ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

কোমল অন্তিলের কঠিন বাসনা...

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ৫ ডিসেম্বর ২০১৫

কোমল অন্তিলের কঠিন বাসনা...

রুমেল খান ॥ ভারতের বিশ্বখ্যাত ক্রিকেট অলরাউন্ডার কপিল দেব নিখাঞ্জের জন্ম হয়েছিল হরিয়ানায়। ঝড়ো উইরোবাজির কারণে তাকে খেতাব দেয়া হয়েছিল ‘হরিয়ানা হারিকেন’। এই হরিয়ানাতেই আবির্ভাব ঘটেছে এক নারী ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়ের, যে শুধু হরিয়ানাতেই নয়, স্বীয় নৈপুণ্যে প্রজ্বলিত হয়ে খ্যাতিমান হতে চায় বিশ্বজুড়ে। ‘কোমল’ মানে নরম। ১৯ বছর বয়সী (জন্ম ২২ জুলাই, ১৯৯৬) ও মায়াকাড়া চেহারার অধিকারী ভারতীয় শাটলার কোমল অন্তিলকে প্রথম দর্শনেই মনে হলো তার নামের সঙ্গে চেহারাতেও আছে অনেক সাদৃশ্য। ঢাকায় এখন চলছে ‘ইউনেক্স-সানরাইজ বাংলাদেশ ওপেন ইন্টারন্যাশনাল ব্যাডমিন্টন চ্যালেঞ্জ কাপ।’ এখানে অংশ নিচ্ছে কোমল। জনকণ্ঠের সঙ্গে একান্ত আলাপনে সে জানায়, ‘এই টুর্নামেন্টে আমার লক্ষ্য হচ্ছে দ্বৈতের শিরোপা জেতা। আমার পার্টনার হচ্ছে ললিতা দাহিয়া। মালয়েশিয়া এবং চীনের প্রতিযোগীদের অনেক কঠিন প্রতিপক্ষ বলে মনে হচ্ছে। তবে আমাদের আত্মবিশ্বাসের কোন কমতি নেই জয়ের ব্যাপারে।’ এটা কোমলের ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট। প্রথমটি খেলেছিল এ বছরেই বাহরাইনে। টুর্নামেন্টের নাম ছিল বাহরাইন ইন্টারন্যাশনাল চ্যালেঞ্জ। ২০০৭ সালে সে যখন সপ্তম শ্রেণীতে পড়ে তখন থেকে ব্যাডমিন্টন খেলা শুরু করে কোমল। কিভাবে এই খেলায় এলো কোমল? ‘আমার মা-বাবাও ছিলেন শাটলার। তাদের আগ্রহই সঞ্চারিত হয় আমার মধ্যে। ফলে বেছে নিই এ খেলাটি। বাবা জিতেন্দর ছিলেন আন্তর্জাতিক শাটলার। মা মীনাও তাই। এছাড়া আমার ফুফুও শাটলার ছিলেন।’ আদর্শ শাটলার কে? ‘আমার স্বদেশী সাইনা নেওয়ালÑ ও দারুণ খেলোয়াড়। তবে স্পেনের ক্যারোলিনা ম্যারিনই আমার আদর্শ খেলোয়াড়।’ কোমলের জবাব। নিজের প্রথম শিরোপা জেতার গল্পটাও শোনায় কোমল, ‘ক্যারিয়ারে আমার প্রথম শিরোপা জাতীয় পর্যায়ে অনুর্ধ-১৩ টুর্নামেন্টে। সেটা ২০০৭ সালে। ওই শিরোপাটি জিততে আমাকে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করতে হয়েছিল। এক্ষেত্রে বাবা আমাকে প্রচুর সাহায্য করেছিলেন। ওই সাফল্য পাবার পর এবং আমার চেয়েও আরও অনেক বেশি মানসম্পন্ন শাটলারকে খেলতে দেখে ব্যাডমিন্টন ক্যারিয়ার গড়াতে অনুপ্রাণিত হই।’ বাংলাদেশে এই প্রথম এসেছে কোমল। খেলার কারণে এখনও বাইরে কোথাও ঘুরতে যেতে পারেনি। তবে টুর্নামেন্ট শেষ হলে সেই ইচ্ছে পূরণ করার চেষ্টা করবে বলে জানায় সে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে কোমল বলে, ‘বাংলাদেশে আসার আগে আমার আরব আমিরাত ও বাহরাইনে খেলার অভিজ্ঞতা আছে। এখানে এসেছি যেন বেশি ম্যাচ খেলতে পারি এবং সাফল্য কুড়াতে পারি।’ কোন ক্লাব নয়, হরিয়ানার মাউন্টেন বাইন্টেন ব্যাডমিন্টন একাডেমির হয়ে খেলে থাকে কোমল। এককে ২টি শিরোপা জিতেছে এ পর্যন্ত। ‘তবে আমার লক্ষ্য দ্বৈতে বেশি সফল হওয়া।’ কোমলের ভাষ্য। ভারতে কোমলের র‌্যাঙ্কিং দ্বৈতে ১৬, এককে ২৭ নম্বর। ব্যাডমিন্টনে সাবেক ভারত চ্যাম্পিয়ন প্রকাশ পাডুকোনের (অভিনেত্রী দিপীকা পাডুকোনের বাবা) কোচিংয়ে একমাস খেলার অভিজ্ঞতাও আছে কোমলের। ভবিষ্যত লক্ষ্য? ‘আমার লক্ষ্য হচ্ছে ভারতের হয়ে দ্বৈতে অনেক আন্তর্জাতিক সাফল্য পাওয়া, যেন আমাকে দেখে ভারতের অন্য মেয়েরাও এ খেলাটিতে আসে।’ কমপক্ষে ৩৫ বছর বয়স পর্যন্ত ব্যাডমিন্টন খেলে যেতে চাওয়া কোমল গত তিন বছর ধরে এ্যাঙ্কেল ইনজুরির সঙ্গে লড়াই করছে। এ প্রসঙ্গে তার বক্তব্য, ‘লেজার ট্রিটমেন্ট করাচ্ছি। শুরুতে ছয়মাস লেগেছে ইনজুরিমুক্ত হতে। এখনও সেটা পুরোপুরি সারেনি। তারপরও মনোবলকে সম্বল করে খেলা চালিয়ে যাচ্ছি।’ এখন দেখার বিষয় মনোবলকে সম্বল করে আগামীতে কতটা সফল হতে পারে ভারতীয় শাটলার কন্যা কোমল অন্তিল।
×