত্যন্ত স্পর্শকাতর হওয়ায় জামায়াত-শিবিরকে সহায়তাকারী পশ্চিমা বিশ্বের প্রভাবশালী দেশটির নাম উল্লেখ না করে বলা হয়, পশ্চিমা বিশ্বের প্রভাবশালী একটি রাষ্ট্র অত্যন্ত গোপনে জামায়াতকে রায় কার্যকর মোকাবেলায় পরামর্শ ও সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। এতে ওই রাষ্ট্র ও জামায়াত উভয় দিক থেকে লাভবান হবে। গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, বিগত দুই বছরে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত দ-প্রাপ্ত শীর্ষ নেতাদের রক্ষায় প্রথম দিকে নাশকতামূলক আন্দোলন ও কর্মসূচী দিলেও দুই যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি রায় কার্যকরের ঘটনায় কর্মসূচী দিলেও এবার অনেকটাই চুপচাপ। নেই প্রকাশ্যে বিক্ষোভ-মিছিল। শুধু বিবৃতি কিংবা লোক দেখানো হরতালের ঘোষণা দিয়েই সব সমাপ্তি। গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, দেশের ভেতরে জামায়াত চুপ মেরে আছে, এর মানে এই নয় যে তারা নীরব। আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী বিএনপি-জামায়াতের সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতা, বিদেশেও তাদের পক্ষে কাজ হচ্ছে। জেলে থেকেও তারা দল ও বিদেশী রাষ্ট্র এবং ব্যক্তিদের প্রভাবিত করেছেন। বিদেশে জামায়াতের সঙ্গে পশ্চিমা দেশটির কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকগুলোতে যুদ্ধাপরাধীর রায় নিয়ে তৎপরতা ও বাংলাদেশের সঙ্গে ওই রাষ্ট্রের সম্পর্কসহ বিভিন্ন বিষয় আলোচনা করা হয়। পশ্চিমা বিশ্বের বৃহৎ দেশটি শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসলেই বাংলাদেশের রাজনীতি, অর্থনীতিসহ নানা ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে এসেছে। যদিও এই সময়টিতে তারা আশাব্যঞ্জক সাফল্য অর্জন করতে পারেনি প্রতিবেশী একটি দেশের শক্তিশালী ভূমিকার কারণে। এ কারণে যে কোন মূল্যে রাজনৈতিক ইস্যুকে কাজে লাগাতে চায় ওই দেশটি। যদিও অত্যন্ত স্পর্শকাতর ইস্যুতে নীরবতাকেই কৌশল মানছে সরকার। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির রায় ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েই দুই বিদেশী খুন, দুই পুলিশ খুন, হোসেনী দালানে গ্রেনেড হামলা, শিয়া মসজিদে হতাহতের ঘটনা, প্রগতিশীল লেখক, প্রকাশক, ব্লগার খুনের ঘটনাগুলো ঘটানো হয়েছে। বিএনপি-জামায়াতের মদতে জঙ্গী গোষ্ঠীগুলোকে সম্পৃক্ত করে এই ধরনের ঘটনাগুলো ঘটাতে বিদেশী শক্তির ইঙ্গিত থাকার কথা বলা হয়েছে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে। এমনকি পার্শ্ববর্তী ভারতের একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনেও একই ধরনের মন্তব্য করা হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আইএসের সম্পর্ক আছে বলেও যে মন্তব্য করা হয়েছে পার্শ¦বর্তী দেশের গোয়েন্দা প্রতিবেদনে। গোয়েন্দা প্রতিবেদনের উল্লেখ করে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়ায়। গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, জামায়াত তার দলের যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির রায় ঠেকাতে ব্যর্থ হয়ে পশ্চিমা বিশ্বের বৃহৎ দেশের সহযোগিতায় এখন শেখ হাসিনা ও তার সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র করছে লন্ডনে বসে। শেখ হাসিনা দৃঢ় মনোভাবের কারণেই মানবতাবিরোধী অপরাধে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পর ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়েছে। এ জন্য শেখ হাসিনাই এখন ষড়যন্ত্রকারীদের প্রধান শত্রু ও তার সরকার উৎখাতের জন্য মরিয়া লন্ডন ষড়যন্ত্রকারীরা।
×